images

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কূটনীতির পথে ভারত-পাকিস্তান

১৯ মে ২০২৫, ১২:১১ পিএম

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর থেকেই দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছিল। 

ভারত প্রথম থেকেই এ হামলার জন্য কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে এক তরফা দোষারোপ করে আসছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় ভারত গত ৬ মে দিবাগত .রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে। ভারতীয় এ আগ্রাসনের পাল্টা ও ভয়াবহ জবাব দেয় পাকিস্তান।

পাকিস্তান 'অপারেশন বুনিয়া-নুম মারসুস' নামে একটি বড় পরিসরের পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। ১০ মে ভোরে ভারতের ২৭টি সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে একযোগে হামলা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

একইসঙ্গে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সাইবার ইউনিট ওই অভিযানে ভারতের সরকারি ই-মেইল, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) অবকাঠামো, বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র, বিমানবন্দর, রেল যোগাযোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। 

যুদ্ধ একপর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধে মোড় নেওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পৌছায় দুই দেশ। বর্তমানে ময়দানের যুদ্ধ ছেড়ে কূটনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে এই দুই প্রতিবেশী।

ভারত ও পাকিস্তান এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের বার্তা নিয়ে দেশে দেশে ঘুরবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল। 

সাত দলে মোট ৫৯ জন সদস্য আছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই রাজনীতিবিদ। এ ছাড়া কয়েকজন কূটনীতিককেও দলে রেখেছে কেন্দ্র। তারা মোট ৩২টি দেশে ঘুরবেন। 

যাবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরেও। এই ৫৯ জনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দু’জন এমপিও রয়েছেন। কে কোন দলের সঙ্গে কোন দেশে যাবেন, সরকার তার তালিকা প্রকাশ করেছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলও বিভিন্ন দেশ সফর করে তাদের চালানো ‘অপারেশন বুনিয়া-নুম-মারসুস’ এর যৌক্তিকতা তুলে ধরবে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সোমবার (১৯ মে) ৪ দিনের সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন। 

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাত ও যুদ্ধবিরতির পটভূমিতে তার এ সফরকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 

সফরে তিনি চীনা নেতাদের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক শান্তি-স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন।

ইসহাক দারের এই সফরটি পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে চলমান উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বিনিময়ের অংশ এবং দুই দেশের ‘অবিচল ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-কে আরও জোরদার করার অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকি আগামী ২০ মে চীনে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। যে বৈঠকে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।   

অন্যদিকে, ভারতের সাতটি প্রতিনিধিদলের নেতাদের নাম শনিবারই ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই সাত দলের নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে কংগ্রেসের শশী তারুর,বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ, জেডিইউয়ের সঞ্জয়কুমার ঝা, বিজেপির বৈজয়ন্ত পাণ্ডা, তামিলনাড়ুর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির কন্যা ডিএমকে'র কানিমোঝি করুণানিধি, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে এবং মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের পুত্র শিবসেনার শ্রীকান্ত শিন্ডে। 

তাদের অধীনে প্রতিনিধিদলে পাঁচ থেকে ছ’জন করে সদস্য থাকছেন। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল এমপি ইউসুফ পাঠান এবং রাজ্যসভার বিজেপি এমপি শমীক ভট্টাচার্যকে এই দলে রাখা হয়েছে। 

ইউসুফ আছেন সঞ্জয়কুমারের দলে। শমীককে রাখা হয়েছে রবিশঙ্করের দলে। লোকসভার তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ডাকা হয়েছিল এই দলে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারছেন না।

আগামী ২৩ মে থেকে যাত্রা শুরু করবে কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলগুলি। কেন্দ্রের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী—প্রথম দল যাবে সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরিন এবং আলজেরিয়ায়। এখন দেখার বিষয়- বিশ্ববাসীকে বোঝাতে কূটনীতিতে কে কার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

-এমএমএস