মাহমুদুল হাসান তুহিন
১৭ মে ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম
পাকিস্তান ও চীনের সীমান্তে অবস্থিত খুনজেরাব পাস এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে রাখে তার নৈসর্গিক দৃশ্য, উচ্চতা এবং ভৌগোলিক তাৎপর্য দিয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৬৯৩ মিটার (১৫,৩৯৭ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই পাসটি করাকোরাম হাইওয়ের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু। এটি বিশ্বের অন্যতম উচ্চতম পেভড আন্তর্জাতিক সীমান্ত ক্রসিং হিসেবেও পরিচিত।
খুনজেরাব পাস পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান অঞ্চলের হুনজা ভ্যালি এবং চীনের জিনজিয়াং প্রদেশকে যুক্ত করেছে। এটি করাকোরাম রেঞ্জের একটি অংশ, যা হিমালয়, হিন্দুকুশ এবং তিয়ান শানের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পর্বতশ্রেণির জটিল কাঠামো।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে খুনজেরাব পাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এখান দিয়ে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক মালামাল পরিবহন হয় এবং এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
খুনজেরাব পাসে পৌঁছাতে হলে পেরিয়ে যেতে হবে পাকিস্তানের বিখ্যাত করাকোরাম হাইওয়ে, যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আন্তর্জাতিক সড়ক। পথে চোখে পড়ে তুষারে ঢাকা পাহাড়, হিমবাহ, উপত্যকা আর অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপ। পাসের আশেপাশে দেখা মেলে পাহাড়ি প্রাণী যেমন— চমরী গাই (ইয়াক), সাপশিঙি বনছাগল (মারখোর), তুষার চিতা (স্নো লেপার্ড) এবং খিনজারের (ইবেক্স)।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে সহনীয় হলেও, সারা বছরই এখানে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। শীতে তুষারপাতের কারণে সড়কটি বন্ধ হয়ে যায় এবং যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন থাকে।
খুনজেরাব পাসে যাওয়া মানে এক ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক এবং প্রাকৃতিক গৌরবের চূড়ায় পৌঁছানো। সেখানে রয়েছে ‘খুনজেরাব জাতীয় পার্ক’, যেখানে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং পর্যটনের ব্যবস্থা রয়েছে।
পাস এলাকায় রয়েছে একটি ‘খুনজেরাব গেট’ যা চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত চিহ্নিত করে। পর্যটকরা সেখানে ছবি তোলে, কিছু সময় কাটায়, এবং বিশ্বের উচ্চতম এটিএম বুথটি (ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান) দেখার সুযোগ পায়।
খুনজেরাব পাসে ভ্রমণ যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু টিপস মনে রাখতে হবে। সেগুলো হলো—
১. খুনজেরাব পাসে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় মে থেকে সেপ্টেম্বর।
২. উচ্চতাজনিত কারণে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট ও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।
৩. গরম কাপড়, সানগ্লাস এবং পর্যাপ্ত পানি সাথে রাখুন।
৪. স্থানীয় গাইড নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ, সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন কড়াকড়ি থাকে।
খুনজেরাব পাস কেবল একটি সীমান্ত নয় —এটি ইতিহাস, প্রকৃতি এবং মানবসংযোগের এক অসাধারণ প্রতীক। যারা প্রকৃতি ও অভিযাত্রায় আগ্রহী, তাদের জন্য খুনজেরাব পাস হতে পারে জীবনের এক স্মরণীয় গন্তব্য। এই পাথুরে, ঠাণ্ডা অথচ চমৎকার পথটি যেন প্রকৃতির এক নীরব শিল্পকর্ম।
এমএইচটি