images

আন্তর্জাতিক

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ইরানি কার্পেট!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সদ্য প্রয়াত প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ইরানের ঐতিহ্যবাহী কার্পেটের ব্যবহার দেখা গেছে। খ্রিস্টীয় প্রেক্ষাপটে ইসলামী বিশ্বের কার্পেটের দীর্ঘ ইতিহাস সম্পর্কে যারা অবগত নন তাদের কাছে এটা বিস্ময়কর মনে হতে পারে।

এই সপ্তাহে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় পোপ ফ্রান্সিসের সাধারণ কাঠের কফিন ঘিরে ছিল ফুলে ফুলে ভরা এক বিস্তীর্ণ কার্পেট। গাঢ় লাল, নীল ও কমলা রঙে বোনা জটিল নকশার এই গালিচাটি ইতালীয় শিল্প ঐতিহ্যের নয়। বরং পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত তিনটি কার্পেটের মধ্যে দ্বিতীয়টি উত্তর-পশ্চিম ইরান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্য আর্ট নিউজপেপার এই খবর জানিয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিসের ব্যক্তিগত চ্যাপেলে এবং এরপর সেন্ট পিটার্সে তাঁর কফিনের নীচে পারস্যের কার্পেট স্থাপন করা হয়। ২৬ এপ্রিল সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ক্যাথলিক চার্চ ছয়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত একটি ঐতিহ্য অনুসরণ করে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে।

পোপ ফ্রান্সিসের ব্যক্তিগত চ্যাপেল, পরে সেন্ট পিটার্স এবং সর্বশেষে ২৬ এপ্রিল সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাঁর কফিনের নিচে পারস্য গালিচা বিছিয়ে ক্যাথলিক চার্চ একটি ছয় শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য অনুসরণ করেছে। প্রশ্ন জাগতে পারে—ইতালীয় নয়, এমনকি খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যেরও নয় এমন গালিচার দৃষ্টিভাষা কীভাবে ক্যাথলিকদের সর্বাপেক্ষা পবিত্র আচার অনুষ্ঠানে ‘পবিত্র ভূমি’র প্রতীক হয়ে উঠল?

চতুর্দশ শতকের শেষভাগ থেকে আনাতোলিয়া (পরবর্তীকালে লেভান্ট, মিশর ও ইরান) থেকে আমদানিকৃত গালিচা ছিল সবচেয়ে মূল্যবান মেঝে ঢাকা সামগ্রী। এই মর্যাদার প্রমাণ পাওয়া যায় ধর্মীয় চিত্রকলায়, যেখানে এগুলি প্রায়ই কুমারী মেরি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টান চরিত্রের পায়ের নিচে দেখা যায়। এর একটি প্রাচীন উদাহরণ হলো The Marriage of the Virgin (কুমারী মেরির বিয়ে), যা প্রায় ১৩৮০ সালে সিয়েনার নিকোলো দি বোনাকোরসো এঁকেছিলেন। এতে মুখোমুখি পশু-চিত্রিত এক গালিচা মেরি ও যোসেফের বিবাহ অনুষ্ঠানের পবিত্র স্থানটি চিহ্নিত করে।

আন্দ্রেয়া দেল ভেরোক্কিও তাঁর ১৪৮৬ সালের Piazza Madonna-তে একইভাবে একটি আনাতোলিয়ান গালিচা ব্যবহার করেন। এতে ভার্জিন মেরি, যিশু, জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট ও বিশপ দোনাতো দে’ মেডিচিকে দেখানো হয়েছে। গালিচাটি একটি বিশেষ স্থান তৈরি করে, যেখানে মেরি ও শিশু যিশু অবস্থান করেন। জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট পুরো পা গালিচার প্রান্তে রাখেন, আর দোনাতো দে’ মেডিচি শুধু একটি আঙুলের ডগা গালিচায় রাখেন—যাতে তাদের অবস্থানগত দূরত্ব বোঝানো হয়।

১৬শ শতকে ইসলামি অঞ্চল থেকে গালিচা ইউরোপে ব্যাপক হারে আসতে শুরু করে—বাণিজ্যপণ্য, সরাসরি অর্ডার এবং কখনো কখনো কূটনৈতিক উপহার হিসেবেও। ওই সময়ে ওসমানীয় সাম্রাজ্য প্রধান গালিচা রপ্তানিকারক ছিল। পরে সাফাভিদ ইরান ও মুঘল ভারতও বাজারে প্রবেশ করে। গালিচাকে কূটনৈতিক উপহার হিসেবে ব্যবহার এখনও চালু আছে। ২০১৬ সালে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করতে ভ্যাটিকানে গেলে কোমে তৈরি একটি ছোট গালিচা তাঁকে উপহার দেন।

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত তিনটি গালিচা ঐতিহাসিক চিত্রকর্মের গালিচার মতোই কাজ করেছে। এগুলো পবিত্র স্থান নির্দেশ করে—একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে বিশ্রামরত পোপকে ঘিরে রাখে, যা তাঁকে দর্শনার্থী ও সেবকদের থেকে পৃথক করে। ব্যক্তিগত চ্যাপেলের মতো ঘনিষ্ঠ পরিবেশে, দুইজন সুইস গার্ড কফিনের পাশে গালিচার প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন—ভেরোক্কিওর পিয়াজা মেডোনার জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের অঙ্গভঙ্গিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সেন্ট পিটার্স-এ প্রকাশ্য প্রদর্শনীর সময়, বড় গালিচার সীমারেখা ও তাতে ঘেরা পবিত্র স্থানটি বার রেলিং দিয়ে আরও স্পষ্ট করা হয়।

আরও একটি পারস্য গালিচা পোপ ফ্রান্সিসের কফিনের নিচে বিছানো হয় তাঁর সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়। এটি একটি ঐতিহ্য কার্পেট, আবারও উত্তর-পশ্চিম ইরান থেকে, এবং মনে হয় এটি আগের দুই পোপ—জন পল দ্বিতীয় (২০০৫) ও পোপ এমেরিটাস বেনেডিক্ট অষ্টদশ (২০২৩)-এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও ব্যবহৃত হয়েছিল।

২০২৪ সালের শেষভাগে পোপ ফ্রান্সিস যেসব পরিবর্তন এনেছিলেন, তাতে আগের পোপদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ব্যবহৃত জাঁকজমক—যেমন সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় উঁচু বিয়ার ও তিন স্তরের (সাইপ্রেস, সিসা ও ওক কাঠের) কফিন—এ সব কিছু পরিহার করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে গালিচার ব্যবহার বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সাধারণ কাঠের কফিনে গালিচার ওপরে পোপ ফ্রান্সিসের অবস্থানের ফলে ‘পবিত্র ভূমি’র চিত্রটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।