images

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে কেন শান্তিবাহিনী পাঠাতে চায় ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ মার্চ ২০২৫, ১০:১৩ এএম

images

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ ইউক্রেনে প্রয়োজন পড়লে ইউক্রেনে শান্তিবাহিনী পাঠাতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার ইউরোপ ও ন্যাটোর সদস্য প্রায় ৩০টি দেশের নেতারা প্যারিসে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশ শান্তিবাহিনী পাঠাবে।

শান্তিবাহিনীর বিষয়টি এখনো স্পষ্ট না হলেও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ ও ফরাসি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞর শীঘ্রই ইউক্রেনে গিয়ে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন বলে মাক্রোঁ জানিয়েছেন।

তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেছেন, ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এই ভরসা বা আস্থা-বাহিনীতে অংশ নিতে চায়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির মতো নেতারা।

তবে মাক্রোঁ স্বীকার করেছেন, ‘ইউক্রেনে শান্তি বাহিনী পাঠানো নিয়ে দেশগুলার মধ্যে মতৈক্য হয়নি। সব ইউরোপীয় দেশ বাহিনীতে সেনা পাঠাবে না। কিছু দেশের সেই সাধ্য নেই, অন্যরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অংশ নিতে চায় না।’

কারা থাকতে পারে?

এখনো পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো শান্তিবাহিনী পাঠাতে উৎসাহী। জার্মানি এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলর হতে পারেন রক্ষণশীল নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

স্পেন, ইতালির মতো দেশগুলো শান্তিবাহিনী নিয়ে খুব একটা উৎসাহী নয়।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই শান্তি বাহিনীতে অংশ নেবে না। কিছু দেশ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র অংশ না নিলে বা জাতিসংঘের অধীনে এই বাহিনী না পাঠালে এই মিশন সফল হবে না। কিন্তু জাতিসংঘে রাশিয়া এই সিদ্ধান্ত নিতে দেবে না।

কেন ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য শান্তি বাহিনী চায়?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি ফেরানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। মার্কিন ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু ইউরোপের নেতারা বলছেন, যদি রাশিয়ার শর্ত মেনে চুক্তি হয়, তাহলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। এরপর তিনি ইউক্রেন বা ইউরোপের অন্য দেশে আক্রমণ চালাতে পারেন।

এই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া একমত হয়েছে। এটা দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির প্রথম ধাপ। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে।  কিন্তু এই শর্তের কথা মার্কিন ঘোষণায় ছিল না। ইউরোপীয় দেশগুলো এই শর্ত খারিজ করে দিয়ে বলেছে, যতদিন রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালাবে, ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ইউক্রেনে শান্তিবাহিনী পাঠাতে চায় ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো ইউরোপের দেশগুলো।

শান্তি বাহিনী কোথায় থাকবে?

বৃহস্পতিবার মাক্রোঁ বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে এই বাহিনী মোতায়েন করা হবে না। এই বাহিনী সক্রিয় শান্তিরক্ষীর ভূমিকা নেবে। তারা ইউক্রেনের সেনার বিকল্প হবে না।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লন্ডনে এই সপ্তাহে ৩০ দেশের দুইশ জন সামরিক বিশেষজ্ঞ বৈঠক করেছেন। তারা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

কতজন সেনাকে মোতায়েন করা হবে তা এখনো জানানো হয়নি। তবে ইউরোপীয় কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস-এর গবেষক রাফায়েল লস বলেছেন, ‘১৫ থেকে ২০ হাজার সেনা মোতায়েন হতে পারে। তবে তার আগে এই বিষয়ে বিস্তারিত চুক্তি করতে হবে।”

লস ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘পুরোটাই করা হচ্ছে, রাশিয়াকে ঝুঁকির মুখে রাখার জন্য, যাতে ইউক্রেন আক্রমণ করার আগে রাশিয়াকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়। ইউরোপের দেশগুলো মনে করছে, ইউক্রেন ঝুঁকিতে থাকা মানে তারাও ঝুঁকিতে থাকবে। এরপর বিরোধ আর শুধু ইউক্রেনের জমিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন অবশ্য একাধিকবার বলেছেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর সদস্য দেশের সেনার উপস্থিতি তিনি মানবেন না। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

এমআর