আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৭ পিএম
ফ্রান্সের ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল মায়োতেতে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী শতবর্ষী ঘূর্ণিঝড় চিডো। এর গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা (১৪০ মাইল/ঘণ্টা)। যা পুরো এলাকাকে পরিণত করেছে ধ্বংসস্তূপে। এ ঘটনায় নিহতের পরিমাণ এক হাজারের অধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকা দরিদ্র মানুষেরা। উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের সন্ধানে ধ্বংসাবশেষে তল্লাশি চালাচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন ভেঙে পড়ায় এবং সড়ক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে দ্বীপের প্রশাসক ফ্রাঁসোয়া জেভিয়ার বিউভিল জানান, পুরো ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন শেষে মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। মৃতের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই কয়েকশ হবে, হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
৩ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার মায়োতে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে খাবার, সুপেয় পানি এবং আশ্রয়ের সংকট দেখা দিয়েছে। ফ্রান্স থেকে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মায়োতের রাজধানী মামুদজুর এক বাসিন্দা ত্রাণ সরবরাহের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমাদের খাওয়ার পানি নেই। এভাবে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা শুধু বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম জিনিসপত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। জানি না কবে পানি সরবরাহ আবার শুরু হবে।’
জন বালোজ নামে এক বাসিন্দা জানান, এমন ঘূর্ণিঝড়ের পরও তিনি বেঁচে আছেন, এটা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে।
তিনি বলেন, ‘ঝড়ের তীব্র গর্জন আর তাণ্ডব। আমি আতঙ্কিত হয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে।’
রাজধানীর আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এটা একটা ট্র্যাজেডি। এটা যেন পারমাণবিক যুদ্ধের পরের অবস্থা। আমি পুরো একটি এলাকা ধ্বংস হতে দেখেছি।’
আরেকজন বলেন, আমরা কাছাকাছি একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা এখনো প্রতিবেশীদের সঙ্গে একত্রে রয়েছি এবং সবাই সতর্ক আছি। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে এগোতে হবে।
মায়োতে ঘূর্ণিঝড়ের হতাহতদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘মায়োতের প্রতি আমার গভীর সহানুভূতি, যারা ভয়াবহ কিছু ঘণ্টা পার করেছেন এবং অনেকেই সবকিছু হারিয়েছেন, এমনকি প্রাণও।’
চিডো চতুর্থ ক্যাটাগরির একটি ঘূর্ণিঝড়। প্রতি ১০০ বছরে একবার এমন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কারণে একে শতবর্ষী ঘূর্ণিঝড়ও বলা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার অভিযানে ২৫০ জন কর্মী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
মায়োতে পরিদর্শন করে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় তীব্র আঘাত হেনেছে দ্বীপটিতে। জনগণের সহায়তায় উদ্ধার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।’
মায়োতের জনগোষ্ঠী বেশ দরিদ্র। তাদের অধিকাংশ অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে এসেছেন। ফরাসি আর্থিক সহায়তার ওপর তারা নির্ভরশীল। তাদের থাকতে হয় অস্থায়ী আবাসনে।
দীর্ঘদিন ধরেই দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে লড়াই করা মায়োতের জনগণের প্রায় ৭৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এখানে প্রতি তিনজনের একজন বেকার।
এফএ