images

আন্তর্জাতিক

ভারতের ওপর কেন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে প্রতিবেশী দেশগুলো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম

ঠিক দশ বছর তিন মাস আগে, নরেন্দ্র মোদী যখন প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, তখন প্রতিবেশী সব দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানদের দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চমক সৃষ্টি করেন। সেই সময় মোদী সরকার বলেছিল, তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে প্রতিবেশীরা, যাকে পোশাকি নাম দেওয়া হয় 'নেইবারহুড ফার্স্ট' বা 'প্রতিবেশীরা সবার আগে'। তবে বাস্তবে, মোদী সরকারের এই নীতি প্রায়শই মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেছে, যার ফলে আজকের দিনে ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে অনেক প্রতিবেশী দেশ।

দশক পেরিয়ে দেখা যাচ্ছে, যে শ্রীলঙ্কাকে ভারত আর্থিক সংকটের সময় অনেক সাহায্য করেছে, সেই দেশটি চীনা গোয়েন্দা জাহাজকে তাদের বন্দরে ভিড়তে দিচ্ছে। নেপালে ভারত-বিরোধী মনোভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালদ্বীপেও ক্ষমতায় এসেছে ভারত-বিরোধী মোহামেদ মুইজ সরকার, যারা দেশ থেকে ভারতীয় সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে। এমনকি, ভুটানও চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে পা বাড়িয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা?
বিশ্লেষক ইরফান নূরউদ্দিন মনে করেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপনের পরিবর্তে স্বল্পকালীন স্বার্থের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ভারতের ‘হিন্দু আইডেন্টিটি’কে পররাষ্ট্রনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা যেমন বাংলাদেশের মতো মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও ভারতের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।

ড. এস ডি মুনি মনে করেন, 'নেইবারহুড ফার্স্ট' নীতির পেছনে গভীর চিন্তা ছিল না, বরং এটি ছিল একটি হঠাৎ সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে, যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনে।

সম্পর্কে মসৃণতা নেই, তবে বিকল্পও নেই
ড. সৌমেন রায় মনে করেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য তাদের অভ্যন্তরীণ ডায়নামিক্স দায়ী, তবে সম্পর্কগুলোতে ওঠাপড়া থাকবে। সঞ্জয় কে ভরদ্বাজের মতে, ভারতকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে, যদিও চীনের মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য না থাকায় ভারতের জন্য তা কঠিন।

ভারত একটি আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসেবে যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলার জন্য বহুমাত্রিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা অর্জন ও সম্মান দেওয়া ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে।

প্রতিবেশীদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কারণ কী? 
স্বল্পমেয়াদী নীতি এবং কৌশল: ভারতের পররাষ্ট্রনীতি অনেক সময় স্বল্পমেয়াদী স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত হয়েছে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেশীদের প্রতি অসচেতনতা: প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের অনুভূতির প্রতি সচেতন না হওয়া এবং তাদের অভিযোগগুলোকে ঠিকমতো মূল্যায়ন না করা ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বাড়িয়েছে। যেমন, বাংলাদেশে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতের প্রতি অসন্তোষ রয়েছে।

অতিরিক্ত গোয়েন্দা নির্ভরতা: ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

হিন্দু পরিচিতি: ভারতের বর্তমান সরকার তার হিন্দু পরিচিতিকে পররাষ্ট্রনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, যা মুসলিম-প্রধান দেশগুলোর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

চীনের প্রভাব: ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীন দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের প্রভাব বাড়াতে অনেক বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা ও লগ্নি প্রদান করেছে, যা ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এইউ