images

আন্তর্জাতিক

বিক্ষোভে রণক্ষেত্র অনেক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রেপ্তার ৫ শতাধিক

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৭ পিএম

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ শতাধিক ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

দেশটির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্যান্য দাবিতে ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছে।

আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর টেজার ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে পুলিশ। যদিও বেশিরভাগ বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল বলে উপস্থিত কর্মী ও মিডিয়া কর্মীরা জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড ইনডিজেনাস বিষয়ের অধ্যাপক এমিল কেমেকে পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকার পরপরই সবাইকে জোর করে সরাতে থাকে। সশস্ত্র পুলিশ ও তাদের রাবার বুলেট এসব দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে আছি। আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ আমার পাশে এক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায়, এক বৃদ্ধাকে ধাক্কা দেয়, এরপর আমাকেও ধাক্কা দেয়।

US_Protest--Inner-01

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছেন। উপত্যকাটিতে এরই মধ্যে ৩৪ হাজার ৩০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা চান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন সবকিছুতে বিনিয়োগ বন্ধ করে, যা গাজা যুদ্ধে ইন্ধন জোগায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দুই নারী অধ্যাপককে আটক করতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক অধ্যাপককে মাটিতে ঠেসে ধরে এক পুলিশ এবং আরেক পুলিশ তার হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলে, ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশের কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ২০ জনই এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ছিলেন।

ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ব্লুমিংটনের ইন্ডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ এক ইমেইল বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই ক্যাম্পাস থেকে ২৩ প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশের পাশাপাশি ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্য পুলিশ বিক্ষোভকারীদের জানিয়েছে, তারা ক্যাম্পাসের মধ্যে তাঁবু খাটিয়ে শিবির গড়তে পারবে না। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে মনরো কাউন্টি জাস্টিস সেন্টার পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বাধা দান ও অপরাধমূলক অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থি এই প্রতিবাদ প্রথমে শুরু হয় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা এখনো শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে আছে। গত সপ্তাহে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

US_Protest--Inner-02

ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বোস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদকারীদের স্থাপিত একটি শিবির সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে তারা, এই শিবির ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানানো ১০২ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর তাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হবে।

অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শনিবার ভোরে পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে ৬৯ জন প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি যেসব কোম্পানি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ত্যাগ করার দাবি জানাচ্ছে তারা। ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধেরও দাবি জানাচ্ছে তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যেসব শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি সদস্যদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য বহিষ্কার বা শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাদের সাধারণ ক্ষমার দাবি।