images

আন্তর্জাতিক

‘গাজাকে মরুভূমি বানানো হলেও পুনর্নির্মাণ করব’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮ এএম

গাজাকে যদি মরুভূমি বানিয়ে ফেলা হয় তারপরও আমি সেখানে বাড়ি বানাব- নিজের ভূমি নিয়ে এমন দৃঢ় মন্তব্য করেন ফিলিস্তিনি নারী রানিয়া সাকাল্লাহ। গাজায় ইসরায়েলের হামলার আগে সন্তানদের নিয়ে গাজা শহরের দক্ষিণে শেখ ইজলিন সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাচ্ছিলেন। তবে এখন সেটি শুধু স্বপ্ন।

রানিয়া সাকাল্লার যমজ ছেলে এবং মেয়ে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের শেষ বর্ষে পড়াশোনা শুরুর কাছাকাছি ছিল। এজন্যই তিনি তাদের নিয়ে সময় উপভোগ করছিলেন। কিন্তু এখন তাদের ভবিষ্যত অন্ধকারের মুখোমুখি। তারা গাজার দক্ষিণের সীমান্ত শহর রাফাহতে একটা ছোট্ট ঘরে ১১ জন মিলে বসবাস করছেন। সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা।

আরও পড়ুন: গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ২৫০, মার্কিন অস্ত্রে গুদাম ভরছে ইসরায়েল

রানিয়া বলে, 'আমি সারারাত ঘুমাই না। আমি সারা রাত জেগে শুয়ে ভাবি। আমরা কী করতে যাচ্ছি? আমরা কোথায় যাবো?'

রানিয়া এবং তার স্বামী হাজেম ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একজন হিসাবরক্ষক। তাদের চার বেডরুমের বাড়ি ছেড়ে ১৩ অক্টোবর পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। রানিয়া জানান, 'আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম বলে আমরা বেশি কিছু নিইনি। জামাকাপড় এবং টিনজাত খাবারের সাথে কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে, খান ইউনিসের কাছে ৩৩ কিলোমিটার (২০ মাইল) হেঁটে যান, রানিয়ার ৭৫ বছর বয়সী মা, যিনি সম্প্রতি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাকে তার হুইলচেয়ারে ঠেলে দেন।'

প্রায় ৫০ দিন ধরে তারা খান ইউনিসে ছিলেন। ওই সময় তারা রানিয়ার ভাইয়ের দোকানের মেঝেতে ঘুমিয়েছিলেন। জাতিসংঘের মতে, গাজার ২২ লাখের জনসংখ্যার অর্ধেক এখন স্কুল, পাবলিক বিল্ডিং এবং রাফাহ এবং কাছাকাছি আল-মাওয়াসিতে অস্থায়ী শিবিরে আটকে আছে। সবচেয়ে মরিয়া রাস্তায়।

আরও পড়ুন: ১০ ছেলে থাকলে সবাইকে পাঠাতাম, নিহত ফিলিস্তিনি যুবকের মা

এখন দক্ষিণ গাজাকে উপত্যকার শেষ আশ্রয়স্থল বলে মনে করা হয়। রানিয়া বলেন, ইসরায়েল এই অঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সাহায্যকারী ট্রাকগুলো শুধুমাত্র স্বল্প সরবরাহ আনতে সক্ষম হয়, রোগ এবং চরম বঞ্চনা ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, 'জীবন আমাদের ক্লান্ত করেছে। এটা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।এটা শুধু আমি না। এটা আমার মত এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনি। এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আরও খারাপ অবস্থায় রয়েছে।'

গাজার অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি লোকের খাবার শেষ হয়ে গেছে এবং তারা এখন অনাহারে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো গত সপ্তাহে বলেছে, যুদ্ধের শুরুতে খাদ্য, পানি এবং ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছিল। নভেম্বরে যুদ্ধে বিরতি দিয়ে রাফাহ হয়ে আরও সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেয়- এখনও, এই মুহূর্তে খাদ্য চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: হামাসের শীর্ষ নেতা কারা, শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু?

রানিয়া বলেন, 'আমি চেষ্টা করছি যেন আমার পরিবারে অসুস্থতা না থাকে। আমরা ভাবছি যে আমরা যেকোনো মুহূর্তে আমাদের প্রিয়জনকে হারাতে পারি এবং আমরা ভয় পাচ্ছি।'

লেবু, আম ও পেয়ারা গাছে ভরা তার প্রিয় বাগানটি নিয়ে বাড়িটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে কিনা সেটি জানেন না রানিয়া। কিন্তু তিনি বলেন, তিনি ও তার পরিবার ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও একটি তাঁবুতে থাকতে প্রস্তুত।

রানিয়া বলেন, 'যদি গাজাও একটি মরুভূমি হয়, আমি বরং সেখানে ফিরে এটি পুনর্নির্মাণ করব।'

সূত্র: আল জাজিরা

একে