images

আন্তর্জাতিক / অফবিট

উপমহাদেশে বরফ ছিল বিলাসী পণ্য, আসতো আমেরিকা থেকে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫৩ পিএম

১৮৩০ সাল থেকে ১৮৭০ অবধি ব্রিটিশ ভারতে বরফ ছিল বিলাসের জিনিস। পেয়ালায় পছন্দের পানীয়ে এক টুকরো বরফ মিশিয়ে খাওয়া ছিল বিলাসিতা। উত্তর-পূর্ব আমেরিকা থেকে আমদানি করা হত বরফ। উনিশ শতকে বরফের ব্যবসা এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, এটি নিয়ে বই লিখেছিলেন জনপ্রিয় ইংরেজ লেখক ডেভিড ডিকেনসন। বইয়ের নাম ‘দ্য নাইটিন্থ সেঞ্চুরি ইন্দো-আমেরিকান আইস ট্রেড।’

কলকাতায় বরফ তো পৌঁছালেও সেটি সংরক্ষণের উপায় তেমন একটা ছিল না। ইতিহাস বলে ‘টাস্কানি’ নামে একটি জাহাজে চাপিয়ে ১৮০ টনের মতো বরফ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু চার মাসের সমুদ্রযাত্রায় অনেক বরফই গলে গিয়েছিল। কাঠের গুঁড়ো, খড় ভর্তি বাক্সে করে নিয়ে আসা হয়েছিল বরফ। কলকাতায় সেই বরফ রাখার জন্য বিশেষ তাপ নিরোধক ঘর বানানো হয়।

আরও পড়ুন: মিলেমিশে একাকার সাগর-মরু, পৃথিবীর মঙ্গল ‘নামিব’

বরফ আসার পর উপমহাদেশে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। শহরের উচ্চবিত্তরা বরফ কিনতেন। এরপর কলকাতায় তৈরি হয় ‘আইস হাউজ’। কলকাতা, বম্বে, মাদ্রাজে ফুলেফেঁপে উঠল বরফের ব্যবসা।

শোনা যায়, মুঘল বাদশারা নাকি ব্যবহার করতেন হিমালয়ের বরফ। তবে তা সংরক্ষণের জন্য বিস্তর খরচ হত। অনেক শ্রমিকও লাগত। হুগলিতেও তৈরি হত বরফ। অগভীর গর্তে পানি জমিয়ে বরফ তৈরি করা হত। তবে তা ছিল অপরিষ্কার, খাওয়ার অযোগ্য। স্থানীয় নাম ছিল ‘হুগলি আইস’।

ফ্রেডরিক টিউডর প্রথম ব্রিটিশ ভারতে নিয়ে আসেন ‘আমেরিকান আইস’। টিউডরকে সেই সময় বলা হত আইস কিং। তবে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর পেরিয়ে ভারতে সেই বরফ নিয়ে আসতে সময় লাগত প্রায় চার মাস। টিউডর তাই সেই সময়েই বরফ সংরক্ষণ করে নিয়ে আসার জন্য নানারকম পদ্ধতির প্রয়োগ করেছিলেন।

আরও পড়ুন: তুর্কি বায়রাক্টার ড্রোন কতটা শক্তিশালী, দাম কত?

শুরুতে চড়া দামে বরফ বেচেননি টিউডর। বাজারটা ধরেছিলেন আগে। সেই সময় এক পাউন্ড (৪৫৪ গ্রাম) বরফের দাম ছিল ১ টাকা। প্রথমে গঙ্গার ধারে, স্ট্র্যান্ডে আর তারপর বর্তমান ব্যাঙ্কশাল কোর্টের ঠিক পশ্চিমে, চার্চ লেনের দিকে মুখ করে তৈরি হয় ‘বরফ ঘর’। আমদানি আর বরফ ঘরে সংরক্ষণেই মন দেন টিউডর। ওজন করে মেপে, প্যাকেট করে সেই বরফ পাঠানো হত শহরের সাহেবদের কাছে। বেশহরের নানা জায়গায় খুচরা বন্টনকেন্দ্রও তৈরি হয় তখন।

এই বরফ আমদানি নিয়ে নানা মজার গল্পও শোনা যায়। ১৮৩৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাকি শহরে প্রথম আমেরিকান আইস এসে পৌঁছয়। ১৮০ টন থেকে কমে ১০০ টনের মতো বরফ জাহাজ থেকে নামানো হয়। শহরবাসী এতদিন হুগলির অপরিষ্কার বরফই দেখেছিলেন। দুধসাদা, পরিষ্কার, স্বচ্ছ বরফ খণ্ডগুলো দেখে তারা অবাক হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: কোথাও নেই এক ফোঁটা পানি, মৃত্যুর মুখে লাখ লাখ মানুষ

৩০ বছর ধরে আমেরিকা থেকে কলকাতা, বম্বে, মাদ্রাজে বরফ নিয়ে আসতেন টিউডর। রাতে জাহাজ এসে পৌঁছত বন্দরে। বরফ নামিয়ে তা সরাসরি নিয়ে যাওয়া হত কলকাতার বিভিন্ন গুদামে। ধনী অ্যাংলো সমাজই সেই বরফ কিনত। এত বিলাসী পণ্য সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য ছিল না।

১৮৭৮ সাল নাগাদ এই ব্যবসার মৃত্যুঘণ্টা বেজে যায়। বরফকল তৈরি হতে থাকে বিভিন্ন জায়গায়। জাহাজে করে বরফ আসা বন্ধ হয়ে যায় তিন-চার বছরের মধ্যেই। ১৮৮২ সালে কলকাতার আইস হাউজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ১৯২০ সালে নষ্ট করে ফেলা হয় বম্বের বরফের বাড়ি।

সূত্র: দ্য ওয়াল

একে