images

আন্তর্জাতিক

গাজায় জিম্মিদের হত্যার পর ইসরায়েলে তীব্র বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:২১ পিএম

ইসরায়েল ভুল করে গাজায় জিম্মিদের হত্যার পর তেল আবিবে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গাজা থেকে জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইসরায়েলি সরকারকে আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ভুলবশত গাজায় তিন জিম্মিকে হত্যা করে। ওই তিন ইসরায়েলি বন্দীরা হচ্ছেন - ইয়োতাম হাইম (২৮), সামের তালালকা (২২) এবং অ্যালন শামরিজ (২৬)।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, গাজায় অভিযানের সময় তারা তাদেরই তিনজন জিম্মিকে ‘হুমকি’ মনে করে ভুল করে হত্যা করেছে।

আরও পড়ুন: আরও দু’টি পণ্যবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই মৃত্যুকে "অসহনীয় ট্র্যাজেডি" বলে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই ঘটনায় অনুশোচনা প্রকাশ করে এবং জানায় এই তিনজনকে সৈন্যরা গাজার উত্তরে শেজাইয়াতে অভিযানের সময় গুলি করে।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার পর থেকে এক শ’রও বেশি জিম্মিকে গাজায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স-আইডিএফ বলছে, শুক্রবারের এই ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং তারা “এই ট্র্যাজিক ঘটনায় তীব্র অনুশোচনা প্রকাশ করছে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয় - “আমাদের জাতীয় লক্ষ্যই হলো এখনও যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের উদ্ধার করা এবং সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনা।”

সেনাবাহিনীর এই ঘোষণার পর শত শত মানুষ তেল আবিবের কেন্দ্রে জড়ো হয় এবং তারা আইডিএফের সামরিক স্থাপনা অভিমুখে যাত্রা করে, এ সময় তারা সরকারকে বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তি সম্পন্ন করার আহবান জানায়।

প্রতিবাদকারীরা মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নামে এবং তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “তাদের ঘরে ফিরিয়ে আন” এবং “বন্দী বিনিময় কর এখনি”।

তিনজনের মৃতদেহ এরইমধ্যে ইসরায়েলে আনা হয়েছে এবং তাদের শনাক্ত করেছে পরিবারের লোকজন।

আরও পড়ুন: কুয়েতের আমির শেখ নওয়াফ আর নেই

ইয়োতাম হাইম, যিনি ৭ অক্টোবর সীমান্তবর্তী শহর কেফার আজা থেকে অপহৃত হন, তিনি ছিলেন একজন মিউজিশিয়ান যিনি প্রাণীদের ভালবাসতেন এবং ইতালিয়ান খাবার রান্না করতে পছন্দ করতেন।

হামাসের হামলার সময় তিনি তার পরিবারকে ফোন করেন এবং জানান তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। যখন তিনি খোলা বাতাসের জন্য জানালা খুলে দেন তখনি তাকে অপহরণ করে হামাস।

ছেলের মৃত্যু সংবাদ আসার আগে, ইয়োতামের মা বলেন, তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়িতে লুকিয়ে থেকে তারা একে অপরের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করেন।

অ্যালন শামরিজও হামলার সময় কেফার আজা শহরে ছিলেন। তার পরিবার তার নাম প্রকাশের অনুমতি দেয় কিন্তু জানায় তার পরিচয় যাতে প্রকাশ না হয়।

সামের তালালকা মূলত একজন বেদুইন, তাকে অপহরণ করা হয় নির আম থেকে। মোটরসাইকেলে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন তিনি।

তিনি হুরায় বসবাস করতেন এবং সেখানে একটা মুরগির হ্যাচারিতে কাজ করতেন। ৭ অক্টোবর সকালে তিনি কাজে যোগদান করেছিলেন। হামলার পর তিনি তার বোনকে ফোন করে জানান যে তার গুলি লেগেছে।

তারা বাবা স্থানীয় গণমাধ্যমে জানান, হামলার দিন স্থানীয় সময় সকাল সাতটার দিকে তার সঙ্গে শেষবার যোগাযোগ হয়। গাজা থেকে তালালকার একটা ছবি টেলিগ্রামে শেয়ার করা হয়।

Screenshot-2023-12-16-17192
ঘটনার পর সরকারের প্রতি বাকি বন্দীদের নিরাপদে ফিরিয়ে দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে হাজারও মানুষ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের এই মৃত্যুকে “অসহনীয় ট্রাজেডি” বলে বর্ণনা করেছেন।

“এই কঠিন সন্ধ্যাতেও, আমরা আমাদের ক্ষততে প্রলেপ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াব, এ থেকে শিক্ষা নেব এবং আমাদের সব বন্দীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, এই হত্যাকান্ড ছিল একটা “ ট্র্যাজিক দুর্ঘটনা” এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে “পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই যে এই অপারেশন ঠিক কীভাবে চালানো হয়েছে।”

ইসরায়েলে গত ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে ১২০০ জন মারা যায় এবং জিম্মি করা হয় ২৪০ জনকে।

তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে বন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তবে এখনও এক শ’র বেশি জিম্মিকে গাজায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি হামলায় ১৮ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ৫০ হাজার।

হেন আভিগডোরি, যার স্ত্রী ও কন্যাকে বন্দীর পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রায়ই লোকজনকে বলতে শোনেন যে জিম্মিদের ‘সামরিক উপায়েই’ উদ্ধার করা সম্ভব।

হেন আভিগডোরি তার টুইটে বলেন, আসলে “এমন কোনো সামরিক উপায় নেই” যাতে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা যাবে। যাদের হৃদয় ও মন আছে এমন সব মানুষই একই কথা বলবেন, তাদের কফিনে করে নয় বরং জীবিত উদ্ধার করতে হলে ইসরায়েলকে অবশ্যই কোনো চুক্তিতে যেতে হবে।”

সূত্র : বিবিসি

এমইউ