images

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে জানালেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৬ পিএম

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের বিষয়ে মুখ খুলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি জানিয়েছেন, রুশদের লক্ষ্য অর্জন হলেই কেবল ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।

ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরুর পর প্রথমবারের মতো দীর্ঘ এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সাংবাদিক এবং রাশিয়ার সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

বড় আকারে পরিকল্পিত এই আয়োজনের বেশিরভাগ আলোচনাই ছিল “ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান” নিয়ে।

আরও পড়ুন: ইউক্রেনের জন্য আরও ২০ কোটি ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তা

এ সময় সম্মুখ সমরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জোর দেন তিনি।

“ডিরেক্ট লাইন” নামের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলে চার ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।

আলোচনার প্রথমেই প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, “সার্বভৌমত্ব ছাড়া আমাদের দেশের অস্তিত্ব অসম্ভব। এটি একেবারেই থাকবে না”।

যুদ্ধের সময় রাশিয়ার অর্থনীতি শক্তিশালী ছিল উল্লেখ করে আলোচনায় ইউক্রেন প্রসঙ্গে উঠে আসে।

রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা

পুতিন বলেন, " আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করলেই ইউক্রেনে শান্তি আসবে।"

তিনি বলেন, ইউক্রেন নিয়ে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এর মধ্যে রয়েছে - ইউক্রেনকে নাৎসি মুক্ত এবং বেসামরিকীকরণ করা।

পুতিন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এসব কথা বলে আসছেন। ইউক্রেনকে তিনি সব সময় 'নাৎসি মতাদর্শের' সঙ্গে তুলনা করেন।

আরও পড়ুন: ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যা বলছেন চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার মোট ছয় লাখ ১৭ হাজার সৈন্য ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে। এর বাইরে আরও তিন লাখ রাশিয়ানকে গত বছর যুদ্ধের জন্য ডাকা হয়েছিল। এছাড়াও চার লাখ ৮৬ হাজার মানুষ সেনাবাহিনীতে আসার জন্য নিবন্ধন করেছে বলে তিনি জানান।

"আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে সৈন্যরা তৈরি আছে এবং এর সংখ্যা কমছে না," বলেন পুতিন।

সামরিক ক্ষয়-ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান উল্লেখ না করলেও তার "ঘনিষ্ঠ" মানুষদের সন্তানেরা তথাকথিত প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির জন্য লড়াই করছে এবং "আমার খুব কাছের" অনেকে মারা গেছে বলে জানান তিনি।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিন লাখ ১৫ হাজার রাশিয়ান সৈন্য নিহত বা আহত হয়েছে বলে এই সপ্তাহেই প্রকাশিত এক গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে। আর এই সংখ্যা ইউক্রেন আক্রমণের শুরুতে রাশিয়ার সামরিক কর্মীদের প্রায় ৯০ শতাংশ।

পুতিনকে রাশিয়ান এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের করা স্বতঃস্ফূর্ত প্রশ্ন ছাড়াও সাধারণ রাশিয়ানদের দুই মিলিয়ন প্রশ্ন জমা দেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলো আগে থেকেই সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হয়েছিল।

পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা লুহানস্ক-এর দানিপ্রো নদীর পূর্বতীরে ইউক্রেন বাহিনীর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তিনি লুহানস্ক থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র ইজভেস্টিয়ার একজন প্রতিবেদক।

জাবাবে পুতিন বলেন, ইউক্রেন একটি 'ক্ষুদ্র এলাকাজুড়ে' সামরিক সাফল্য পেয়েছে। ক্রিমিয়ায় প্রবেশের রাস্তা হিসেবে এই এলাকাটি দখলের জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনী শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

30b88720-9b07-11ee-91bf-230bfab3fcba
ছবি: গেটি ইমেজেস

পুতিন আরও বলেন, রাশিয়ার সৈন্যরা নিজেরদের রক্ষার জন্য কয়েক মিটার দূরে সরে এসে গাছপালা ঘেরা জায়গায় অবস্থান নিয়েছে।

এ সময় তিনি বলেন, কিয়েভের মূল উদ্দেশ্যই হলো, তাদের আরও সামরিক তহবিল দরকারের বিষয়টি পশ্চিমাদের দেখানো।

“আমি জানি না কেন তারা এটা করছে, তারা তাদের লোকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য এটা একমুখী যাত্রা। এর কারণ রাজনৈতিক, কারণ ইউক্রেনের নেতারা সাহায্যের জন্য বিদেশী দেশগুলোর কাছে ভিক্ষা করছেন”।

পুতিন বলেন, ইউক্রেনের প্রতি তার মিত্রদের সমর্থন ফুরিয়ে আসছে।

“আজ ইউক্রেন প্রায় কিছুই উৎপাদন করে না,” বলেন তিনি। "আমার শব্দ মার্জনা করবেন, তাদের সবকিছুই বিনামূল্যে আনা হচ্ছে। তবে সেটাও এক সময় ফুরিয়ে যেতে পারে। আর মনে হচ্ছে সেগুলো ধীরে ধীরে ফুরাচ্ছে”।

রুশ নেতা যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ ব্রাসেলসে জোটের সদর দফতরে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানে তিনি সতর্ক করে বলেন, “পুতিন যদি ইউক্রেনে জয়ী হন, তবে বাস্তবিক অর্থেই সেখানে তার আগ্রাসন শেষ না হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে”।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে এই সিদ্ধান্তহীনতা পুতিন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন বলে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সতর্ক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, “মস্কো যদি ব্রাসেলস থেকে ইউক্রেনের প্রতি নেতিবাচকতার সুযোগ পায় তবে ইউরোপের লোকেরা কোনো সুবিধা পাবে না। পুতিন অবশ্যই সেটা ব্যক্তিগতভাবে আপনার এবং সমগ্র ইউরোপের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে”।

পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যেসব এলাকায় যুদ্ধ চলছে সেখানকার সীমান্ত রাশিয়ান বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

“বাস্তবিক অর্থেই সীমান্তে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের অবস্থার উন্নতি করছে," দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধক্ষেত্রে খুব কম পরিবর্তন হলেও রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চলের দুটি পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিঙ্কা এবং আভদিভকাকে লক্ষ্যবস্তু করছে।

পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও রাশিয়া ‘এগিয়ে যেতে পারে’।

রাশিয়ার জেলে আমেরিকানরা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়েও পুতিন আলাপ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করলেও এর বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদের অভিযোগ আনেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্যান্য ব্যক্তি ও দেশকে সম্মান’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশটি যদি তা করতে পারে তবে রাশিয়া সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে প্রস্তুত।

নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতা ভ্যালেরি হপকিন্স রাশিয়ান এই নেতাকে রাশিয়ার কারাগারে বন্দী দুই আমেরিকান নাগরিকের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বহুল সম্মানিত সংবাদদাতা ইভান গার্শকোভিচ এবং পল হুইলানকে মুক্তি দিতে রাশিয়ার দাবির বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় ব্যক্তির গ্রেফতারকে অন্যায়ভাবে আটক হিসেবে দেখছে। বৃহস্পতিবার গের্শকোভিচের আটকের মেয়াদ ৩০ জানুয়ারী পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

তিনি ইয়েকাটেরিনবার্গ শহরে পত্রিকার জন্য রিপোর্ট করার সময় তাকে গ্রেফতার এবং গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তবে তিনি এবং তার সহকর্মীরা এই অভিযোগে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন।

"সম্ভাব্য বিনিময়ের বিষয়ে... আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছতে চাই, এবং সেই চুক্তিটি অবশ্যই পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং উভয় পক্ষের জন্য উপযুক্ত হতে হবে," বলেন পুতিন।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ