images

আন্তর্জাতিক

৩৭০ ধারা কী, কেন ফেরত চান কাশ্মিরিরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৮ পিএম

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ (যা কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়) বাতিল করে বিজেপি সরকার। ২০১৯ সালে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মিরের ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর বিরুদ্ধে ভারতে বহু মামলা হয়। সেই মামলা একত্রিত করে শুনানি করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। আজ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক।

ভারতের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায়ে বলেছে, জম্মু-কাশ্মিরে ৩৭০ ধারা ছিল অস্থায়ী ব্যবস্থা। তাই এটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত বৈধ। সংবিধান অনুসারেই জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: কাশ্মিরে কি সত্যিই ‘শান্তি’ ফিরেছে?

দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মির ভারতের অভিন্ন অঙ্গ, এতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। জম্মু-কাশ্মিরের সংবিধানের থেকে ভারতের সংবিধান উঁচুতে। জম্মু-কাশ্মিরে ভারতের সংবিধানই চলবে।

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ভারতের নির্বাচন কমিশনকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু কাশ্মিরের বিধানসভা নির্বাচন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। এর অর্থ হলো রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে জম্মু-কাশ্মির।

কী ছিল ৩৭০ ধারায়
৩৭০ ধারা হলো ভারতীয় সংবিধানের একটি অস্থায়ী বিধান (‘টেম্পোরারি প্রভিশন’)। এই ধারার আওতায় জম্মু-কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। ৩৭০ ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারার আওতায় জম্মু-কাশ্মিরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়।

৩৭০ ধারা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু কাশ্মিরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রীয় সরকারের। এমনকি, কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না কেন্দ্র বা সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সম্মতি নিতে হতো। ৩৭০ নম্বর ধারার সঙ্গে এর আওতায় থাকা ৩৫/এ ধারাও বাতিল হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: কাশ্মিরের চোখ জুড়ানো গ্রাম, নাম ‘বাংলাদেশ ভিলেজ’

৩৭০ ধারার অধীনেই ছিল ৩৫-এ ধারা, যা ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে কার্যকর হয়। ৩৫ (এ) ধারানুসারে, জম্মু কাশ্মিরের বাসিন্দা বলতে কী বোঝায়, তাদের বিশেষ অধিকারগুলি কী কী, এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু কাশ্মির বিধানসভার উপর ন্যস্ত রয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী কাশ্মিরের স্থায়ী বাসিন্দারাও বিশেষ সুবিধা পেতেন। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য রাজ্যের কেউ সেখানে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন না। কিনতে হলে অন্তত ১০ বছর জম্মু-কাশ্মিরে থাকতে হত। তবে এখন যেকোনও রাজ্যের বাসিন্দা সেখানে জমি কিনতে পারবেন।

৩৫ (এ) ধারার বিধান অনুযায়ী, স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া জম্মু কাশ্মিরে অন্য রাজ্যের কেউ চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। কে স্থায়ী বাসিন্দা এবং কে নয়, তা নির্ধারণ করার অধিকার ছিল রাজ্য বিধানসভার উপরেই ন্যস্ত। এই ধারা অনুযায়ী রাজ্য অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মির বিধানসভাই ঠিক করতে পারত, রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কারা এবং তাদের বিশেষ অধিকার কী ধরনের হবে।

আরও পড়ুন: কাশ্মিরে মাদকের ছোবল, পথহারা যুবকরা

জম্মু-কাশ্মিরের কোনও নারী রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। অর্থাৎ তার সম্পত্তিতে আর কোনও অধিকার থাকত না। এমনকি, তার উত্তরাধিকারীরাও ওই সম্পত্তির মালিকানা বা অধিকার পেতেন না। তবে ২০০২ সালে জম্মু ও কাশ্মির হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বাতিল হয় ৩৫-এ ধারায় নারীদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আইন। ওই ধারা অনুযায়ী, রাজ্যের বাসিন্দা কোনও নারী রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তার উত্তরাধিকারীদেরও সম্পত্তির উপরে অধিকার থাকে না। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে বিয়ের পরও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না নারীরা। তবে তাদের উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তির উপর অধিকার থাকবে না। 

১৯৪৭ সালে ৩৭০ ধারার খসড়া প্রস্তুত করেছিলেন জম্মু-কাশ্মিরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ। মহারাজা হরি সিং এবং জওহরলাল নেহেরু তাকে নিয়োগ দেন। তবে শেখ আবদুল্লাহ অস্থায়ীভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না, বরং স্থায়ীভাবে জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। যদিও কেন্দ্র তার সেই দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও ৩৭০ ধারা বলে জম্মু-কাশ্মির ছিল আলাদা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য, যদিও সেই স্বায়ত্তশাসন ছিল ‘অস্থায়ী’।

একে