আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮ এএম
ভারতের উত্তরকাশী টানেলের আটকে পড়া ৪১ শ্রমিকদের কাছে প্রথমে পৌঁছান মুন্না কুরেশি নামে এক উদ্ধারকারী। মঙ্গলবার তিনি ইঁদুরের মতো গর্ত করে সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেন। এ কাজে নেতৃত্ব দেন ওয়াকিল হাসান।
মুন্না কুরেশি হচ্ছেন একজন ২৯ বছর বয়সী র্যাট হোল মাইনার। তিনি দিল্লির একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। এ কোম্পানিটি একটি সনাতন (প্রযুক্তিবিহীন) ইঞ্জিনিয়ারিং পরিষেবা সংস্থা যারা নর্দমা এবং পানির লাইন পরিষ্কার করে। সেমাবার তাকে এবং তার দলকে উত্তরাখণ্ডে আনা হয়েছিল ওই আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে উদ্ধারের জন্য।
এরপর মঙ্গলবার রাতে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ওই টানেল থেকে ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তারা গত ১৭ দিন ধরে সুড়ঙ্গের ভেতরে আটকে ছিলেন।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের উদ্ধার মানবতার বিস্ময়কর উদাহরণ: মোদি
সুড়ঙ্গের ভেতরে জমে থাকা ধসের শেষ অংশটি হাতে কাটা হয়। তার আগে শ্রমিকদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা বারবার বাধা পেয়েছে।
শেষমেশ মঙ্গলবার ভারতীয় সময় রাত আটটা নাগাদ প্রথম শ্রমিককে টানেল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়, আর বাকি সবাইকে বের করতে ঘন্টাখানেকেরও কম সময় লাগে। এরপর প্রত্যেক শ্রমিককে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
মূলত, নিষিদ্ধ পদ্ধতিতেই উদ্ধারকাজে সাফল্য আসে। মার্কিন কোম্পানির মাটি খোঁড়ার মেশিন ভেঙে পড়ার পর উত্তরকাশীর টানেলে আটক ৪১ শ্রমিকদের পরিবারের মনোবল আরও একদফা ভেঙে পড়ে। সেই সময়ে দিল্লি ও ঝাঁসি থেকে উড়িয়ে আনা হয় র্যাট হোল মাইনার-দের। তারাই কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় সরু পাইপের মধ্যে বসে সরিয়ে ফেলেন ১৫ মিটার ধস। প্রায় ৪০০ ঘণ্টার পর এক ঝটকায় টানেলে আটক শ্রমিকদের সামনে খুলে যায় সব বাধা।
আরও পড়ুন: ‘ইঁদুর খোঁড়া পদ্ধতি’, ১৭ দিন পর উদ্ধার টানেল শ্রমিকরা
একেবারে ইঁদুরের মতো খুঁড়ে, ধস সরিয়ে রাস্তা করে শ্রমিকদের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন তারা। তাদের দাবি তারা মোট ১৫ মিটার রাস্তা কেটেছেন। শ্রমিকরা বেরিয়ে আসার পর ১২ জনের সেই টিমের মুখের হাসি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে কী পরিশ্রম করতে হয়েছে গত কয়েক ঘণ্টায়।
র্যাট হোল মাইনারসরা যে মূহূর্তে গর্ত খোঁড়ার কাজ শেষ করেন তাদের দেখে চিত্কার করে ওঠেন আটক শ্রমিকরা। মাইনারসরা গণমাধ্যমে বলেছেন, মোট ১৫ মিটার রাস্তা কাটতে হয়েছে। ওদের যখন প্রথম দেখলাম তখন আমাদের মন খুশিতে ভরে উঠেছিল। ওরা আামাদের জড়িয়ে ধরে চিত্কার করছিল।
মোট ১২ জনের র্যাট হোল মাইনার টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াকিল হাসান। তিনি বলেন, মনে হলো দেশের জন্য কিছু করতে পারলাম। খুব কঠিন কাজ। সরু জায়গায় কাজ করতে হয়েছিল। ৪১ জনের প্রাণ বাঁচাব ভেবেই জেদ মনে জেদ চেপে গিয়েছিল। আমার সঙ্গীরা খুব পরিশ্রম করেছে। জীবনে এমন চ্যালেঞ্জিং কাজ আগে কখনও করিনি। টিমের কর্মীরা টানা ২৪ ঘণ্টা বিরামহীন কাজ করেছে।
আটক শ্রমিকরা বেরিয়ে আসার পর র্যাট হোল মাইনারসদের ধন্যাবাদ জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, মেশিন ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু হাতে যারা মাটি খোঁড়ার কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ।
র্যাট হোল মাইনিং কী
কয়লা তোলার জন্য র্যাট হোল মাইনিং ভারতে প্রচলিত অত্যন্ত পুরনো ও বিপজ্জনক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খুব সরু গর্ত করে নীচের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়। অনেক সময় গর্ত এতটাই সরু হয় যে একজন মাত্র সেই গর্তে নামতে পারেন। টানেল সরু হওয়ায় অনেক সময় সেখানে নামে নারী ও শিশুরাও। এরপর ছোট গাঁইতি গিয়ে খুঁড়ে কয়লা বের করা হয়।
র্যাট হোল মাইনিংয়ের দু’টি পদ্ধতি চালু রয়েছে। একটি হলো উলম্বভাবে গর্ত না খুঁড়ে ধীরে ধীরে নীচের দিকে যাওয়া হয়। আর দ্বিতীয়টি হলো ১০-১০০ বর্গ মিটার গর্ত খোঁড়ার পর সেখান থেকে আরও ১০০-৪০০ ফুট কুঁয়ো খোঁড়া হয়। গ্রিন ট্রাইবুন্যাল এই পদ্ধতিতে কয়লা খনন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ এটি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। ভূগর্ভস্থ পানিতে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
সূত্র : জি নিউজ, হিন্দুস্তান টাইমস
এমইউ