images

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দমনপীড়নে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৬ এএম

বাংলাদেশের শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের চলমান দমন-পীড়ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এছাড়া বাংলাদেশে সহিংস পন্থায় শ্রমিক আন্দোলন দমনেরও নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 

স্থানীয় সময় সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ম্যাথিউ মিলার।

সংবাদ সম্মেলনে ম্যাথিউ মিলারকে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে, যারা শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করে, হুমকি দেয় বা শ্রমিকদের ভয় দেখায় তারা প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে। তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মী নেত্রী কল্পনা আক্তারের সংগ্রামের কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাঁচজন গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কি কোনও ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে?

প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গত সপ্তাহে দেওয়া বক্তৃতা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রচার করতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বজুড়ে সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র তার এই তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি আবারও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুরো বিবৃতির বিষয়েই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

আরও পড়ুন: পিটার হাসকে হত্যার হুমকি ও নির্বাচনের তফসিল নিয়ে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরও বলেন, আমরা যেমন বলেছি ন্যূনতম মজুরি নিয়ে প্রতিবাদে বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতার পাশাপাশি বৈধ কর্মী ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের অপরাধীকরণের নিন্দা জানাই। শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের চলমান দমন-পীড়ন নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।

মার্কিন এই কর্মকর্তা জানান, আমাদের নীতি- যেমনটি আমরা আগেই বলেছি যে, সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকরা সহিংসতা, প্রতিশোধ বা ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সমষ্টিগত দর কষাকষির অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা এই মৌলিক মানবাধিকারগুলোকে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এরপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, বিরোধী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা, গণগ্রেফতার এবং অপহরণসহ বিরোধীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শাসক দল আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেই না। বাংলাদেশিরা নিজেরাই যা চায়, আমরাও তাই চাই। আর তা হচ্ছে- শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদেরকে আহ্বান জানাবো যেখানে তারা যেন বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একসঙ্গে কাজ করে, যাতে করে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আরও পড়ুন: দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে সহিংস বক্তব্যে পিটার হাসের উদ্বেগ

পরে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে নিঃশর্ত সংলাপের জন্য চিঠি লিখেছেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা। ত্রিশের বেশি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে যে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শুধু বিরোধী দল বিএনপিই বয়কটের ডাক দিয়েছে। ৩০ টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে কী যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্বশীল এবং অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচনা করবে, নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তি এবং বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়াবে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের প্রশংসা করি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তেমন কিছু করা থেকে আমি বিরত থাকব। আমি আগেই যেমন বলেছি, বাংলাদেশে আমাদের লক্ষ্য বরাবরের মতো একই রয়েছে। আর তা হচ্ছে, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

সম্প্রতি আরেক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত পিটার হাসকে হত্যার হুমকির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ম্যাথিউ মিলারকে। সেসময় তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে বার বার আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছি। তাদেরকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেব যে, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন ও এর কর্মকর্তাদের সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে বাধ্যবাধকতা আছে তাদের। আমরা আশা করবো তারা এসব বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

একে