আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৩ পিএম
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার কারণে আরবদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন হারাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এসব দেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকরা। এ বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনকে তারবার্তা পাঠিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা।
কূটনৈতিক তারবার্তার বরাত দিয়ে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে সতর্ক করে তারা বলেছেন, ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে আরবে একটি প্রজন্মের সমর্থন হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওমানে মার্কিন দূতাবাস এ নিয়ে একটি বার্তা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসনকে। এতে বলা হয়েছে, ‘আলোচনা করে দেখতে পাচ্ছি, এই যুদ্ধে আমরা হেরে যাচ্ছি।’ ওমান দূতাবাসের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা এ বার্তা দিয়েছেন। মূলত ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাভাজন ও গাজা যুদ্ধকে যারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে বাইডেন প্রশাসনকে এ বার্তা দিয়েছে দূতাবাস। তারা এ-ও জানিয়েছেন, ওমানের লোকজন মনে করছেন, ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তাদের ভেতরে মার্কিনবিরোধী ক্ষোভ বাড়ছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সংকট সমাধানে বরাবরই দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের কথা বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ শীর্ষ কূটনীতিকেরা নানা সময়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই একমাত্র সমাধান। তবে ইসরায়েলের প্রতি তাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন গাজায় হত্যা সংগঠিত করতে সহযোগিতা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই যুদ্ধ শুরুর পর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব বারবারই খারিজ করেছেন এবং প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য হামলা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন। আর নেতানিয়াহুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থান পরিষ্কার করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এও বলেছেন, যুদ্ধবরিতিতে হামাস শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাবে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মূলত ফুঁসে উঠেছে আরববাসী।
এদিকে যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় প্রধান সড়ক এড়িয়ে ভিন্ন পথে বাড়িতে প্রবেশ করেন বাইডেন। দ্য হিলের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার যুদ্ধবিরতির দাবিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডেলাওয়ারের বাড়ির কাছে জড়ো হন।
শনিবার দেশটির ডেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যক্তিগত বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন কমিউনিটির শত শত মানুষ। এ সময় ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির দাবি জানান তারা।
ভেটেরান্স ডে উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডেলাওয়ারে পৌঁছালে তার উপস্থিতিতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষোভকারীদের পাশ কাটিয়ে প্রেসিডেন্টের মোটর শোভাযাত্রা প্রধান সড়ক ব্যবহার না করে অন্য পথে বাড়িতে প্রবেশ করে।
সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। বিরোধীদল ছাড়াও ইসরাইলকে বিবেকশূন্য অন্ধ সমর্থনে নিজ দলেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বাইডেনকে সমর্থন করলেও ৪৬ শতাংশ তার নেয়া সিদ্ধান্তগুলোয় অনাস্থা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা গত ৩৫ দিনে ভয়াবহ হামলায় ১১ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজারের বেশি শিশু এবং প্রায় তিন হাজারের বেশি নারী। নিহতদের মধ্যে প্রায় সবাই বেসামরিক এবং সাধারণ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল যে হামাসকে নির্মূলে এই নৃসংস অভিযান পরিচালনা করছে, সেই হামাসের টিকিটিও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর ফলে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে।
একে