images

আন্তর্জাতিক

গাজায় স্থল অভিযানে নাকাল, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে ইসরায়েল!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৩ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযানে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা বুধবার ঘোষণা করেছে যে, গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ১৩৬টি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংসের তথ্য নথিভুক্ত করেছে। এদিকে গাজায় এক বা দুইদিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতি দিতে ইসরায়েল রাজি হতে পারে বলে জানিয়েছে কাতার।

হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত আল-আকসা টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত একটি বক্তৃতায় মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, 'আমরা ইসরায়েলি স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ১৩৬টি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংসের নথিভুক্ত করেছি শত্রু (ইসরায়েল) বিদেশি বন্দীদের মুক্তিতে বাধা দিচ্ছে বিমান হামলা জোরদার করে এবং গণহত্যা করে। তারা কয়েকদিন আগে তাদের ১২ জনের মুক্তিতে বাধা দিয়েছিল।'

সম্ভাব্য বন্দী বিনিময় সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমাদের একমাত্র পদ্ধতি হলো বন্দীদের বিনিময়ের জন্য একটি ব্যাপক চুক্তি, তা সম্পূর্ণভাবে হোক বা আংশিকভাবে হোক বা দলগতভাবে হোক। ইসরায়েলের কারাগারে থাকা আমার বন্দী।'

আরও পড়ুন: অকাতরে মানুষ মারছে ইসরায়েল, অন্ধ বিশ্ব

বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযানের সময় ৩৩ সেনা নিহত হয়েছে। একটি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর গাজা উপত্যকার যুদ্ধে আর্টিলারি কর্পসের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই সেনা।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উত্তর গাজা উপত্যকায় সংঘাতের সময় বিমান বাহিনীর অভিজাত শালদাগ ইউনিটের আরেক সৈনিকও নিহত হয়েছে। ইসরায়েল বলেছে যে ২৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজায় স্থল অভিযানের সময় তাদের ২৬০ সেনা আহত হয়েছে।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান চালাতে যাওয়া সেনারা বেশ ভালোই এগিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জোনাথান কনরিকাস। তবে তিনি সঙ্গে এও স্বীকার করেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য হামাসও বেশ ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।

gaza2
গাজায় ইসরায়েলের নির্মমতা। ছবি: এপি

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের জন্য এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি যুদ্ধক্ষেত্র। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হামাস এই যুদ্ধের জন্য খুবই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।’

৭ অক্টোবর তার অপারেশন আল-আকসা বন্যা চলাকালীন হামাস ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী প্রায় ৬ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে সম্ভাব্য বিনিময়ের জন্য প্রায় ২৪২ ইসরায়েলিকে বন্দী করেছে।

প্রতিবাদে ইসরায়েলি বন্দীদের পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

এদিকে নিজেদের হাতে আটক জিম্মিদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১৫ জনকে মুক্তি দিতে পারে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। আর এই ১০-১৫ জনকে মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে গাজায় এক অথবা দুই দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারে ইসরায়েল।

আরও পড়ুন: গাজা ‘শিশুদের কবরস্থানে’ পরিণত হচ্ছে: জাতিসংঘ

বুধবার (৮ নভেম্বর) কাতারের একটি সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। নাম গোপন রাখার শর্তে সূত্রটি বলেছে, ১০ থেকে ১৫ জিম্মিকে ছাড়িয়ে নিতে কাতারের মধ্যস্থতায় ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় আলোচনা চলছে। তাদের মুক্তি দেওয়ার বদলে দুই বা এক দিনের যুদ্ধবিরতি হতে পারে।

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৫৬৯ জন। বুধবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জনই শিশু।  এছাড়া নিহতদের মধ্যে দুই হাজার ৮২৩ জন নারী ও ৬৪৯ জন বৃদ্ধ আছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৬ হাজার ৪৭৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল-কুদরা। সেখানে এখনও এক হাজার ৩৫০ জন শিশু-সহ অন্তত দুই হাজার ৫৫০ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। এই লোকদের বেশিরভাগই মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অবস্থায় আছে।

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সংঘাতে এত সংখ্যক বেসামরিক মানুষের নিহতের ঘটনায় আবারও ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

gaza1
গাজায় অকাতরে হামলা করছে ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, গাজায় ইসরাইলি হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। এত অধিক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি বলে দিচ্ছে, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ‘স্পষ্টত কিছু ভুল’ রয়েছে।

ইসরাইলের নির্বিচার ও বিরামহীন বিমান হামলায় গত এক মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এর ফলে বেশিরভাগ অধিবাসীই তাদের ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারিয়েছে। রিপোর্ট বলছে, জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এখন উদ্বাস্তু। তারা এখন হয় খোলা আকাশের নিচে নয়ত বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে।

গাজার গণমাধ্যম অফিসের বিবৃতি মতে, ইসরাইলের অনবরত বিমান ও স্থল অভিযানে গাজায় ১০ শতাংশ ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার অর্ধেক হাসপাতাল ও ৬২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।

সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি, আনাদুলু

একে