images

আন্তর্জাতিক

গাজায় নিহত দশ হাজার, ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক বোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪২ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় নিহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের তালিকায় শিশু ৪ হাজার ১০০টিরও বেশি। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনা করছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক বোমা, যা লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছে যে, তারা ইসরায়েলের জন্য ৩২০ মিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম বোমা স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।

আরও পড়ুন: ইসরায়েলে ১৪৫০ কোটি ডলার মার্কিন কংগ্রেসের, ফিলিস্তিনে শুধু ‘সান্ত্বনা’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর মার্কিন কংগ্রেসের নেতাদের কাছে স্পাইস ফ্যামিলি গ্লাইডিং বোমা স্থানান্তর পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। এই বোমা যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয় এবং এটি অত্যন্ত নির্ভুল।

ওই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, অস্ত্র প্রস্তুতকারক রাফায়েল ইউএসএ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবহারের জন্য তার ইসরায়েলি মূল কোম্পানি রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমের কাছে বোমাগুলো হস্তান্তর করবে।

সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলি হামলায় শহরে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার ২২ জন। এর মধ্যে ৪ হাজার ১০৪ জন শিশু। আর আহত মানুষের সংখ্যা অন্তত ২৫ হাজার ৪০৮ জন।

খবরে বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা নিহত ব্যক্তিরা ছাড়াও অন্তত ২ হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজদের মধ্যে ১ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজদের প্রায় সবাই বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধুমাত্র তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থানগুলোতেই ২৭০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি প্রধান হাসপাতালেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া পুরো উপত্যকাজুড়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ৭১ শতাংশই জ্বালানি সংকটের কারণে হয় বন্ধ হয়ে গেছে। আঘাতপ্রাপ্ত অসংখ্য ব্যক্তি এবং গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কোনো রকম চেতনানাশক ছাড়াই অস্ত্রোপচার করছেন।

আরও পড়ুন: গাজা ইস্যু, বাইডেনকে ‘ভোট না দেওয়ার’ হুমকি মুসলিম আমেরিকানদের

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রবেশ করে এক আকস্মিক হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। এতে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া আরও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। এ ঘটনার পর থেকেই গাজার ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

সোমবার জাতিসংঘ বলেছে যে, গাজা শিশুদের কবরস্থান হয়ে উঠছে। এটি একটি যুদ্ধবিরতির দাবিকে বাড়িয়ে তুলছে।

এর আগে রোববার জাতিসংঘের সংস্থার প্রধানরা গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরল যৌথ আবেদন করেছেন। জাতিসংঘের ১৮টি সংস্থার নেতারা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় মৃতের সংখ্যায় হতবাক হয়েছেন তারা। এ নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন সংস্থাগুলোর প্রধানরা।

জাতিসংঘের সকল সংস্থার প্রধানদের এমন যৌথ বিবৃতির ঘটনা বিরল। সংস্থাগুলোর নেতারা বলেন, 'আমাদের অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি দরকার। ৩০ দিন হয়ে গেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এটা এখনই বন্ধ করতে হবে।'

ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনসহ জাতিসংঘের অন্যান্য সকল সংস্থার প্রধানরা গত মাসে ইসরায়েলি এবং হামাসের হত্যাকাণ্ডকে 'ভয়াবহ' বলে বর্ণনা করেছেন।

জাতিসংঘের নেতারা বলেছেন, 'প্রায় এক মাস ধরে বিশ্ব ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উদ্ঘাটন পরিস্থিতি দেখছে এবং ক্ষয়ক্ষতি ও ছিন্নভিন্ন প্রাণের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় মর্মাহত ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।'

আরও পড়ুন: ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা অসহনীয়: ওবামা

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা অগ্রহণযোগ্য যে গাজার জনসংখ্যাকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সেইসাথে তাদের বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং উপাসনালয়ে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে।'

জাতিসংঘের নেতারা কয়েক ডজন সাহায্য কর্মীকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্বাস্থ্য পরিষেবার বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। ৭ অক্টোবর থেকে ৮৮ জন জাতিসংঘের কর্মীসহ অনেক সংখ্যক জরুরি কর্মী নিহত হয়েছে। এটি একক সংঘাতে জাতিসংঘের কর্মীদের মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা।'

একে