images

আন্তর্জাতিক

গাজায় শরণার্থী শিবিরে নিহত বেড়ে ১৯৫, হাসপাতাল যেন মর্গ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০২ নভেম্বর ২০২৩, ০১:০২ পিএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার জাবালিয়ায় শরণার্থী শিবিরে প্রথম এবং দ্বিতীয় ইসরায়েলি বোমা হামলার নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৫ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও ১২০ জন এবং অন্তত ৭৭৭ জন আহত হয়েছে। গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যম সর্বশেষ প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে। 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মঙ্গলবার ও বুধবার জাবালিয়ায় ইসরায়েলি হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার বলেছেন, এই ‘অসমানুপাতিক হামলা’ ‘যুদ্ধাপরাধ’ হতে পারে।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলো যেন মর্গে পরিণত হয়েছে। শত শত লাশ রাখা হচ্ছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের ইন্দোনেশিয়া হাসপাতলের অবস্থা আরও শোচনীয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হাসপাতালটি জ্বালানীর চরম ঘাটতির কারণে প্রধান জেনারেটর বন্ধ করার গুরুতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছোট জেনারেটরগুলো দিয়ে শুধু আইসিইউ চালু রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় জ্বালানি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। তখন হাসপাতালটি মর্গে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন: গাজা ইস্যু, বাইডেনকে ‘ভোট না দেওয়ার’ হুমকি মুসলিম আমেরিকানদের

ইসরায়েল দাবি, হামাস কমান্ডারকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালেও ইসরায়েলের বিমান হামলা জোরদার হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক জানিয়েছেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে রিপোর্ট করেছি, গাজা শহরের জেইতুন আশেপাশের একটি বাড়ি লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল এবং অনেক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পশ্চিমে আল-ফালুজা এলাকায়ও ইসরায়েলি বিমান হামলা হয়েছে যা দুই দিনে দুইবার আঘাত হেনেছে। গাজা শহরের তাল আল-হাওয়া এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলি বিমান হামলায় আঘাত হেনেছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আট হাজার ৭৮৬ জন।  গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিন হাজার ৬৪৮ জনই শিশু। এছাড়া নিহতদের মধ্যে দু’হাজার ২৯০ জন নারী আছে।

সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে এক হাজার ১২০জন শিশুসহ মোট দু’হাজার ৩০ জন। তারা সবাই নিখোঁজ রয়েছেন।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার ১৩০ প্যারামেডিক এবং মেডিকেল ক্রু নিহত হয়েছেন। সেখানে ২৮টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে এবং ২৭০টিরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিমান হামলা হয়।

ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১৪০০ এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল ৫৩টি গণহত্যা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় বিপর্যস্ত গাজা। সেখানে তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সর্বাত্মক অবরোধের কারণে খাবার, পানিসহ জরুরি পণ্যের মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় গর্ভবর্তী নারী, শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ লবণাক্ত ও দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে গাজার হাজার হাজার মানুষের নোনা ও দূষিত পানি পান করার বিষয়ে বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ এই খবর দিয়েছে।

হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর রিপোর্ট করেছে যে, গাজায় প্রায় ৫২ হাজার গর্ভবতী নারী এবং ছয় মাসের কম বয়সী ৩০ হাজারের বেশি শিশুকে লবণাক্ত বা দূষিত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন: গাজায় হামাসকে সরিয়ে অন্য কাউকে বসাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েল গাজার জনগণের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি সংকটের কারণে তৃষ্ণা নিবারণ ও কলেরাসহ সংক্রামক রোগের আশঙ্কা করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় হাজার হাজার ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশাল অবরুদ্ধ এই উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারের একটি মন্ত্রণালয় গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিকে মিশরের সিনাই উপদ্বীপে স্থানান্তর করার জন্য একটি যুদ্ধকালীন প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে। সেটি একটি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন এবং কায়রোর সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

ইসরায়েল গাজাকে মিশরের সমস্যায় পরিণত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর ১৯৪৮ এর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চায়। সেই সময় লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে ইসরায়েল। সেই একই পরিকল্পনা আবারও নিয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ রিপোর্ট সম্পর্কে বলেছেন, 'আমরা যেকোনো জায়গায়, যেকোনো রূপে হস্তান্তরের বিরুদ্ধে। আমরা এটিকে একটি লাল রেখা বলে মনে করি যা আমরা অতিক্রম করতে দেব না। ১৯৪৮ আর ঘটতে দেওয়া হবে না।'

একে