images

আন্তর্জাতিক

ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫৭ পিএম

বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত এ ঘূর্ণিঝড়টি ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার ভোর থেকে দুপুরের মধ্যে মেঘনা মোহনার কাছ দিয়ে বরিশাল, চট্টগ্রাম উপকূলে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করতে পারে।

হামুন নামটি ইরানের দেওয়া। যার অর্থ হচ্ছে সমতল ভূমি বা পৃথিবী।

এর মধ্যে পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরসমূহকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত এবং মোংলা সমুদ্র বন্দরকে পাঁচ নম্বর বিদপ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাচজার, লক্ষীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন গত ছয় ঘণ্টা ধরে ২৩ কিলোমিটার গতিতে এখন উত্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ছয় ঘণ্টায় এটি দুর্বল হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। বুধবার দুপুর নাগাদ সেটি বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও চট্টগ্রামের মধ্য এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।

উপকূলে পৌঁছানোর সময় সেটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বলেছে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি এখন বঙ্গোপসাগরের উত্তর পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর পূর্ব দিকে আরও ঘণীভূত হতে হতে অগ্রসর হচ্ছে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

অতি ভারি বৃষ্টির প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

এমন অবস্থায় উপকূলবর্তী জেলাগুলো থেকে মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেসব এলাকার মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্র অথবা কোনো নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ২৯৫ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রবাহে সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় আছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। পরে গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুনে পরিনত হয়।

ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর সেটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এটি বাংলাদেশে আঘাত করলে সেটি হবে চলতি বছরের দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা দুর্বল হয়ে বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছিল।

আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় অনেক সময় এর গতিবেগ ও গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে বা একই জায়গায় আবর্তন করতে পারে। সুতরাং উপকূল অতিক্রমের সময় এদিক ওদিক হতে পারে।

বঙ্গোপসাগরের বেশিরভাগ এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুই-তিন দিন চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকা সেইসঙ্গে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সব পর্যটককে সোমবার তিনটি জাহাজে করে টেকনাফে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে সেন্টমার্টিন অভিমুখে জাহাজসহ সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ থাকবে বলা জানিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী।

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সোমবার সকাল থেকেই উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা দেখা যায় যার ঘণীভূত হওয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশের মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ