আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৭ এএম
নিরবিচ্ছিন্নভাবে গাজার ভবনগুলোতে আঘাত হানছে ইসরায়েলি বোমা। চারদিকে শুধু হাহাকার আর আহাজারি। জ্বালানি না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল। মৃতদেহ রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত বডিব্যাগ। মিলছে না সামান্য কাফনের কাপড়ও। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ যে তা বর্ণনাতীত। গাজায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮২টিই শিশু। এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৮৭ জন হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৫টিই শিশু। নারী ১ হাজার ১১৯ জন, প্রবীণ ২১৭ জন। আহত হয়েছে ১৫ হাজার ২৭৩ জন।
এর আগে বেসরকারি দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। মানবিক সংকটের কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: গাজায় পিঁপড়ার মতো মানুষ মারছে ইসরায়েল, ২৪ ঘণ্টায় ৪০০ প্রাণহানি
৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল; কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এরই মধ্যে অনেক স্থানে ফুরিয়ে গেছে পানি, খাবার ও জ্বালানি। যার ফলে গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে।
‘প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্তে চারপাশে কেবল বোমার শব্দ।’ ইসরায়েলের বাছবিচারহীন হামলার ভয়াবহতা বোঝাতে এভাবেই কথা বলছিলেন ফিলিস্তিনের গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা গাদা ওউদা। ফ্রিল্যান্সার এই দোভাষী থাকতেন গাজা সিটিতে। সেখানকার বাসাটি ছেড়ে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরে এসেছেন তিনি। কিন্তু এখানেও ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ থেকে মুক্তি পাননি গাদা ওউদাসহ অন্য ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ১২টি হাসপাতাল ও ৩২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এসব চিকিৎসাকেন্দ্রে জ্বালানির তীব্র ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধসে যাওয়া শত শত ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে ৮৩০ শিশুসহ প্রায় দেড় হাজার মানুষ আটকা পড়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার বোমা হামলায় ৫৭ চিকিৎসক নিহত ও আরও ১০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী আহত হয়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৮২ শিশুসহ ৪৩৬ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজায় একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা এটি।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বোমা হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। উপত্যকাজুড়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য জরুরি রক্ত সহায়তা দরকার বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বাস্তব রূপ নেবে কি?
গতকাল সোমবার ত্রাণবাহী গাড়ির তৃতীয় বহর রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। মিশর ও ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ১২টির বেশি লরি গতকাল রাফাহ অতিক্রম করে। এর আগের দুই দিনে ত্রাণবাহী ৩৪টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। প্রাণে বাঁচার জন্য আরও ত্রাণ প্রয়োজন হলেও বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা বলছেন, ত্রাণ নয়, বরং নির্বিচার বোমাবর্ষণ বন্ধ চান তাঁরা।
আজিজা আবু মার বলেন, ‘যথেষ্ট প্রাণহানি হয়েছে। আর নয়। আমরা ত্রাণ চাই না। আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরতে চাই।...আমরা দিন কিংবা রাত কোনো সময়ই বোমাবর্ষণের জন্য ঘুমাতে পারছি না। যথেষ্ট হয়েছে, আর নিতে পারছি না। নিজেদের এখন আর মানুষও মনে হচ্ছে না।’
বিবিসির কাছে পাঠানো ভয়েস রেকর্ডিংয়ে ফ্রিল্যান্সার দোভাষী গাদা ওউদা বলেন, এই যুদ্ধ শুরুর প্রথমদিকে পাউরুটির জন্য দীর্ঘ সারি দেখা যেত। এখন সেই পাউরুটিও দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর যতটুকু পাউরুটি মেলে, তা বাসায় নিয়ে ফিরলে শুধু কষ্টই পেতে হয়। কারণ, পরিবারের সব সদস্যের জন্য তা যথেষ্ট হয় না।
একে