images

আন্তর্জাতিক

এখন ইসরায়েল কী করবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০৮ পিএম

হামাস শনিবার ইসরায়েলে একটি আকস্মিক আক্রমণ শুরু করেছে। যাতে তাদের কয়েক ডজন যোদ্ধা জড়িত। এসব ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজা উপত্যকার কাছে ইসরায়েলি শহরগুলোতে ভারী রকেট হামলার মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল।

এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সমুদ্র, স্থলপথ এবং প্যারাগ্লাইড করে ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে।

গাজা উপত্যকা থেকে এক আকস্মিক হামলা চালানোর পর, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েক ডজন বন্দুকধারী দক্ষিণ ইসরায়েলের ঢুকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলের শহর সদেরতের রাস্তায় ইসরায়েলিদেরকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করছে। ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলার পর সেখানকার অনেক ইসরায়েলি নাগরিক এখন প্রাণ ভয়ে পালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। 

হামাসের হামলায় ইসরায়েলে মৃত্যুর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। এবার ইহুদিদের ছুটির সময়ে এই অপ্রত্যাশিত হামলার ঘটনা ঘটে।

সাম্প্রতিক সময়ে গাজা উপত্যকায় উত্তেজনা ঘনীভূত হচ্ছিল। তবে সেখানকার ইসলামপন্থী শাসক দল হামাস অথবা ইসরায়েল কেউই সেই উত্তেজনা আর বাড়াতে চায়নি।

তবে, হামাস একটি গোছানো আর সমন্বিত অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছিল।

রোববার সকালে তারা জেরুজালেম এবং তেল আবিব পর্যন্ত একের পর এক রকেট নিক্ষেপ শুরু করে। একইসাথে ফিলিস্তিনি ওই যোদ্ধারা সমুদ্র, স্থল এবং আকাশপথে দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে।

তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইসরায়েলি শহর ও সেনা ঘাঁটিগুলো ঘেরাও করে আক্রমণ করে এবং বহু মানুষকে হত্যা করে।

সেইসঙ্গে তারা অজ্ঞাত সংখ্যক ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যদের গাজায় জিম্মি করে রাখার জন্য আটক করে নিয়ে যায়।

Screenshot_2023-10-08_190648
হামাস ১৯৮৮ সালে প্রথম ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় গঠিত হয়েছিল।

এসব ঘটনাপ্রবাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মূলধারার গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচারিত হয়েছে।

এদিকে হামাস চ্যানেলে শেয়ার করা ফুটেজে দেখা গেছে যে সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি এবং একটি সাঁজোয়া যানে থাকা সৈন্যদের বন্দী করছে এবং হত্যা করছে।

শুরুতে গাজায় উৎসব উদযাপনের বেশ কিছু ছবি দেখা যায়। সেখানে ছিনিয়ে নেওয়া কয়েকটি ইসরায়েলি সামরিক যান রাস্তা দিয়ে চালিয়ে নিতে দেখা যায়।

"আল-আকসায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিশোধ নিতে হামাস এখন পর্যন্ত যা যা করেছে তাতে আমি খুশি," গাজা শহরের এক যুবক বিবিসিকে এ কথা জানায়।

ইসরায়েল-অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসায় ইহুদিদের সাম্প্রতিক উৎসবের সময়ে ইহুদি দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এসব কথা বলেন।

আল-আকসা মসজিদ ইসলামের একটি পবিত্র স্থান এবং এটি ইহুদিদের জন্য সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান, যা টেম্পল মাউন্ট নামেও পরিচিত।

তবুও, এই যুবক ওই হামলার ঘটনায় তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, গাজার কাছাকাছি কোথাও হামলা চালাতে পারে এ নিয়ে সতর্ক বার্তা পাওয়ার পরে তিনি তার বাড়ি ছেড়ে যান।

হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তীতে কী ঘটবে তার জন্য আতঙ্কে থাকার কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, "আমরা উদ্বিগ্ন, ২০২১ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের হামলার কারণে শোরুক টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে আমার পরিবার একটি দোকান হারায়, এবার হামাস অনেক বড় আকারে হামলা চালিয়েছে, তাই ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া আরও বড় হবে।"

ইসরায়েলি বিমান হামলায় আহতদের ভিড়ে ফিলিস্তিনি হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে সয়লাব হয়ে গিয়েছে।

গাজা উপত্যকা – উপকূলীয় এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। হামাস পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার এক বছর পরে ২০০৭ সালে এই গাজা উপত্যকা দখল করে।

ইসরায়েল ও মিসর তখন তাদের ভূখণ্ডের অবরোধ আরও কঠোর করে তোলে।

এই অঞ্চলের প্রায় ৫০% মানুষ বেকারত্ব আর দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করছে।

সবশেষ ২০২১ সালে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত হয়। এরপর মিসর, কাতার এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত থামে। সেইসঙ্গে শান্ত রাখার বিনিময়ে অন্যান্য বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছিল।

গত মাসে যখন শত শত ফিলিস্তিনি পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া গণ-বিক্ষোভের স্মরণে কাঁটাতারের বেষ্টনীর পাশে বিক্ষোভে যোগ দিতে শুরু করে, তখন ধারণা করা হয়েছিল যে এটা হামাসের প্ররোচনায় হয়েছে।

এর উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের কাছ থেকে আরও সুবিধা আদায় করা এবং কাতারের থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়া।

ছোট ছোট সমাবেশগুলোকেও এখন ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। অনেকে সন্দেহ করছেন আক্রমণ শুরুর আগে ইসরায়েলের সুরক্ষা বেষ্টনী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্যই ওই সমাবেশ হয়েছে।

এই সর্বশেষ অভিযানের মাধ্যমে, হামাস আবারও একটি সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে নিজেদেরকে নতুনভাবে জাহির করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। যারা ইসরায়েলের ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আক্রমণের শুরুতে হামাসের কমান্ডার, মোহাম্মদ দেইফ ফিলিস্তিনি এবং অন্যান্য আরবদের "ইসরায়েলি দখলদারিত্ব দূর করার" অভিযানে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

এখন একটি বড় প্রশ্ন হল, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম বা এই অঞ্চলের অন্য জায়গায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা তার আহ্বানে সাড়া দেবে কিনা।

ইসরায়েল নিঃসন্দেহে একাধিক ফ্রন্ট থেকে যুদ্ধের আশঙ্কা করছে। কারণ, শক্তিশালী লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা করেছে।

437dade0-65b5-11ee-9266-0f1
গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। গাজায় তীব্র বিমান হামলার পাশাপাশি তারা সেখানে স্থল অভিযানের পরিকল্পনা করছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

তবে এই ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী যেসব ইসরায়েলি সৈন্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের আটক করেছে তাদেরকে তারা, মানব ঢাল বা দর কষাকষির অনুষঙ্গ হিসাবে ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ এর মুখপাত্র রিয়ার এডিএম ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, "আমরা বর্তমানে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে ব্যস্ত। আমরা ব্যাপকভাবে হামলা চালাচ্ছি, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার আশেপাশের এলাকার নজরে রাখছি। আমরা খুব তীক্ষ্ণ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করব।"

এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা সম্পন্ন না হলেও, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নিজেরাই যাচাই করতে শুরু করেছে যে কীভাবে তারা এই হামলার বিষয়ে আগে থেকে জানতে পারেনি এবং কেন তারা এই বিশাল হামলা প্রতিরোধ করতে পারেনি।

সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি

এমইউ