০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:১১ পিএম
ভারতের মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়ন শহরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গ্রেফতারকৃত ধর্ষকের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌরসভা প্রশাসন।
সরকারি জমিতে অবৈধভাবে দখল করে বাড়িটি তৈরি করার কারণেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন উজ্জয়ন পৌরসভার কমিশনার রোশান সিং।
আগামীকাল বুধবার ভাঙা হবে সেই ধর্ষক ভারত সোনির বাড়ি।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওটিতে দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার ১৫ বছর বয়সী অর্ধনগ্ন এক কিশোরী উজ্জয়ন শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভাদনগর নামে একটি এলাকার সড়কে অসহায় ভাবে ঘুরে ঘুরে লোকজনের সহযোগিতা চাইছে। মেয়েটিকে সে সময় পুরোপুরি বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল এবং তখনও তার দেহ থেকে রক্ত ঝরছিল। তার হাঁটার ধরন ও অঙ্গভঙ্গি বলে দিচ্ছিল—কোথায়, কার কাছে যাবে— চিন্তা-ভাবনা করার মতো অবস্থায় নেই সে।
আরও পড়ুন: মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বাবা গ্রেফতার
সৌভাগ্যক্রমে ভাদনগরের যে সড়ক ধরে সে হাঁটছিল, তার কাছেই ছিল একটি আশ্রম। ওই আশ্রমের এক সন্ন্যাসী মেয়েটিকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে তার অবস্থা অনুমান করে নেন। তারপর দ্রুত তাকে একটি তোয়ালেতে ঢেকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে পরীক্ষার পর তার অনুমান সত্য প্রমাণিত হয়। চিকিৎসকরা জানান, মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, তার আঘাত গুরুতর এবং প্রাথমিক পরীক্ষার পরপরই তাকে স্পেশালাইজড চিকিৎসাসেবার জন্য নিকটবর্তী ইন্দোর শহরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত কয়েকদিনের চিকিৎসায় মেয়েটিকে কয়েক ব্যাগ রক্তও নিতে হয়েছে। রক্ত দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তার চিকিৎসার ব্যায়ও নির্বাহ করছে পুলিশ।
এদিকে সড়কের প্রায় ৭০০ সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া মেয়েটির ইতঃস্তত ঘোরাঘুরির দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার তোলপাড় শুরু হয় অনলাইনে। লাখ লাখ নেটিজেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি এ ঘটনার জন্য দায়ী ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন।
নেটিজেনদের এই ক্ষোভের মধ্যেই ধর্ষককে ধরতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে পুলিশ। ২৭ সেপ্টেম্বর উজ্জয়ন থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ধর্ষক ও পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক ভরত সোনিকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে সে।
আরও পড়ুন: শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টা, স্কুলছাত্রের বিরুদ্ধে মামলা
প্রাথমিক স্বীকারোক্তির পর আলামত সংগ্রহের জন্য ভরতকে সাথে নিয়ে ঘটানস্থলে যায় পুলিশ। ভরতের নির্দেশিত স্থান থেকে ওই কিশোরীর পরিধেয় জামা-কাপড়ও উদ্ধার করা করা হয়। তবে এ সময় পুলিশের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দৌড় দিয়েছিল ভরত, তবে তাকে সহজেই পাকড়াও করা গেছে।
পালানোর সময় কংক্রিটের সড়কে পড়ে গিয়ে হাতে পায়ে আঘাত পাওয়ায় ভরত বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ভরতের বাবা এ ঘটনায় তার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও জানিয়েছেন, তারা ভরতের সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী নন।
এনডিটিভিকে ভরতের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে যা করেছে, তা রীতিমতো ন্যাক্কারজনক। তার মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন বা কোর্ট—কোথাও তার সঙ্গে আমি দেখা করতে যাব না।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ ঘটনার শিকার কিশোরীটি আমাদের মেয়ে। যতভাবে সম্ভব হয় আমরা তাকে দেখে রাখব, যত্ন করব। সে আমার মেয়ে, এই রাজ্যের মেয়ে। ধর্ষক যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পায়, সে চেষ্টাও আমরা করব।’
প্রসঙ্গত, ভারতের সবচেয়ে ধর্ষণপ্রবণ রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই বছরে মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র— দুই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র: এনডিটিভি