images

আন্তর্জাতিক

ভারতীয় স্বামীকে ফেরাতে উত্তর প্রদেশ পুলিশের কাছে বাংলাদেশের সোনিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৩৮ পিএম

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে একটি সংস্থার ঢাকা অফিসে ২০১৭ সাল থেকে চাকরী করতেন ভারতের নাগরিক সৌরভকান্ত তিওয়ারি। সেই সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক সোনিয়া আক্তারের সঙ্গে পরিচয়। ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল দু’জনের বিয়ে হয়। এরপর তিওয়ারি বাংলাদেশে ‘স্ত্রী ও সন্তান ফেলে’ ভারতে চলে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সোনিয়া আক্তার। তাই স্বামীকে ফিরেয়ে আনতে ভারতে গিয়ে স্থানীয় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। খবর বিবিসি।

সোনিয়া আক্তার ও সৌরভকান্ত তিওয়ারির মধ্যে এখন চলছে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ। তিওয়ারি অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় তাকে ‘জোর করে বিয়ে’ করেছেন সোনিয়া আক্তার। অন্যদিকে, সোনিয়া আক্তারের অভিযোগ, ভারতীয় নাগরিক তিওয়ারি ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় তাকে ‘মিথ্যা কথা বলে ও ফুঁসলিয়ে’ বিয়ে করেছেন।

পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে সোনিয়া আক্তার জানান, বছর তিনেক আগে সৌরভকান্ত তিওয়ারির সঙ্গে তার বিয়ে হয়, কিন্তু তিনি স্ত্রী সন্তানকে ঢাকাতেই ছেড়ে দিয়ে ভারতে চলে এসেছেন।

স্বামীকে ফিরিয়ে নিতে তিনি বৈধ পাসপোর্ট ভিসা নিয়েই ভারতে এসেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই সোনিয়া আক্তারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘উনি এখন রাজী হচ্ছেন না, তার বাড়িতেও আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন না। আমি একজন বাংলাদেশি। প্রায় তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমি শুধু সন্তানকে নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাই।’

নয়ডার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মধ্য নয়ডা) রাজীব দীক্ষিত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ওই বাংলাদেশি নাগরিক ‘মহিলা থানা’তে অভিযোগ করেছেন এখানকার সুরজপুর এলাকার বাসিন্দা সৌরভকান্ত তিওয়ারির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। তবে পরে তিনি তাকে ছেড়ে দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন। তিওয়ারির আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।’

দীক্ষিত জানান, ‘ওই বাংলাদেশি নারী তার এবং তার সন্তানের ভিসা, পাসপোর্টের তথ্য এবং বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় পত্রও পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন। নথিপত্র দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সহকারী কমিশনার (নারী ও শিশু সুরক্ষা)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

sonia
পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে সন্তানকে নিয়ে সোনিয়া আক্তার। ছবি: বিবিসি বাংলা

এদিকে, বাংলাদেশি নাগরিক সোনিয়া আক্তারকে বিয়ে করার আগে ভারতে তিওয়ারির স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তিওয়ারির স্ত্রী রচনা তিওয়ারি একজন সরকারী স্কুল শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘ওর সঙ্গে রোজই একাধিকবার কথা হত। আমি তো কিছুই বুঝতে পারিনি প্রথমে। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত, আবার খুব সকালে বেরিয়ে যেত। কিন্তু এর বাইরে কিছুই জানায়নি আমাকে।’

মিসেস তিওয়ারি আরও বলেন, ‘সম্ভবত করোনা, আমার শাশুড়ির মৃত্যু এসবের জন্য কিছু বলেনি। কিন্তু একটা সন্দেহ আমার হত, কারণ অত রাতে বাড়ি ফিরে কীভাবে নিজে রান্না করে খাবে, আবার সকালে বেরিয়ে যাচ্ছে। কখনও মনে হত যে ও যেন খোলাখুলি কথা বলতে পারছে না। তবে আমি যখন ঢাকায় গেলাম, তখন পুরো বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হয়।’

সব তথ্যপ্রমাণ আছে দাবি করে তিওয়ারি সোনিয়া আক্তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুললেও কোনো তথ্যপ্রমাণ দেননি।

ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় সোনিয়া আক্তারের সাথে পরিচয় হয় জানিয়ে তিওয়ারি বলেন, ‘আমার দফতরে উনি এসেছিলেন কিছু বিপণনের ব্যাপারে। আমাদের সংস্থার সেটির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তারপর থেকে তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন, ফোনে যোগাযোগ করতে থাকেন। মেসেজ এবং কল করতে থাকেন। তারপরে বাড়িতেও আসা-যাওয়া শুরু করে দেন। এরপরে রীতিমতো ভয় দেখিয়ে আমার ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে দেওয়া হয়।’

তিওয়ারি আরও বলেন, ‘সেটা ছিল ২০২১ সালের ১৪ এপ্রিল। বসুন্ধরা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়ায় নিয়েছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গেই থাকতেন তিনি।’

‘ভয় দেখিয়ে ধর্ম পরিবর্তন করা’ এবং ‘বিয়ে দেওয়ার’ পরে ঢাকায় পুলিশ বা ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কিনা এবং ভারতে তার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন কি—না জানতে চাইলে তিওয়ারি জানান, বিষয়টি জানাতে তিনি ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাকে একটি ফর্ম দিয়ে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছিল।


আরও পড়ুন
স্বামীর খোঁজে ভারতে এক বাংলাদেশি নারী

তিওয়ারি বলেন, ‘আমি সেই ফর্মটি পূরণ করার পরেও সোনিয়া আমার ফোন হ্যাক করে বিষয়টা জেনে ফেলেন। এদিকে করোনার জন্য সীমান্ত বন্ধ ছিল। আমি দেশেও আসতে পারিনি। আবার ভারতে আমার স্ত্রী, সন্তানের ভয়াবহ করোনা হয়েছিল, আমার মা করোনায় মারাও যান। তাই ভারতে আমার পরিবারকে বিষয়টা জানিয়ে তাদের মানসিক চাপ বাড়াতে চাইনি।’

সোনিয়া আক্তারের পরিবার তার কাছ থেকে আর্থিকভাবে অনেক সুবিধা নিয়েছেন এবং এখনো মোটা অংকের টাকা দাবি করছে অভিযোগ করে তিওয়ারি বলেন, ‘লাখ লাখ টাকা নিয়েছে ও (সোনিয়া আক্তার) এবং ওর পরিবার। এখনও এক কোটি টাকা দাবি করছে।’

এ সময় গত ৫ অগাস্ট তিওয়ারি ঢাকায় ডিভোর্সের মামলা দায়ের করেছেন বলে দাবি করেন।

sonia
সোনিয়া আক্তার ও সৌরভকান্ত তিওয়ারি (ডানে)। ছবি: ইন্ডিয়া টুডে

সোনিয়া আক্তারের আইনজীবী রেনু সিং এই দম্পতির শিশুসন্তানসহ বেশ কিছু ছবি এবং তিওয়ারির ধর্ম পরিবর্তন ও বিয়ের কাগজপত্র বিবিসিকে দিয়েছেন। সৌরভকান্ত তিওয়ারি ও তার স্ত্রীর তোলা প্রতিটি অভিযোগই খণ্ডন করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলার কাছে সোনিয়া আক্তারের আইনজীবী দাবি করেন যে, তিওয়ারি সব ব্যাপারে মিথ্যা দাবি করছেন।

রেনু সিং বলেন, ‘তিনি যে বলছেন জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়েছে, জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, আচ্ছা, তাহলে যে সন্তানটি হয়েছে তাদের, সেটাও কি জোর করেই করানো হয়েছে? জবরদস্তি করে কি এটা করা সম্ভব? আসলে তিওয়ারি প্রথম থেকেই মিথ্যা কথা বলে আসছেন। তিনি আমার মক্কেলকে বলেছিলেন যে ভারতে তার স্ত্রী মারা গেছেন। সব তথ্য গোপন করে তিনি সোনিয়াকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করেছেন, সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এখন তাদের ছেড়ে দিয়ে তিনি ভারতে চলে এসেছেন। তাদের দুজনের প্রচুর ছবি রয়েছে, যেগুলো দেখলে সবাই বুঝতে পারবে যে তিওয়ারি মুখে চোখে কোথাও কোনও জোর জবরদস্তি বা ভয়ের ছাপ নেই। সুখী দম্পতির ছবি ওগুলো।’

সম্পর্ক তৈরি বা বিয়ের আগে সোনিয়া আক্তার তিওয়ারির ব্যাপারে কোনো খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সংস্থায় নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে তো বিয়ের পরে সোনিয়ার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন তিওয়ারি। তাকে আসলে বিশ্বাস করেছিলেন সোনিয়া। ভারতে তার যে স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছে, সেটা সম্পূর্ণ চেপে গিয়েছিলেন। তিনি যখন ঢাকা থেকে ফোনে কথা বলতেন ভারতে তার স্ত্রীর সঙ্গে, তখন শুনে ফেলেন সোনিয়া। তারপরেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়।’

সোনিয়া আক্তার কোনো টাকা দাবি করেননি এবং অতীতেও তিওয়ারির কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেননি জানিয়ে আইনজীবী রেনু সিং বলেন, ‘স্বামী যাতে তাদের সন্তানের দায়িত্ব নেন, সেটাই দাবি তার।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমএইচটি