আবুল কাশেম
১০ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩২ এএম
পবিত্র মাস রমজান। মুসলিমদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বছরের সবচেয়ে সেরা সময় এটি। প্রতিটি দেশেই রমজান মাস নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি। তবে সবার উদ্দেশ্য এক তা হলো- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পবিত্র মাসের তাৎপর্য মেনে চলা। বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলিম ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রমজান মাস উপভোগ করছেন। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া। ইসলাম পালন ও সংস্কৃতি মেনে চলার ক্ষেত্রে মালয়েশীয়দের সুনাম রয়েছে। পবিত্র এই মাসে আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে রোজা পালন করে মালয়েশীয় মুসলিমরা।
ত্যাগের উদযাপন
৬০ শতাংশেরও বেশি মালয়েশিয়ানরা রমজান উদযাপন করে। তারা প্রিয়জনদের কবরে জড়ো হন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। তারা পূর্বপুরুষের ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি নিজেদের জীবনের সমৃদ্ধির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। রমজান মাসে প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেন। দানের পরিমাণ বেড়ে যায়।
রুমাহ টেরবুকা
অনেকে রুমাহ টেরবুকা বা 'ওপেন হাউস' এর আয়োজন করে। রমজানের তৃতীয় বা চতুর্থ দিন থেকে শুরু করে দশদিন ধরে তারা ঘরের দরজা সবার জন্য খুলে দেন। জাতি, জাতি বা ধর্ম নির্বিশেষে সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য বাড়ির দরজা খুলে দেয়া হয়। ভ্রমণকারীরা প্রায়ই স্থানীয়দের দ্বারা আমন্ত্রিত হন।

রাতভর থাকে খাবার
রাতের বাজারগুলো সূর্যাস্তের পর হোটেল-রেস্তোরাঁ রাতভর থাকা জমজমাট। সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার জনসাধারণকে সেহরিতে পরিবেশন করা হয়। জনপ্রিয় স্থানগুলোতে খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন অনেকে।
পারিবারিক মিলন
সারাবছর নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকে সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ সময়ই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না অনেকে। তবে রমজান আসলে বেশিরভাগ মানুষই চেষ্টা করেন পরিবারের সঙ্গে রমজান রোজা পালন করার। এটি একটি পারিবারিক মিলনমেলায় পরিণত হয়। রমজানের আগে থেকে শুরু হওয়া উৎসবের আমেজ ঈদের পর পর্যন্ত চলে।
রমজানজুড়ে বিশেষ আয়োজন
সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানকে ঘিরে মালয়েশিয়ায় থাকে বিশেষ আয়োজন। মাসজুড়েই কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মসজিদ। তারাবিসহ অন্য নামাজে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তারাবি শেষে বিশেষ শিক্ষামূলক আসর বসে মালয়েশিয়ার মসজিদগুলোতে। সেহরির পর ঘুমানোর অভ্যাস নেই মালয়েশিয়ার মুসলমানদের। সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থানীয় মসজিদে ধর্মীয় আলোচনা শুনে সূর্য উঠলে নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে পড়েন তারা।

বিনামূল্যে ইফতার
রমজান মাসে সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করেন দান করার। বেশিরভাগ মানুষ বিনামূল্যে ইফতার বিতরণ করেন। মসজিদে মসজিদে বিতরণ করা হয় স্বাস্থ্যকর ইফতার। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে বসে এই ফ্রি ইফতার করেন।
ইফতারিতে যা খান মালয়েশীয়রা
সারা বছর নানা খাবার খেলেও রমজানে সেই খাবারের কিছুটা ভিন্নতা চোখে পড়ে মালয়েশিয়ায়। ইফতারে তারা হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া জাতীয় নাশতা, সাদা ভাত, ফলমূল খান।
দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া অপরাধ
রোজা না রেখে দিনের বেলায় আহার করা অবস্থায় ধরা পড়লে দেশটির শরিয়াহ আদালতে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হয়। অনেক মুসলিম এই অপরাধে আটক হনে। অপরাধ অনুযায়ী শাস্তিও দেয়া হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ছাড়
রমজানে মালয়েশিয়ায় পণ্যের দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। খোলাবাজারে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হয় না। সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চেইন সুপারশপ, হাইপার মার্কেটগুলোতে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হয়। সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটগুলোতে রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে ডিসকাউন্ট স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়।

প্রবাসীদের রমজান
মালয়েশিয়ায় থাকলেও প্রবাসীদের মন পড়ে থাকে দেশে। পরিবারের কথা স্মরণ করেই তারা রমজান পালন করেন। কঠোর পরিশ্রমের পরও বেশিরভাগ প্রবাসী মুসলিমরা রোজা পালন করেন। বাংলাদেশি প্রবাসীরা মালয়েশিয়ান খাবারের চেয়ে দেশি খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন। ইফতারেও ছোলা মুড়িসহ তাদের খাবারে তাকে দেশি বিভিন্ন পদ।
সূত্র: ইউরো নিউজ, ফেসবুক ডটকম, আইটিসি ডট জিওভি ডট এমওয়াই।
একে