images

আন্তর্জাতিক

ন্যাটো সদস্যপদ প্রাপ্তির 'স্পষ্ট দিনক্ষণ' চায় ইউক্রেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১১ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম

ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়ে স্পষ্ট দিনক্ষণ' চান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের জন্য তার দেশকে কখন আমন্ত্রণ জানানো হবে - সে বিষয়ে কোনো রকম দিন তারিখ নির্ধারণ না করাটা ‘অযৌক্তিক’ বিলম্ব।

‘কার্যত মনে হচ্ছে ইউক্রেনকে জোটে আমন্ত্রণ জানানো বা সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রস্তুতিই নেই। ইউক্রেনকে কখন আমন্ত্রণ জানানো হবে, কখন ইউক্রেন ন্যাটো জোটের সদস্য হবে এসবের কোনো সময়সীমা নির্ধারণ না করাটা নজিরবিহীন এবং অযৌক্তিক’, টুইটারে কড়া ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি।

ন্যাটো ২০০৮ সালে বুখারেস্টের শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেনকে জোটের সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু কখন ও কীভাবে সেটা হবে সে বিষয়ে ন্যাটো কিছুই বলেনি।

জেলেনস্কি বলেন, “এখন ভিলনিয়াসে সম্মেলন শুরুর আগে আমরা এমন ইঙ্গিত পাচ্ছি যে ইউক্রেনের উপস্থিতি ছাড়াই তারা এ ব্যাপারে কিছু বয়ান নিয়ে আলোচনা করছে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে আরও বলেন, “এই বয়ান ন্যাটোর সদস্য হবার আমন্ত্রণ নিয়ে, ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে নয়। অনিশ্চয়তা একটা দুর্বলতার লক্ষণ। ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠকে আমি এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলব।” 

তবে জেলেনস্কি এটাও জানেন যে যুদ্ধ চলাকালীন ন্যাটোর ইউক্রেনকে সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারে না। কারণ সেটা করলে ন্যাটো জোট রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকিতে জড়িয়ে পড়বে। যেহেতু ন্যাটোর সনদের আর্টিকেল ফাইভে বিধান দেওয়া আছে যে জোটের কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে, সেই দেশকে প্রতিরক্ষা দিতে সব সদস্য দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।

লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে গুরুত্বপূর্ণ এক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে সমবেত হয়েছেন ন্যাটোর সামরিক জোটের নেতৃবৃন্দ। ধারণা করা হচ্ছে এই বৈঠকে ইউদক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ও পশ্চিমা এই জোটের ভবিষ্যত রূপরেখা নির্ধারিত হতে পারে।

জোটের ৩১টি সদস্য দেশ আশা করছে যে রুশ ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে সামরিক সহায়তা দিতে তারা যে রাজি - সেটা তারা রাশিয়াকে বোঝাতে পারবে।

শীর্ষ বৈঠকের আগে ন্যাটো জোটে সুইডেনের যোগদানের ব্যাপারে তুরস্ক তাদের আপত্তি তুলে নেওয়াটাকে জোট ইতিবাচক একটা অগ্রগতি হিসেবে দেখছে।

কিন্তু ভবিষ্যত সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে যে জোটের কিছু সদস্য দেশ রাশিয়ার দিক থেকে ভবিষ্যত আক্রমণ ঠেকাতে কিয়েভকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দেবে। তারা আরও অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দেবার বিষয়টি নিয়েও কথাবার্তা বলবে।

তবে সদস্যপদ প্রশ্নে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি চান যে যুদ্ধ শেষ হবার পর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ন্যাটো যেন ইউক্রেনকে জোটে যোগ দিতে দেয়। কবে এবং কীভাবে সেটা করা হবে তার স্পষ্ট পরিকল্পনা যেন তৈরি করা হয়।

তবে অনেক সদস্য দেশ এতটা এগোতে নারাজ- বিশেষ করে আমেরিকা আর জার্মানি। তাদের ভয় ইউক্রেনকে সদস্য করার জন্য এতটা নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি এখনই দিলে রাশিয়া যুদ্ধ আরও তীব্র ও দীর্ঘায়িত করার অজুহাত পাবে।

ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন চূড়ান্ত ইশতেহারের ভাষা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তিনি বলেছেন, “ইউক্রেন নিয়ে আমরা জোরালো একটা বার্তা দিতে পারব এবং আমরা যে একমত হবো সে বিষয়ে আমি স্থির নিশ্চিত।”

দু’দিনের এই বৈঠকে ন্যাটো নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যত রুশ হামলা প্রতিহত করতে এবং ইউক্রেনকে রক্ষা করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে একমত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারা ইউক্রেনের পূর্ব দিকে ন্যাটো বাহিনীকে আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করবে।

ন্যাটোর এই শীর্ষ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জোট যে সামরিক সহায়তা জোগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেটা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া।

ন্যাটো কর্মকর্তারা আশা করছেন এর ফলে রুশ নেতা পুতিন হয়ত তার ধ্যান-ধারণা বদলাতে শুরু করতে পারেন। হয়ত পশ্চিমা শক্তিকে কাবু করার ব্যাপারে তার মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ওই শীর্ষ বৈঠকে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আমেরিকান কর্মকর্তারা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন।

সূত্র : বিবিসি

এমইউ