images

অভিবাসন

মিজোরাম: ভারতের সবচেয়ে সুখী রাজ্য

এভিয়েশন ডেস্ক

০২ মে ২০২৩, ০৪:৩০ পিএম

মিজোরাম ভারতের অন্যতম রাজ্য। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এই রাজ্য ভ্রমণে যান। এর অবস্থান দেশটির উত্তর-পূর্বে। এটি সর্বদক্ষিণের স্থলবেষ্টিত রাজ্য এবং ভারতের সাত বোন রাজ্যের ত্রিপুরা, আসাম, মণিপুর এই তিনটি রাজ্যের সঙ্গে যার সীমানা রয়েছে।

মিজোরাম ভারতের সবচেয়ে সুখী রাজ্যের খেতাব জিতেছে। গুরুগ্রামের ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা এই খেতাব দিয়েছে। ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রাজেশ কে পিলানিয়া দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের যতগুলো রাজ্য আছে তার মধ্যে এই মিজোরামের মানুষ সবচেয়ে ‍সুখী।

mizoramমিজোরামের অবস্থান

উত্তর পূর্ব ভারতে সপ্ত সহোদরার একটি এই মিজোরাম রাজ্যটি। বাংলাদেশের গা ঘেঁষা এই রাজ্য এবং রাজ্যবাসীরা বিশেষ সাতে পাঁচে থাকেন না। অথচ এই সাতে পাঁচে না থাকা ছোট পাহাড়ি রাজ্যটিই আমাদের দেশের সবচেয়ে সুখি রাজ্য।

প্রতিবেদন অনুসারে, মিজোরামের সুখের সূচকটি ছয়টি প্যারামিটারের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কাজ-সম্পর্কিত সমস্যা, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক সমস্যা ও জনহিতৈষী, সুখ, ধর্ম এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কোভিড ১০ এর প্রভাব।

mizoramযে কারণে মিজোরাম সুখী রাজ্য

মিজোরামকে ভারতের সবচেয়ে সুখী রাজ্য বলা হচ্ছে সেগুলো-

শিক্ষার হার

মিজোরামের শিক্ষার হার শতভাগ।  যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও রাজ্যের শিক্ষার্থীরা দক্ষতা এবং ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ পান। ১০০% সাক্ষরতার হারে এই রাজ্য ভারতের দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।

অনগ্রসর থেকে অগ্রসর হওয়া

এক্ষেত্রে মিজোরামের লংটলাই জেলার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এই জেরা একসময় রাজ্যের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি উন্নয়নের একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে। এবং এটি 'কান সিকুল, কান হুয়ান' (আমার স্কুল, আমার খামার) ধারণার জন্য পরিচিত।

এই প্রোগ্রামটি চালু করেছিলেন আইএএস অফিসার শশাঙ্ক আলা। তিনি যখন জানতে পারেন যে, আসাম থেকে আমদানি করা শাকসবজি এবং ফল প্রায়ই পচে নষ্ট হয় যায়। সেই পচা সবজিই পৌঁছে যায় স্থানীয়দের কাছে। এবং শিশুরাও সেই নষ্ট খাবার খেতে বাধ্য হয় । যার ফলে রাজ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টিতে আক্রান্তের হার ছিল সর্বাধিক।

mizoramএই সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে, আইএএস শশাঙ্ক আলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে এই 'কান সিকুল, কান হুয়ান' (আমার স্কুল, আমার খামার) প্রোগ্রামটি শুরু করেন। শিশুদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে দিয়ে তাদের দিয়েই স্কুলে নিউট্রেশন গার্ডেন তৈরি করানো শুরু হয়। প্রতি সপ্তাহে কম করে এক ঘণ্টা এই কাজ করার দায়িত্ব থাকে ছাত্রদের উপর।

অনুপ্রাণিত যুব ও লিঙ্গ সমতা

মিজোরাম রাজ্যটি মিজোসের ভূমি নামেও পরিচিত। যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষার প্রতি অনুরাগের কারণেই এই রাজ্য সুখি রাজ্যের কমা লাভ করেছে বলে মনে করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিজোরামের যুব সম্প্রদায় স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে, অল্প বয়স থেকেই আর্থিকভাবে স্বাধীন থাকায় বিশ্বাসী। তাই ছোটো থেকেই এরা রোজগার শুরু করে এবং যেকোনো কাজকেই সমান মর্যাদা দেয়। রাজ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের ঘটনা খুবই কম। এক্ষেত্রে এই ছোট পাহাড়ি রাজ্য বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ।

mizoramসামাজিক চাপ

মিজোরামের যুব সম্প্রদায়ের উপর সামাজিক চাপ কম। এরা একটি বর্ণহীন সমাজে বসবাস করেন। এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সহ যেকোনো কাজের জন্য সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের চাপ তুলনামূলক কম।

এছাড়াও ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের আচরণ বন্ধুত্বপূর্ণ। ফলে তাদের সঙ্গে যে কোনও কিছু শেয়ার করতে ছাত্র ছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে সাহায্য করে।

আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য মিজোরাম

যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করতে চান, তারা একবার হলেও মিজোরাম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। রাজ্যের রাজধানী আইজল সবচেয়ে জমজমাট এলাকা। বেশিরভাগ পর্যটক এই আইজলেই ভিড় জমান। পাহাড়ের কোলে থাকা মিজোরাম রাজ্যের সৌন্দর্য যেন পরতে পরতে চলকে পড়ে। 

mizoramএখানকার নীল পাহাড় বা লুসাই পাহাড় যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীকে আকর্ষণ করার পক্ষে একাই একশো। এই পাহাড় থেকেই বয়ে এসেছে থেগাছড়া। 

এটি একটি স্থানীয় জলধারা। থেগাছড়া গিয়ে মিশেছে কর্ণফুলি নদীতে। আর এই থেগাছড়াই মিজোরাম-বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত একটি অখ্যাত কিংন্তু আকর্ষণীয় স্থান হল থেগা বাজার। থেগা জলধারার নাম অনুসারেই এই স্থানের এমন নামকরণ হয়েছে। এখানে চাকমা উপজাতির মানুষরা বসবাস করেন। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রেই এই জনজাতির মানুষরা বসবাস করেন। সৌহার্দ্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের এক অনবদ্য উদাহরণ এই জনবসতিগুলো।

এজেড