অভিবাসন ডেস্ক
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম
২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের আগেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়নীতি বাস্তবায়ন করতে চায় জার্মান সরকার৷ গত সপ্তাহে তথাকথিত ‘এয়ারপোর্ট প্রসিডিওর’ বা আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে ‘বিমানবন্দর পদ্ধতির’ অনুমোদন দিয়েছে দেশটি৷ খবর ইনফো মাইগ্রেন্টসের।
অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয়নীতি (সিইএএস)-এর কিছু অংশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই খসড়া আইনটির অনুমোদন দিয়েছে জার্মানির ফেডারেল মন্ত্রিসভা৷ এর মধ্যে একটি হলো, তথাকথিত সীমান্ত পদ্ধতিকে গতিশীল করা৷ এটি সিইএএস-এর একটি বিধান৷ এর মাধ্যমে সীমান্তে আশ্রয় আবেদন দ্রুত যাচাই-বাছাই করে ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো যাবে৷
এদিকে, শেনজেন অঞ্চলের বাইরের কোনো দেশ থেকে একজন অভিবাসীকে সরাসরি জার্মানি আসতে হলে মোটাদাগে আকাশপথই একমাত্র উপায়৷ নৌকা নিয়ে আসার সুযোগ থাকলেও সেটি খুব একটা ভাবাচ্ছে না সরকারকে৷ তাই বিমানবন্দরের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷
আরও পড়ুন: ইউরোপে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে
যেভাবে কার্যকর রয়েছে ব্যবস্থাটি
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোসহ আরো ১০টি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ এসব দেশ থেকে আসা অনথিভুক্ত আশ্রয়প্রার্থীরা বিমানবন্দরে আশ্রয় চাইলে, তা প্রক্রিয়াকরণে একটি ব্যবস্থা সচল রেখেছে জার্মান সরকার৷
আইনে বলা হয়েছে, (বিমানযোগে) যদিও তারা জার্মানির মাটিতে এসে পৌঁছেছেন, কিন্তু আইনিভাবে তারা জার্মানির বাইরে আছেন বলেই গণ্য করা হবে এবং তাদেরকে বিমানবন্দরের ট্রানজিট অঞ্চলেই থাকতে হবে৷
বর্তমান আইন অনুসারে, আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সময় একজন আশ্রয়প্রার্থীকে বিমানবন্দরের ট্রানজিট অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৯ দিন রাখা যাবে৷
নতুন আইনে যেসব পরিবর্তন আসছে
নতুন আইনে একটি দেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ ঘোষণার ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়নে পরিবর্তন আসছে৷
কোনো একটি দেশের নাগরিকেরা জার্মানিতে আশ্রয় চাওয়ার পর, তাদের আবেদন মঞ্জুরের হার যদি ২০ শতাংশের নিচে হয়, তাহলে সেই দেশটিকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করবে জার্মান সরকার৷ আইনের এই ধারার কারণে ভবিষ্যতে বেশিসংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো বা ডিপোর্ট করা সহজ হবে বলে মনে করছে সরকার৷
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক দপ্তর (বিএএমএফ)-এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর তুরস্ক থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন মঞ্জুরের হার ছিল ১০ শতাংশের কম৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, নতুন আইনটি কার্যকর হলে তুরস্ককে নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হবে৷ ফলে, দেশটিতে থেকে আগত আশ্রয়প্রার্থীদের বিমানবন্দর থেকে ডিপোর্ট করতে পারবে জার্মান সরকার৷
যেসব আশ্রয়প্রার্থী জার্মানির জাতীয় নিরাপত্তার বা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি বলে প্রতীয়মান হবে, তাদেরকেও বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো যাবে৷ অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর পদ্ধতি কার্যকর করা হবে না৷ কিন্তু তাদের কাউকে যদি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে হয়, সেক্ষেত্রে পদ্ধতি কার্যকরে কোনো বাধা থাকবে না৷ অভিভাবকের সঙ্গে আসা শিশুদের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে এই পদ্ধতিটি৷
এই আইন কার্যকর হলে, ১৯ দিনের বদলে আশ্রয়প্রার্থীদের আট থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত বিমানবন্দরের ট্রানজিট অঞ্চলে রাখা যাবে৷ যদি আশ্রয় আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আরো ১২ সপ্তাহ তাদের সেখানে রাখা যাবে৷
ইউরোপকে দেয়া হচ্ছে বার্তা
আকাশপথে খুবই কমসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী জার্মানিতে আশ্রয় চাইতে আসেন৷ বিএএমএফ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ৪০২৷ ২০২২ সংখ্যাটি ছিল ৩৪৭৷
গ্রিস, ইটালি, স্পেন কিংবা হাঙ্গেরির মতো দেশেই সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী বা আশ্রয়প্রার্থীরা ভিড় করেন৷ ফলে বিমানবন্দর পদ্ধতি কার্যকর জার্মানির জন্য তুলনামূলক সহজ৷ কিন্তু জার্মান সরকার বেশ গর্বের সঙ্গেই জানিয়েছে, ইউরোপে জার্মানিই প্রথম দেশ, যারা সিইএএস বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন আশ্রয়নীতির দ্রুত বাস্তবায়ন চান জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার৷ তার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা ইউরোপকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছি যে, জার্মানি দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে নতুন আইন বাস্তবায়ন করছে৷’’
মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ
অভিন্ন ইউরোপীয় আশ্রয়নীতির বিধানগুলোর মধ্যে সীমান্ত পদ্ধতি নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে৷
জার্মানির বাম দলের আইনপ্রণেতা ক্লারা ব্যুঙ্গার বলেছেন, নতুন আইনের কারণে যে কোনো দেশকে তথাকথিত ‘নিরাপদ দেশ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া যাবে৷ আইনের খসড়ায় যেসব জায়গায় পার্লামেন্ট পরিবর্তন করতে বলেছে সরকার সেগুলো এড়িয়ে যাচ্ছে বলেও উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্যুঙ্গার৷
নতুন সীমান্ত পদ্ধতি অনুসারে শিশু এবং দুর্বল মানুষসহ আশ্রয়প্রার্থীদের ছয় মাস পর্যন্ত আটক রাখার বিধান রয়েছে৷ আর তা নিয়েই চিন্তিত মানবাধিকারকর্মীরা৷
এক বিবৃতিতে জার্মান ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষণা সহকারী আনা জুয়েরহফ বলেছেন, এটি জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস
এজেড