images

অভিবাসন

বুলগেরিয়ায় সহিংসতার শিকার অভিবাসন প্রত্যাশীরা

অভিবাসন ডেস্ক

০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

পার্কে রাত কাটানো, কারাগারে দুর্ব্যবহার, সীমান্তে মারধর আর গুলি- শরণার্থী ও অভিবাসীদের উপর বুলগেরিয়ার এমন আচরণের পরও দেশটিতে অভিবাসীদের ডিপোর্ট করতে চায় জার্মানি৷ এমন সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন অধিকারকর্মীরা৷ খবর ইনফো মাইগ্রেন্টসের।

সীমান্তে আশ্রয় চাইতে আসা আশ্রয়প্রার্থী এবং কারাগারে আটক অভিবাসীদের উপর বুলগেরিয়া প্রশাসন গুরুতর সহিংস আচরণ করে বলে অভিযোগ এনে নিন্দাও জানিয়েছে শরণার্থী অধিকারকর্মীরা৷

দেশটির সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির হারমানলির অবস্থাও বিপর্যয়কর বলে জানিয়ছেন নুরেমবের্গ-ভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশন ম্যাটিও – কির্শে উন্ড অ্যাসিলের চেয়ারম্যান স্টেফান রাইশেল৷ ৩১ অক্টোবর জার্মান সংবাদপত্র টাৎস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন৷

সেপ্টেম্বরে শরণার্থী পরিস্থিতি বুঝতে বুলগেরিয়া সফর করেন রাইশেল৷ ওই দলে আরো ছিলেন অধিকারকর্মী এবং গির্জায় আশ্রয় সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ দল৷ তিনি দাবি করেন, সীমান্তে সুরক্ষা চাইতে আসা মানুষের পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়, তাদের মারধর করা হয়, ছিনতাই করা হয় এবং কখনও কখনও গুলিও করা হয়৷

টাৎস সংবাদপত্রকে তিনি আরো বলেন, বুলগেরিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ খুবই সীমিত এবং মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়৷ অনেকের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই৷ ফলে, অন্য দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের উপর নির্ভর করে তাদের চলতে হয়৷

পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির মতো দেশগুলোর পরিস্থিতিও অনেকটা একইরকম বলেও উল্লেখ করেছেন রাইশেল৷ তবে, রোমানিয়ার মতো কিছু দেশের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেও জানান তিনি৷

আরও পড়ুন: ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া পর্তুগালে থাকতে পারবে না বিদেশি কর্মীরা

জার্মানির সোলিঙ্গেন শহরে সাম্প্রতিক ছুরি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও গত বছর বুলগেরিয়ায় ডিপোর্ট করার কথা ছিল৷ ওই ঘটনার পর থেকে ডিপোর্ট জোরদার করতে বিরোধী দলগুলো সরকারকে চাপ দিয়ে আসছে৷ 

ডাবলিন প্রবিধান থাকলেও মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ডিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করতে পারে দেশগুলো৷ ফলে, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বুলগেরিয়া ডিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাইশেল৷

পুশব্যাক এবং সীমান্ত সহিংসতা

বুলগেরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে অসংখ্য পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেছে৷ বুলগেরিয়ান সীমান্তরক্ষীদের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা৷ এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে অভিবাসীদের তুরস্কের দিকে সাঁতার কাটতে বাধ্য করা, তাদের পোশাক খুলে নেওয়া এবং পুলিশের প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে তাদের আক্রমণ করা৷

এ বছরের জুলাইয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্সের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে এই হিংসাত্মক পুশব্যাকের বিষয়গুলো উঠে এসেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকরা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করার পর এসব ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এনজিওগুলো৷ বলকান ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং নেটওয়ার্কও নিশ্চিত করেছে, এসব ঘটনা সম্পর্কে ফ্রন্টেক্স অবগত৷

gul

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ডাচ সদস্য টিনেকে স্ট্রিক এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘বুলগেরিয়ান সীমান্ত পুলিশ এমন একটি প্যাটার্ন অনুসরণ করে, যা আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাহ্যিক সীমান্তে দেখতে পাই৷ এসব ক্ষেত্রে ফ্রন্টেক্স অফিসারদের বিশেষ বিশেষ এলাকায় দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয় না এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়ে মুখ না খুলতে চাপ দেয়া হয়৷ ফলে, ওই দেশটির সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের পুশব্যাক করতে পারে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে কিছুই জানে না এমন একটা ভান করতে পারে৷’

বুলগেরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ১০ হাজার ৪১টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ বুলগেরিয়া সীমান্তে পুশব্যাকের ঘটনার সত্যতার ইঙ্গিত এই প্রতিবেদনেই পাওয়া যায়৷

মানবেতর জীবনযাপন

২০২৩ সালে বুলগেরিয়ায় ৪৮ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থী (৩৩ হাজার ৭০৩ জনের মধ্যে ১৬ হাজার ২১১ জন) তাদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময় পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ আগের বছরের তুলনায় সংখ্যাটি অন্তত দুই শতাংশ বেশি৷ এর প্রধান কারণ হলো, আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘ অপেক্ষা, কিছু দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন খারিজ করে দেয়া এবং আশ্রয় শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন৷

রাইশেল বলেন, যেসব আশ্রয়প্রার্থীকে জার্মানি থেকে ডাবলিন প্রবিধানের অধীনে বুলগেরিয়ায় পাঠানো হয় এবং যাদের সুরক্ষার আবেদন বুলগেরিয়াতে আগেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের সরাসরি একটি বিশেষ আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়৷

আশ্রয়প্রার্থীদের জাতীয়তার বিচারে তাদের দ্রুত ডিপোর্ট করা হয় বা দেড় বছর পর্যন্ত কারাগারে রাখা হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে কারাবাসের মেয়াদ দীর্ঘও হতে পারে৷ কারাগারে আশ্রয়প্রার্থীরা গুরুতর নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে৷

অন্যদিকে, নিবন্ধিত শরণার্থীদের বুলগেরিয়ায় ফেরত পাঠানোর পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়৷ আয়ের কোনো সুযোগ না থাকায় তাদের অনেকে রাস্তায় কিংবা পার্কে রাত কাটান৷

জার্মানির ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজির সমালোচনাও করেছেন রাইশেল৷ কারণ সংস্থাটি দাবি করেছে বুলগেরিয়ার সবকিছুই ‘স্বাভাবিক’ পুলিশি কাঠামোতে রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘জার্মানি যদি মনে করে যে এসব ঠিক আছে, তাহলে বুলগেরিয়ার কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই মনে করবে সেগুলো আরে বেশি ঠিক আছে৷’

আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব বুলগেরিয়া হলেও ডাবলিন প্রবিধানভুক্ত আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জার্মানির আরো চিন্তা-ভাবনা করা উচিত বলে মনে করেন রাইশেল৷

তথ্য সূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস

এজেড