অভিবাসন ডেস্ক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম
উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপ অভিমুখী হচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষার্থীরা। বছরের পর বছর ধরে পেশাদার জনশক্তি তৈরি করে আসছে বাস্তবধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিনিধি শেনজেনভুক্ত দেশগুলো। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আজকের প্রবন্ধ। চলুন, পোল্যান্ডে অধ্যয়ন খরচ ও স্কলারশিপসহ ক্যারিয়ার গঠনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোল্যান্ডে কেন পড়তে যাবেন
উচ্চশিক্ষা লাভে এই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সদস্য রাষ্ট্রটিকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে প্রধান কারণ হতে পারে এর আর্থ-সামাজিক অবস্থা। মাত্র ২৯ দশমিক ১ অপরাধ সূচক নিয়ে শীর্ষ সহিংসতাহীন দেশগুলোর তালিকায় পোল্যান্ড রয়েছে ২৮ নম্বরে। পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর সারিতে
৩২ নম্বর অবস্থানে থাকা এই দেশটির বৈশ্বিক শান্তি সূচক ১ দশমিক ৬৭৮। সর্বসাকূল্যে, ১৪৯ দশমিক ৩ জীবনমান সূচক নিয়ে উন্নত জীবনধারণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে পোলিশ জাতির অবস্থান ৩৯ নম্বর।
এরপরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় কারণটি হচ্ছে স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষা। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার অধ্যয়ন ফি নেওয়া হয়। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৪ থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৭১ টাকার (১ মার্কিন ডলার = ১১৯ দশমিক ৪৮ বাংলাদেশি টাকা) সমান। শুধু তাই নয়, পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের সমস্ত বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাও করে।
কম ফি নেওয়ার পরেও শিক্ষার মানের সঙ্গে এতোটুকু আপোস করা হয়নি। বিশ্ব কিউএস র্যাংকিং-এ এর বিদ্যাপীঠগুলোর অবস্থান তারই প্রমাণ। পোল্যান্ডের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারস-এর র্যাংক ২৬২’তে। জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ারস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি রয়েছে যথাক্রমে ৩০৪ এবং ৫৭১ নং অবস্থানে।
পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের নাম বোলোগ্না, যা গোটা ইউরোপে মেনে চলা হয়। এর ফলে এখান থেকে অর্জিত ডিগ্রিগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায়। শুধু ইউরোপেই নয়, এর বাইরে বিশ্বের যে কোনো চাকরির বাজারে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে পোলিশ ডিগ্রির।
পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের পূর্বশর্ত
আন্ডারগ্রাজুয়েশনে ভর্তির জন্য একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ১২ বছর অতিবাহিত করতে হবে। এখানে প্রতিটি চূড়ান্ত পরিক্ষায় সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ নাম্বার পেতে হবে। জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) পদ্ধতিতে প্রোগ্রাম অনুসারে ন্যূনতম গ্রেডের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিপিএ ২ দশমিক ৫ চাওয়া হয়ে থাকে।
ইংরেজি ভাষা দক্ষতার জন্য আইইএলটিএস-এ প্রতিটি ব্যান্ডে ৫ দশমিক ৫ সহ সামগ্রিক স্কোর ৬ থাকতে হয়।
মাস্টার্স-এর জন্য ৩ থেকে ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে, যেখানে কোনো পরীক্ষায় ৬০ শতাংশের নিচে পাওয়া যাবে না। আইইটিএলএস-এ প্রতিটি ব্যান্ড স্কোর অবশ্যই ৬ দশমিক ৫ বা তার ওপরে থাকতে হবে।
এছাড়া ডিজাইন, মেডিকেল, বা প্রকৌশলের মত প্রোগ্রামগুলোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যোগ্যতা পূরণের প্রয়োজন হতে পারে।
ইউরোপে বহুল সমাদৃত ১০টি পোলিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
- ইউনিভার্সিটি অফ ওয়ারস
- জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি
- ওয়ারস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
- অ্যাডাম মিকিউইচ ইউনিভার্সিটি পোজনান
- পোজনান ইউনিভার্সিটি অফ লাইফ সায়েন্সেস
- জিডান্স্ক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি
- এজিএইচ (একাডেমিয়া গরনিক্জো-হাটনিক্জা) ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
- নিকোলাস কোপার্নিকাস ইউনিভার্সিটি
- ইউনিভার্সিটি অফ রোক্ল
- রোক্ল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি |
পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো:
মেডিসিন, মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স, আইন, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, ইঞ্জিনিয়ারিং, কলা, নকশা, এবং স্থাপত্য।
পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুটি ভিন্ন মৌসুমে পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদন শুরু করতে পারেন। একটি সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে, অন্যটি ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে। প্রতিটি মৌসুমেরই রয়েছে নির্দিষ্ট সময়সীমা, যা বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে ভর্তির আবেদন গ্রহণ করে থাকে। পোর্টালের নিবন্ধনের পর আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার মাঝেই ভর্তির প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমূহ আপলোড করতে হয়। সব তথ্য দেওয়া শেষে সাবমিট করার পর সম্পূর্ণ আবেদনপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হয়। অতঃপর তাতে আবেদনকারীকে স্বহস্তে সই করে দূতাবাসের জমাদানের জন্য অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে প্রস্তুত রাখতে হয়।
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ইউনিভার্সিটির পোর্টালে জমা করা আবেদনপত্র
- নোটারাইজড মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট
- স্নাতক প্রোগ্রাম ডিপ্লোমা
- ৪টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- প্রার্থীর পাসপোর্ট
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ; মিডিয়াম অফ ইন্স্ট্রাকশন (এমওআই) ইংরেজি হলে আলাদা প্রমাণের প্রয়োজন নেই
মেডিকেল সার্টিফিকেট
ভর্তি ফি প্রদানের রশিদ; সাধারণত ৪৪ থেকে ১৮৪ ইউরো বা ৫ হাজার ৮২৬ থেকে ২৪ হাজার ৩৬২ টাকার (১ ইউরো = ১৩২ দশমিক ৪০ টাকা) মধ্যে হয়ে থাকে|
একটি একাডেমিক রেফারেন্স এবং একটি ব্যক্তিগত রেফারেন্স লেটার
- মোটিভেশন লেটার
- পোর্টফোলিও বা সিভি
- পোল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
যারা দীর্ঘমেয়াদী পড়াশোনার জন্য পোল্যান্ড যেতে ইচ্ছুক, তাদেরকে টাইপ-ডি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসায় এক বা একাধিক ভিজিটে ন্যূনতম ৯০ দিন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত পোল্যান্ডে থাকার অনুমতি লাভ করা যায়।
এই স্টাডি ভিসার জন্য ই-কনস্যুলেটের (https://secure.e-konsulat.gov.pl/)-এর ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এটি মূলত ভিসাপ্রাপ্তির জন্য দূতাবাসে সাক্ষাতকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পদ্ধতি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত হওয়ার পর প্রার্থীকে ভিএফএস ওয়েবসাইটে (https://www.vfsglobal.com/one-pager/poland/india/english/) যেতে হবে। এটিই হলো পোল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার অনলাইন আবেদন। ভিসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকেই স্ক্যান করে রাখতে হবে যেন অনলাই ফর্ম পূরণের সময় সেগুলো আপলোড করা যায়। অতঃপর আবেদন সাবমিট করে ডাউনলোডের পর তার প্রিন্ট নিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট স্থানে সই করে আবেদনপত্রটি ভিসার অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে একত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই সই অবশ্যই পাসপোর্টের সইয়ের অবিকল হতে হবে। এমনকি ভর্তির আবেদনপত্রের সইও একই হতে হবে।
পোল্যান্ডে ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- স্বহস্তে সই করা পূর্ণ ভিসা আবেদনপত্র
- পোল্যান্ডে পৌঁছার দিন থেকে কমপক্ষে ৩ মাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকা পাসপোর্ট; এতে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকতে হবে
- সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা ৩৫ x ৪৫ মিলিমিটারের রঙিন দুটি ছবি, যেগুলো অবশ্যই ৬ মাসের বেশি পুরনো হওয়া যাবে না
- সংযুক্ত নথির তালিকাসহ ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সময়কাল উল্লেখপূর্বক একটি কভার লেটার
- ট্রিপের রিজার্ভেশন টিকেট
- পোলিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার
- পোল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যয়ন ফি প্রদানের প্রমাণ; অধ্যয়ন বিনামূল্যে হলে তার প্রমাণপত্র
- পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রত্যয়ন নথি (মূলকপিগুলো অনুলিপির সঙ্গে রাখতে হবে); এখানে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক বা ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট দেখাতে হবে
- ট্রাভেল মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স; সর্বনিম্ন কভারেজ ৩০ হাজার ইউরো বা ৩৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা |
পোল্যান্ডে যে কোনো ধরনের আবাসন প্রাপ্তির প্রমাণ
আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: মাসিক জীবনযাত্রার খরচ বাবদ ৭৭৬ পোলিশ জ্লতি বা পিএলএন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৯২০ টাকা (১ পোলিশ জ্লতি = ৩০ দশমিক ৮২ টাকা)। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য ভ্রমণ খরচ বাবদ কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ জ্লতি (৭৭ হাজার ৬১ টাকা) দেখাতে হবে।
এখানে যে সংযুক্তিগুলো দরকার হবে, সেগুলো হলো:
- ট্রাভেলার চেক
- ব্যাংক কর্তৃক জারি করা ক্রেডিট কার্ডের লিমিটের প্রমাণপত্র
- ব্যাংকের অর্থের প্রাপ্যতার শংসাপত্র
এই বিবৃতিগুলো অবশ্যই কোনো পোলিশ ব্যাংককর্তৃক ইস্যূকৃত হতে হবে।
- স্পন্সরপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তার প্রমাণপত্র; এক্ষেত্রে সমস্ত ভ্রমণ, বসবাস এবং বাসস্থানের ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে উল্লেখপূর্বক নোটারাইজ্ড স্বীকৃতি পত্র
আরও পড়ুন: জাপানে উচ্চশিক্ষা শেষে সরকারি চাকরির সুযোগ
ভিসা আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক নিবন্ধন
ই-কনস্যুলেটরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করার পর প্রার্থীকে একটি ই-মেইল পাঠানো হবে, যেখানে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ উল্লেখ থাকবে। এই তারিখে দরকারী কাগজপত্র নিয়ে প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হতে হবে ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (ভিএসি)।
বাংলাদেশে পোল্যান্ডের কোনো ধরনের ভিসার প্রক্রিয়াকরণ করা হয় না। তাই প্রার্থীদের আবেদন জমা ও সাক্ষাতকারের জন্য যেতে হবে ভারতে অবস্থিত পোলিশ দূতাবাসে।
দূতাবাসের ঠিকানা: ৫০-এম, শান্তিপথ, চাণক্যপুরী, নতুন দিল্লি, দিল্লি-১১০০২১, ভারত ভিএসি’তে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণের পাশাপাশি আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া এবং ছবি তোলার মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে প্রার্থীর সাক্ষাতকার নেওয়া হবে, যেখানে মূলত তার পোল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে কথা হবে।
যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিএসি কর্মকর্তা প্রার্থীকে আইসিআর বা ইনভয়েস কাম রিসিপ্ট প্রদান করবেন। পরবর্তীতে ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট নিতে আসার সময় এই রশিদটি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সময় এবং ভিসা প্রাপ্তি
পোল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে সাধারণত ১৫ কার্যদিবস লাগে। তবে নথিগুলো বিশদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সময় ৩০ দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।
পোল্যান্ড থেকে দূতাবাসে ভিসার সিদ্ধান্ত চলে আসলে ভিএসি-এর পক্ষ থেকে ই-মেইল এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে প্রার্থীকে জানানো হবে।
অবশ্য ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মাঝের এই সময়টিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভিসা সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এই সুবিধা পেতে যেতে হবে- https://www.vfsvisaonline.com/Global-Passporttracking/Track/Index? -লিঙ্কে। এখানে প্রার্থীর শেষ নাম এবং ভিএসসি থেকে পাওয়া সেই আইসিআর-এ থাকা রেফারেন্স নাম্বার ব্যবহার করতে হবে।
ভিসা নিশ্চিতকরণ ই-মেইল প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আইসিআর সহ দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে ভিসা সংগ্রহ করা যাবে। প্রার্থী সশরীরে উপস্থিত হতে অপারগ হলে তার পরিবর্তে অন্য কেউ এসেও ভিসা সংগ্রহ করতে পারে। তবে এর জন্য তাকে অবশ্যই মূল আইসিআর নিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত নথি হিসেবে যুক্ত করতে হবে মূল আবেদনকারীর অনুমোদন পত্র। এখানে আবেদনকারীর উপস্থিত হতে না পারার কারণ দর্শাতে হবে। একই সঙ্গে তার পক্ষ থেকে অনুমোদনকৃত ব্যক্তিকে ভিসা সংগ্রহ করার ক্ষমতা অর্পনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণের আনুষঙ্গিক খরচ
পোলিশ স্টাডি ভিসার ফি ১২ হাজার ৪০৮ রুপি, যার মূল্যমান ১৭ হাজার ৬৭২ টাকার (১ রুপি = ১ দশমিক ৪২ টাকা) সমান। এটি অনলাইন পেমেন্ট, ক্যাশ বা কার্ডে যেকোনো ভাবেই পরিশোধ করা যায়। দূতাবাসে সাক্ষাতকার দেওয়ার সময়ও ভিএফএস-এর সার্ভিস চার্জসহ মোট ফি পরিশোধ করা যেতে পারে।
ভিসা ফি সহ প্রতি ভিসা আবেদনের জন্য ৯৩৬ রুপি (১ হাজার ৩৩৩ টাকা) পরিষেবা চার্জ রাখা হয়। এটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করার সময়েই অনলাইনে পরিশোধ করা উচিত।
পোল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পোল্যান্ডে স্নাতক অধ্যয়নের জন্য গড়ে প্রতি বছর ২ হাজার ইউরো (২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা) খরচ করতে হয়। স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি পোস্ট-ডক্টরাল ইন্টার্নশিপের জন্য গড়পড়তায় খরচ পড়ে ফি বছর ৩ হাজার ইউরো বা ৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা। ভোকেশনাল স্টাডিজেরও বার্ষিক খরচ কমবেশি প্রায় ৩ হাজার ইউরো (৩ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা)।
মেডিসিন এবং এমবিএ-এর মতো প্রোগ্রামের অধ্যয়ন ফি সবচেয়ে বেশি; বার্ষিক প্রায় ৮ থেকে ১২ হাজার ইউরো। এর মূল্যমান প্রায় ১০ লাখ ৫৯ হাজার ২০০ থেকে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকার সমতূল্য।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের বড় অংশটি চলে যায় আবাসনে। ডরমিটরি বা অ্যাপার্টমেন্টে শেয়ারকৃত বসবাসের জন্য প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১৪০ ইউরো ভাড়া গুনতে হয়। এই খরচ প্রায় ১১ হাজার ৯১৬ থেকে ১৮ হাজার ৫৩৬ টাকার সমান। চলাফেরায় গণপরিবহনে খরচ হয় মাসিক ১১ থেকে ১৩ ইউরো বা ১ হাজার ৪৫৭ থেকে ১ হাজার ৭২২ টাকা। ইউটিলিটি বিলের জন্য বাজেট রাখতে হয় ১৭ থেকে ২২ ইউরো (২ হাজার ২৫১ থেকে ২ হাজার ৯১৩ টাকা)। খাবার এবং মুদি কিনতে ব্যয় হয় ৪৫ থেকে ৭০ ইউরো বা ৫ হাজার ৯৫৮ থেকে ৯ হাজার ২৬৮।
অবশ্য এই বাজেট সব শহরের জন্য সমান নয়। ওয়ারস’তে মাসিক খরচ সর্বাপেক্ষা বেশি; প্রায় ৫১৫ থেকে ৬৩০ ইউরো (৬৮ হাজার ১৮৬ থেকে ৮৩ হাজার ৪১২ টাকা)।
অন্যদিকে, মাসে সর্বনিম্ন প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ইউরোই (২৬ হাজার ৪৮০ থেকে ৩৯ হাজার ৭২০ টাকা) যথেষ্ট পোজনান শহরের ক্ষেত্রে।
পোল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা
ইউনেস্কো পোল্যান্ড ফেলোশিপ প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অধ্যয়নের জন্য সম্পূর্ণ অর্থ বহন করে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য প্রদানকৃত এই বৃত্তিতে অতিরিক্ত মাসিক ভাতার পরিমাণ ২ হাজার ২০০ জ্লতি বা ৬৭ হাজার ৮১৪ টাকা।
পোল্যান্ড গভর্নমেন্ট লুকাসিউইচ-এ সম্পূর্ণ অধ্যয়ন ফি-এর পাশাপাশি পাওয়া যায় ১ হাজার ৭০০ জ্লতি (৫২ হাজার ৪০১ টাকা) মাসিক উপবৃত্তি। এছাড়াও থাকে যাতায়াত এবং গবেষণা প্রতিটির জন্য ৫০০ জ্লতি (১৫ হাজার ৪১২ টাকা)।
ওয়ারস ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল স্কলারশিপ পুরো পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করে। প্রতি সেমিস্টারে প্রদানকৃত ভিসেগ্রাদ পোল্যান্ড স্কলারশিপ-এর মূল্যমান প্রায় ১৯ হাজার ৩০০ জ্লতি (৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৭ টাকা)।
উইমেন ইন জেন এম ক্লাউসম্যান বিজনেস, বিআর্ট প্রিসেট একাডেমিক, এবং সার্ভিসস্কেপ নামক স্কলারশিপগুলোতে রয়েছে আংশিক তহবিল পাওয়ার সুযোগ।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মত পোল্যান্ডেও প্রায় সব পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য পূর্ণ তহবিল দেওয়া হয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালীন সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারে। এখানে প্রতি ঘন্টায় আয় হয় গড়ে ১৭ থেকে ২৭ জ্লতি (৫২৪ থেকে ৮৩৩ টাকা)। ছুটির মৌসুমে পূর্ণকালীন কাজের স্বাধীনতা থাকে। সব মিলিয়ে মাসিক উপার্জন দাড়ায় ৩ হাজার জ্লতি (৯২ হাজার ৪৭৩ টাকা)-এরও বেশি। এই আয় জীবনযাত্রায় আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি অধ্যয়ন শেষে ফুল-টাইম চাকরীর জন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
রিটেইল, হস্পিটালিটি, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রশাসনিক কাজসহ বিভিন্ন সেক্টরে খণ্ডকালীন কর্মীর চাহিদা থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার সেন্টারেও কর্মী প্রয়োজন হয়, যেগুলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ক্লাব কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এই কাজগুলোতে ক্যাম্পাসের বাইরের চাকরিগুলোর থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকে এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্প শ্রমসাধ্য হয়।
পড়াশোনার পর ওয়ার্ক-পার্মিট ও পার্মানেন্ট রেসিডেন্স লাভ
পড়াশোনা শেষ করার পর বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের পোল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য প্রথম যে কাজ করতে হয়, তা হচ্ছে অস্থায়ী বসবাসের অনুমতি নেওয়া। এই পার্মিটের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৩ বছর। অস্থায়ী বসবাসের এই অনুমতি লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে একটি চাকরি যোগার করা। নিয়োগকর্তার নিকট থেকে অফার লেটার দিয়ে এই পারমিটের জন্য আবেদন করা যায়। নিয়োগকর্তা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা বিশ্ববিদ্যালয় যে কোনোটি হতে পারে।
৩ বছর পর চাকরিরত ব্যক্তি ভিসা নবায়নের আবেদন করতে পারেন। এবার নিয়োগকর্তা তার কর্মচারীর হয়ে ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন করেন। কাজের জন্য উপযুক্ত পোলিশ প্রার্থী না থাকলে মূলত একটি ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়। কর্মচারী যথেষ্ট দক্ষ হয়ে গেলে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে এই সুবিধা আশা করা যায়। নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি অপেক্ষা বেশি সময় ধরে কাজ করলে কর্মচারী ব্লু কার্ডধারী হন। এই কার্ডের বৈধতা থাকে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত।
পোল্যান্ডে একটানা ৫ বছর বসবাস করার পর একজন ব্যক্তি স্থায়ী বসবাসের জন্য অনুমতি বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্স (পিআর) আবেদনের জন্য মনোনীত হন। পিআর-এর মাধ্যমে তিনি ৬ মাসের মধ্যে ৯০ দিনের জন্য যে কোনো শেনজেনভূক্ত দেশ ভ্রমণ করার অনুমতি অর্জন করেন।
পোল্যান্ডে স্নাতকদের গড় প্রারম্ভিক বেতন বার্ষিক ৭ হাজার ১২ থেকে ২৫ হাজার ৯৬৭ ইউরোর মধ্যে। বাংলাদেশে এই বেতন প্রায় ৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৯ থেকে ৩৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১ টাকা। ফ্রেশ স্নাতকদের জন্য চাহিদা সম্পন্ন চাকরিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিনিয়র ডেটা সায়েন্টিস্ট, মানব সম্পদ (এইচআর) বিশেষজ্ঞ, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা ডেভেলপার কিংবা প্রোগ্রামার, এবং অ্যাকাউন্টেন্ট।
পরিশেষে যা জানা প্রয়োজন
শেনজেনভূক্ত যে রাষ্ট্রগুলো সর্বাপেক্ষা কম খরচে উচ্চমানের শিক্ষা নিশ্চিত করছে, সেগুলোর মধ্যে পোল্যান্ড অন্যতম। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনামূলক সহজ ভর্তি পদ্ধতি, স্কলারশিপ, এবং ওয়ার্ক পারমিট গন্তব্য হিসেবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে ইউরোপীয় দেশটিকে। সঙ্গত কারণেই পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ব্রত নিয়ে প্রতি বছর দেশ ছাড়ছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। ভর্তির চূড়ান্ত অফার লেটার পাওয়াটা মেধাবীদের জন্য সহজসাধ্য হলেও স্টাডি ভিসা হাতে পাওয়া বেশ শ্রমসাধ্য হতে পারে। তাই আবেদন থেকে শুরু করে দূতাবাসে সাক্ষাৎকার পর্যন্ত প্রতিটি কার্যক্রমে সময়সীমাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা জরুরি।
সূত্র: ইউএনবি
এজেড