images

অভিবাসন

ফ্রান্সে অবৈধ অভিবাসী ধরতে অভিযান চলছে

অভিবাসন ডেস্ক

১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫১ এএম

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ফ্রান্সের দ্বীপ মায়োতে অপারেশন ‘উয়ামবুশু’ শেষ হওয়ার এক বছর পর নতুন অভিযান শুরু করেছে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। ‘মায়োত প্লাস নেট’ নামের এই অভিযানে অপরাধ, অস্বাস্থ্যকর আবাসন এবং অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে কার্যক্রম চালানো হবে। খবর ইনফো মাইগ্র্যান্টসের।

ওভারসিজ টেরিটোরি বিষয়ক ফ্রান্সের মন্ত্রী মারি গেভনো মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) এই অভিযানের ঘোষণা দেন। মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা ফ্রান্সের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও অঞ্চলের দেখভাল করে এই মন্ত্রণালয়। 

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে দ্বীপের মুদজু এবন দৌজানি এলাকায় থাকা অননুমোদিত বসতি ভেঙ্গে দেয়ার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন৷ এর আওতায় ২০০টিরও বেশি অস্থায়ী ঝুপড়ি ঘর এরইমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শেনজেন জোনে প্রবেশ কঠিন হলো

সাঁজোয়া যান এবং ফরাসি পুলিশের জন্দারমেরি শাখার গাড়িবহরসহ অভিযানে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে৷ বেশ কয়েকজনকে দ্বীপের দেম্বেনি এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।

মন্ত্রী মা্রি গেভনো বলেন, ‘জন্দারমেরি পুলিশ অস্বাস্থ্যকর আবাসন, গ্যাং এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে (মঙ্গলবার) ভোর থেকে অভিযান শুরু করেছে৷’

এটি ১০১তম ফরাসি ডিপার্টমেন্টের অনিয়মিত অভিবাসনবিরোধী দ্বিতীয় অভিযান।

france2

তিনি আরো বলেন, ‘মায়োতে শৃঙ্খলা ফেরানোর লক্ষ্যে ৪০০ পুলিশ এবং জন্দারমেরি সদস্যদের জড়ো করা হয়েছে। এক হাজার ৭০০ জন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ‘মায়োত প্লাস নেট’-এ অংশগ্রহণ করবেন৷ এই অভিযান ১১ সপ্তাহ ধরে অর্থাৎ, চলতি বছরের জুনের শেষ পর্যন্ত চলবে৷’

নতুন এই অভিযানের উদ্দেশ্য আগের ‘উয়ামবুশু’ অভিযানের মতোই। তবে এবার ৬০ জন গ্যাং নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে৷ সরকার এক হাজার ৩০০টি অননুমোদিত বসতি উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেছে৷ 

মারি গেভনো বলেন, দ্বীপের ঝোপঝাড় ব্যবহার করে এই অবৈধ বাসস্থানগুলো তৈরী করা হয়েছে৷ উয়ামবুশু ১ অভিযানের চেয়েও এই অভিযানে দ্বিগুণ সাফল্য অর্জিত হবে৷

এই উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে কর্তৃপক্ষ সমুদ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে, যাতে করে মোজাম্বিক চ্যানেল থেকে আফ্রিকান অভিবাসীরা দ্বীপে প্রবেশ করতে না পারে৷ ২০২৩ সালে মায়োতে আফ্রিকান আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল৷

তিন লাখ ১০ হাজার বাসিন্দার দ্বীপটি ফ্রান্সে দরিদ্রতম ডিপার্টমেন্টগুলোর একটি৷ দ্বীপে অবস্থানরত অভিবাসীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ পাশ্ববর্তী কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ ও অন্যান্য আফ্রিকান অঞ্চল থেকে আগত। অভিবাসীদের বড় একটি অংশ মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কমোরোস থেকে মাছ ধরার নৌকায় চড়ে দ্বীপটিতে আসেন৷ পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অস্বাস্থ্যকর ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে বসবাস করেন৷

দ্বীপের নাগরিকত্ব আইন সংষ্কারের ঘোষণা 

চলতি বছরের শুরু থেকে মায়োতে গুরুতর সামাজিক সংকট ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে৷ সমস্যা সমাধানে দ্বীপটির নাগরিকত্ব সম্পর্কিত ‘ভূমি আইন’ সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানা।

দ্বীপের অভিবাসন সংকট এবং সামাজিক নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের অভিবাসন আইনে থাকা ভূমি আইন মায়োত দ্বীপের জন্য সংষ্কার করা হবে৷’

এজন্য সাংবিধানিক সংশোধনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷

frce

ভূমি আইন অনুযায়ী, ফ্রান্সে বসবাসরত দুইজন বিদেশি পিতামাতার শিশু ১৮ বছর বয়স পূরণ হলে কিছু শর্ত পূরণ করে খুব সহজেই ফ্রান্সের নাগরিকত্ব লাভ করতে পারেন৷ 

ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে এটি নিয়ে বড় জটিলতা তৈরি না হলেও সরকারের ধারণা মায়োত দ্বীপে আসা অনিয়মিত অভিবাসীরা এই আইনের কারণে দ্বীপের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন৷ 

এছাড়া শিশুরা নাগরিকত্ব পেলে অনিয়মিত অভিবাসী বাবা-মারাও বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারেন৷

জেরাল্ড দারমানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা একটি বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। এটি হলো মায়োতের ভূমি আইনের সমাপ্তি৷ এর জন্য একটি সাংবিধানিক সংশোধনী আনা হবে৷ ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এটির জন্য পদক্ষেপ নেবেন৷

বিচারমন্ত্রী এরিক দুপো মরেত্তি বলেন, ‘আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে।’

এটির লক্ষ্য হবে পিতা ও মাতার মধ্যে যেকোন একজন ফরাসি হলে শুধুমাত্র তাদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফরাসি জাতীয়তা সীমাবদ্ধ রাখা৷ তবে সরকারের এই ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সেটি শুধুমাত্র মায়োত দ্বীপের জন্য প্রযোজ্য হবে। 

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২২ সালে মায়োতে জন্মগ্রহণকারী ৪৪ শতাংশ শিশুর বাবা-মায়ের উভয়ই বিদেশি নাগরিক৷ এছাড়া ৩৮ শতাংশ শিশুর বাবা-মায়ের যেকোন একজন ফরাসি নাগরিক৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, সরকারের ঘোষিত নতুন এই ব্যবস্থা এবং সবশেষ অভিবাসন আইনের পারিবারিক পুনর্মিলন ধারা বাস্তবায়িত হলে মায়োতে ইস্যুকৃত রেসিডেন্স পারমিটের সংখ্যা ৯০ শতাংশ হ্রাস পাবে৷

তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্র্যান্টস

এজেড