অভিবাসন ডেস্ক
১০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
আশ্রয়প্রার্থীদের জোটের বাইরের কোনো দেশে রেখে আশ্রয়প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টিকে স্বাগত জানাতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ আলবেনিয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের রেখে তাদের আশ্রয় আবদেন নিষ্পত্তি করতে একটি চুক্তি করেছে ইটালি। এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়প্রক্রিয়ায় তৃতীয় দেশকে ব্যবহারের ধারণাটি আরো স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর ইনফো মাইগ্র্যান্টসের।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসন ও আশ্রয় আইনের সংস্কারেও ‘নিরাপদ’ তৃতীয় দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর একটি বিধান রয়েছে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বুধবার এ সংক্রান্ত ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
ইউরোপীয় আইনে আশ্রয়প্রার্থী এবং তাদের যে দেশে পাঠানো হবে তার মধ্যে একটি ‘সংযোগ’ দেখানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ কিন্তু যুক্তরাজ্যের নেয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশটিতে অনিয়মিত পথে আসা সব আশ্রয়প্রার্থীদের আফ্রিকান দেশ রুয়ান্ডায় স্থায়ীভাবে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এর বাইরে ওই দেশটির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো সম্পর্ক ছিল না৷ ফলে, ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত যুক্তরাজ্যের পরিকল্পনাটিকে বেআইনি বলে জানিয়ে দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের অভিবাসন ব্লিশেষক আলবার্টো হর্স্ট নিডহার্ট বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে না, কারণ এটি ‘বর্তমান আইনি কাঠামোর সঙ্গে যেমন সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তেমনি ভোটের জন্য দেয়া সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ীও নয়৷’
তবে, যুক্তরাজ্যের নেয়া পরিকল্পনার প্রতি নিজেদের আগ্রহ দেখিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া ও ডেনমার্ক৷
আগামী জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে অতি-ডানদের উত্থানের সঙ্গে ইউরোপজুড়ে আশ্রয় আবেদনের বেড়ে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো এ ধরনের প্রস্তাবগুলোর প্রতি রক্ষণশীলদের আরো উসকে দিচ্ছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় গ্রুপ রক্ষণশীল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টিও (ইপিপি) এমন পথেই হাঁটছেন৷ এই দলটিতেই আছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ের লেয়েন৷ এবারও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন৷ আর নির্বাচনি ইশতেহারে তৃতীয় দেশের ধারণাটিকে সমর্থন দিয়েছেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইপিপির পক্ষে থাকা জার্মানির খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের সদস্য ইয়েনস স্পান বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কমসংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
তিনি আরো বলেন, কোনো নিরাপদ তৃতীয় দেশে যদি আশ্রয়প্রার্থীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পাঠানো যায় এবং তা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা আগ্রহ হারাবেন এবং কম আসবেন৷ সম্ভাব্য দেশ হিসাবে রুয়ান্ডা, জর্জিয়া বা মলদোভার দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির ডানপন্থি সরকার আলবেনিয়ার সঙ্গে নভেম্বরে একটি চুক্তি করে। এই চুক্তির আওতায় ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আলবেনিয়ায় রেখে তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে৷ যারা আশ্রয়ের মর্যাদা পাবেন তাদের ইটালি আনা হবে, অন্যথায় আলবেনিয়া থেকে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানো হবে৷ আলেবনিয়ার আশ্রয়প্রার্থীদের রাখা হলেও সেখানেও ইটালীয় আইন প্রয়োগ করা হবে।
ফন ডেয়ার লেয়েন এই চুক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এটি আউট অব বক্স চিন্তার একটি উদাহরণ৷’
ইউরোপীয় কমিশনের আশ্রয় ও অভিবাসন নীতির সাবেক কর্মকর্তা এবং এগমন্ট ইনস্টিটিউটের ইউরোপ বিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক জঁ-লুই দ ব্রউয়ার মনে করেন, ইটালি-আলবেনিয়ার চুক্তিটি অন্য দেশগুলোতের মধ্যে প্রভাব রাখতে পারে এবং এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিবাসী এবং আশ্রয় চুক্তির কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি তথাকথিত ‘নিরাপদ’ দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানোর তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন অধিকার সংস্থাগুলো৷

অক্সফাম কর্মকর্তা স্টেফানি পোপ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন পদক্ষেপ নেয়া মানে হলো, তারা নিজেদের দায়িত্ব অন্যদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়৷ তারা কিন্তু বিশ্বের বাস্তুচ্যুতদের একটি অংশকেই দেখাশোনা করে৷’
এমন প্রস্তাব বাইরের দেশগুলোতে ‘প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মানকে কমিয়ে দেবে’ বলেও মনে করেন এই অধিকার কর্মী৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বামপন্থি ফরাসি আইনপ্রণেতা ড্যামিয়েন কেরেমে বলেন, প্রস্তাবিত পরিবর্তনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে টিউনিশিয়ায় থেকে আসা সাব-সাহারান অভিবাসীদের সেই দেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেবে, যেখানে ‘বর্ণবাদ বেড়েই চলেছে৷’
সূত্র: ইনফো মাইগ্র্যান্টস
এজেড