নিজস্ব প্রতিবেদক
০৬ জুন ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের জন্য একটি অংশগ্রহণ ও অর্ন্তভূক্তিমূলক পন্থা হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ শিরোনামে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ায় দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (৬ জুন) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অডিটরিয়ামে ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচকরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাটি ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা; সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের জন্য একটি অংশগ্রহণ ও অর্ন্তভূক্তিমূলক পন্থা’ শিরোনামে এবং ‘দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘে প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এই রেজুল্যুশনের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন। জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে এই রেজুল্যুশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রেজুল্যুশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই রেজুল্যুশনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি সদস্য দেশগুলোতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে কাজ করবে। এ সময় তিনি এটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং দাতাদের যথাযথ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, দেশের সব মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে এই অনন্য কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। যা সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার সুফল সরবরাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত সারাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশিদারিত্বে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অদম্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি দেশ এই প্রস্তাবে কো-স্পনসর করেছে। মিশনগুলো গত কয়েক বছর ধরে স্বাস্থ্য কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় এই রেজুল্যুশনটি এই বছরের শুরুর দিকে মিশন সদস্য রাষ্ট্রের বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বিগত চার মাস নিবিড় আলোচনা ও নেগোশিয়েশনের পরে আজ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদন ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য উদ্ভাবন বলে ভাবা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সালে চালু হয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে প্রতিহিংসার শিকার হয় কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মসূচি। বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েক কোটি মানুষকে সেবাদানের বৈপ্লবিক এ ব্যবস্থা। ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়ে চালু হয় কমিউনিটি ক্লিনিক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন গত ১৬ মে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে কমিউনিটি ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ‘কমিউনিটি ভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: সর্বজনীন স্বাস্থ্যপরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামে এটি গৃহীত হয়েছে। এ প্রস্তাবটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বাধিনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত প্রস্তাবে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ উদ্যোগকে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রস্তাবটি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এ প্রস্তাবে কো-স্পন্সর ছিল। জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এ প্রস্তাব অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিককে স্বাস্থ্যসেবার বৈশ্বিক মডেল হিসেবে স্বীকৃতিদানের ঘটনায় আরও অনেক দেশ এ সৃজনশীল পদ্ধতি প্রবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
এমএইচ/এইউ