জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০১ জুন ২০২৩, ০৫:৩৫ পিএম
চিকিৎসাকে আরও সাশ্রয়ী করতে বিদ্যমান শুল্ক মওকুফের তালিকায় অ্যান্টি-ক্যানসার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিস ওষুধের আরও কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত করতে প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে স্বাস্থ্য খাতে সাধারণ মানুষ সুফল পাবেন বলে মনে করেন মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের প্রধান প্রধান ওষুধের কাঁচামাল যদি শূন্য শুল্ক দিয়ে আমদানি করা যায়, তাহলে এসব ওষুধের দাম অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে। ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ওষুধের জন্য শতাধিক ধরনের কাঁচামাল আমদানি করে বাংলাদেশ। এরমধ্যে প্রায় ৭৬টি কাঁচামাল ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা আরও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার উদ্দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের আরও ১০০টি কাঁচামাল বিদ্যমান ক্যানসারের ওষুধের কাঁচামাল সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।
অর্থমন্ত্রী ইন্ট্রাভেনাস ক্যানুলা তৈরির জন্য সিলিকন টিউব আমদানিতেও শুল্ক রেয়াত সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। ডায়াবেটিক ম্যানেজমেন্টে অতীব প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার্য তিনটি কাঁচামাল বিদ্যমান
বাজেটে তরল নিকোটিন এবং ট্রান্সডার্মাল নিকোটিন প্যাচের ওপর ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি ই-সিগারেট, ভেপ এবং এ জাতীয় ডিভাইসগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিধায় এই পণ্যটির পার্টসের শুল্কহার বৃদ্ধিপূর্বক মূল পণ্যের সমান অর্থাৎ ২১২.২০% করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানিয়েছিলেন, অ্যান্টি-ক্যানসার এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিস ওষুধের কাঁচামাল আমদানিকে শুল্ক মওকুফের আওতায় আনা হবে খুবই ভালো একটি পদক্ষেপ। ব্যয়বহুল ওষুধের কারণে ক্যানসারের উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি হয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির তথ্যমতে, দেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছে। গ্লোবোকান ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১.৫৬ লাখ নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয় এবং ক্যানসারে মৃত্যু হয় ১.০৮ লাখ জনের।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সোসাইটির তথ্যমতে, ২০২১ সালে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩.১ মিলিয়ন। ২০১৯ সালে বিএমসি হেলথ সার্ভিসেস রিসার্চের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিজন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর গড় বার্ষিক চিকিৎসা খরচ ছিল ৯৩,৮১৯.৯৫ টাকা। এরমধ্যে ওষুধের খরচ প্রত্যক্ষ খরচের ৬০.৭ শতাংশ এবং হাসপাতালে ভর্তির খরচ ২৭.৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই)-র মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, বেশ কিছু কোম্পানি দেশে অনকোলজিক্যাল ড্রাগ উৎপাদন করছে, ফলে এসব ওষুধ কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। কাঁচামালে শুল্ক কমালে ওষুধের দামে এর প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।
ডব্লিউএইচ/জেবি