images

হেলথ

তীব্র গরমে খাবার ও পানি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

২০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫১ এএম

গ্রীষ্মকাল শুরুর আগেই শুরু হয়েছে তাপদাহ। প্রায় প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দেশে নানাবিধ গরমজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হিটস্ট্রোক বাড়ার পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ নানা রোগ বাড়ছে। এ অবস্থায় গরমে রোগ থেকে বাঁচতে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে রোগ থেকে বেঁচে থাকতে খাবার গ্রহণ ও পানি পানে সতর্ক করেছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত ঘাম হিটস্ট্রোকের কারণ হতে পারে। ফলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির উৎস যেন নিরাপদ হয়। একইসঙ্গে গরমে খাবার গ্রহণেও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের।

তাপদাহ ও রোগ পরিস্থিতি

দেশে টানা কয়েকদিন ধরে চলছে তাপদাহ। এ সময় ঢাকা ভেঙেছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ৫৮ বছরের রেকর্ড। চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪২ ডিগ্রি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত না হওয়ার বিপত্তিতে সাধারণ মানুষ। এতে সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথা ব্যথা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এমনকি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

Temperatureগরমে সবচেয়ে বেশি যে রোগের প্রকোপ দেখা দেয় তা হলো ডায়রিয়া। প্রতিবছরই এ সময় দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে ডায়রিয়া চিকিৎসায় প্রধান প্রতিষ্ঠান রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) ও কলেরা হাসপাতাল। এতে ভর্তি রোগীর বিষয়ে আইসিডিডিআরবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১০ এপ্রিল ৫৩৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। ১১ এপ্রিল ৪৮৪ জন, ১২ এপ্রিল ৪৯১ জন, ১৩ এপ্রিল ৫১৫ জন, ১৪ এপ্রিল ৫৩০ জন, ১৫ এপ্রিল ৫৬৫ জন, ১৬ এপ্রিল ৫২২ জন, ১৭ এপ্রিল ৫৩৪ ও মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৮০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ রোগীকে দুই-তিন ঘণ্টার জন্য ভর্তি রেখে রিলিজ দেওয়া হয়। যাদের জটিলতা দেখা যায় তাদের প্রয়োজন বুঝে একাধিক দিন ভর্তি রাখা হয়।

যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, এই তীব্র তাপদাহে বয়স্ক থেকে বাচ্চা প্রত্যেকেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, হার্ট, কিডনি বা লিভারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত আছেন। অযথা অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া যাবে না। যতটা সম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। যাদের জীবিকার তাগিদে বের হতেই হবে এবং কায়িক পরিশ্রম করেন তাদের বেশি সতর্ক হতে হবে। তারা ছাতা নিয়ে বের হবেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘণ্টাখানেক পরপর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। সবাইকে ঢিলেঢালা কাপড় পড়তে হবে।

Temperatureসতর্ক করে তিনি বলেন, গরমকালে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বাইরে উল্টাপাল্টা কিছু খাওয়া যাবে না। বিশেষ করে রাস্তার পাশে যেসব পানীয় ও শরবত পাওয়া যায়। কারণ সেখানে ব্যবহৃত পানি ও বরফের উৎস কতটা নিরাপদ তা বলা কঠিন। অনেকে ঢাকনা ব্যবহার করে না, ফলে মাছি ও রাস্তার ধুলোবালি সেই পানিতে মিশে।

রোজাদারদের প্রতি পরামর্শ দিনে তিনি বলেন, রোজা রাখা ব্যক্তিদের সন্ধ্যা থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি খেতে হবে। তবে একসাথে না, অল্প অল্প করে। পাশাপাশি ডাব, ওরস্যালাইন, গ্লুকোজ পানি খেতে হবে। সাধারণ পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে পানির সাথে লবণ দেওয়া যেতে পারে। কেননা ঘামের সাথে সাথে অনেক লবণ বের হয়ে যায়। লবণ পানি খেলে সেই ঘাটতি পূরণ হবে।

বেড়েছে স্যালাইনের চাহিদা

গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়েছে স্যালাইনের চাহিদা। রাজধানীর একাধিক ফার্মেসি ও মুদি দোকানে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। রমজানের কারণে তা বহুগুণে বেড়েছে। তবে স্যালাইন খাওয়াটা কতটা জরুরি তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

Temperatureএ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, স্যালাইন এত বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাসার নিরাপদ পানি ও প্রয়োজনে লবণ মিশ্রিত পানিই যথেষ্ট। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। মাঝেমধ্যে দুই একটা খেলে ক্ষতি নেই। তবে হুমড়ি খেয়ে স্যালাইন খাওয়া যাবে না। এতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ঝুঁকি রয়েছে।

এমএইচ/জেএম