images

হেলথ

‘মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ায় শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৩৫ পিএম

দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষাখাতে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে স্বীকার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক সংকট দেখা দিয়েছে। এটি সহসায় পূরণ করা সম্ভব না হলেও শিক্ষক ঘাটতি পূরণে কাজ চলমান আছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও নাম-ডাকের প্রয়োজন। কিন্তু তা এখনও কেন নেই সেটি বিবেচনা করতে হবে। স্বাধীনতার পর দেশে মাত্র ৮টি মেডিকেল কলেজ ছিল এখন সরকারি-বেসরকারি মিলে মেডিকেল সংখ্যা ১১০টি। যত দ্রুত মেডিকেল কলেজ হয় তত দ্রুত শিক্ষক তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে সাময়িক শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে এই ঘাটতি দূর করতে মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যখাতে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, 'স্বাস্থ্যখাতে আমাদের শক্তিশালী অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। একসময় দেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, এখন ৪টি আছে। 

দেশে ৪২৯টি নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। আমাদের ম্যাটস, আইএইচটি রয়েছে। এ সময়ে আমাদের জনসংখ্যাও বেড়েছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় প্রতিষ্ঠান অধিক সংখ্যক বেড়েছে। মেডিকেল শিক্ষার জন্য অবকাঠামো দরকার। তা হয়েছে, ধাপে ধাপে সকল দিকেই আগাবে।'

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'দেশ স্বাস্থ্যখাতে এগিয়ে গেছে, এর প্রমাণ আমাদের মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার অনেক কমেছে। একসময় আমাদের ভ্যাকসিনেশনের হার শতকরা ২০ শতাংশও ছিল না। এখন তা শতভাগ হয়েছে। ভ্যাকসিনেশনে সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আমরা টিকাদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছি। অনেক যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের মতো বড় বড় দেশও পারেনি। এটা কোনো যাদুর বলে হয়ে যায়নি। আমাদের অবকাঠামো ও জনবল থাকায় আমরা এটি করেতে পেরেছি।'

স্বাস্থ্যশিক্ষায় নৈতিকতা বিষয়ক পাঠদান যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ' স্বাস্থ্য শিক্ষায় মোরাল পার্ট যুক্ত করতে হবে। চিকিৎসক পেশা একটি সম্মান ও সেনসিটিভ কাজ। চিকিৎসকদের তার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকরা যান না। সবাই শহরমুখী হতে চায়। অনেক এলাকায় কোনো সার্জন পাওয়া যায় না। এতে সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

স্বাস্থ্যখাতকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার কাজের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'মেডিকেল শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতের হৃদয়। তাই এটাকে অবহেলা করে চলা যাবে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেক ভালো কাজ করেছে। আজকের এই কর্মশালা তার অন্যতম প্রমাণ।'

মেডিকেল উচ্চ শিক্ষায় শৃঙ্খলা আনার কাজ চলছে জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, 'আমরা মেডিকেল উচ্চশিক্ষায় শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে আমরা রেসিডেন্সির এমডি, এমএস ও এফসিপিএস ডিগ্রির মধ্যে সমতা এনেছি। একইসঙ্গে যেনো কোনো চিকিৎসক একাধিক ডিগ্রি না গ্রহণ করে সেই উদ্যোগও নিয়েছি।'

এ খাতের মান উন্নয়নে দেশে মেডিকেল শিক্ষা কমিশন প্রয়োজন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে মেডিকেল সেবা কমিশন গঠন করতে হবে। এতে শিক্ষা ও সেবার মান নিশ্চিত হবে বলেও জানান শারফুদ্দিন।

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম আমিরুল মোর্শেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলম, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থায়ী প্রতিনিধি ড. বার্ডান জুং রানা, অঞ্চলিক পরামর্শক ড. ইবাদত দিলান প্রমুখ। 

এমএইচ/এমআর