images

হেলথ

একাধিক সার্জারি লাগবে নুহা ও নাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম

কুড়িগ্রামের মেরুদণ্ড জোড়া লাগা আট মাস ১৩ দিনের শিশু নুহা ও নাবার একাধিক সার্জারি লাগবে। দু’টি বড় সার্জারি ও একাধিক ছোট সার্জারির মাধ্যমে তাদের আলাদা করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশুদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। 

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) শিশু দু’টির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বিএসএমএমইউ নিউরোসার্জারি বিভাগে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন।

তিনি জানান, বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগে তার অধীনে ৫ মাস ধরে এই মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুরা চিকিৎসাধীন। বয়স কম থাকায় তখনই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। দু’ধাপে তাদের অস্ত্রোপচার হবে। সবঠিক থাকলে এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার করা হবে। এরপর দ্বিতীয়ধাপে চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার হবে। এছাড়া আরও ছোট ছোট অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর আরও কয়েকমাস তাদের হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।

তিনি আরও জানান, জোড়া লাগা শিশু দু’জনের চিকিৎসার ভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন। এনিয়ে তিনি বিএসএমএমইউর উপাচার্যকে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদকে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিশু দুটির চিকিৎসা প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। বেশ কয়েক ধাপে এর অপারেশন করা লাগবে। নিউরোসার্জন, ইউরোলজিস্টস, শিশু সার্জন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন, এনেস্থিওলজিস্ট ও শিশু পুষ্টিবিদসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে।

দেশে প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ড ও স্পাইন জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল স্পর্শকাতর হলেও সফলতার ব্যাপারে তারা আশাবাদী বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন।

এদিকে মেডিকেল বোর্ডের সভায় অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশুদের চিকিৎসার সকল খরচ বহন করছেন এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে নির্দেশনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তিনি আমাদের বলেছেন, শিশু দুটির চিকিৎসার জন্য যা যা করার আমরা যেন তাই করি। সেজন্য আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কারো সহযোগিতা লাগলে তাকেও ডাকবো।’

শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে মেডিকেল বোর্ডে এসে শিশু দুটির কেস স্টাডি দেখে বুঝতে পারলাম, শিশু দু’টির অপারেশন অত্যন্ত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। এই অপারেশন বেশ কয়েক ধাপে করতে হবে।’

মেডিকেল বোর্ডে ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘শিশু দুটির মেরুদণ্ড জোড়া ছাড়ানোর পাশাপাশি ইউরোলজিক্যাল কিছু কাজ করতে হবে। ইউরোলজিক্যাল কাজও বেশ জটিল।’

উল্লেখ্য, বিএসএমএমইউর নিউরোসার্জারি বিভাগে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে ভর্তি মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবার বয়স ৮ মাস ১৩ দিন। কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানা ও তার স্ত্রী নাসরিনের গর্ভে এই জমজ কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাদের পেছনে মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো আছে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘Pygopagus Conjoined twin’ বলে। দেশে কোনো মেরুদণ্ড জোড়ালাগা শিশুর অস্ত্রোপচার এটাই প্রথম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগ জানায়, শিশু নুহা ও নাবার বয়স আট মাস ১৩ দিন। শিশুদের মায়ের অতীতে তার কোনো খারাপ প্রসূতি ইতিহাস ছিল না, অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ছিল না, কোনো পরিচিত অসুস্থতা ছিল না, এমনকি বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস নেই। তিনি কখনো কোনো টেরাটোজেনিক ড্রাগ গ্রহণ করেননি। জন্মগত অসঙ্গতির কোনো পারিবারিক ইতিহাসও নেই। প্রসবপূর্ব ২০ সপ্তাহে গর্ভাবস্থায় যমজ দেখা যায়। তবে গর্ভাবস্থার ২৬ সপ্তাহে করা অ্যানোমলি স্ক্যানে কোনো জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থার বাকি সময়টা ছিল অস্বাভাবিক। গর্ভাবস্থার ৩৫ সপ্তাহে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রসব করা হয়। জন্মের পরপরই তারা কেঁদে ওঠে। এ সময় তাদের জন্মের ওজন ছিল ৮ দশমিক ৫ কেজি। শিশুরা সুস্থ এবং কৌতুকপূর্ণ, তবে মূত্রনালী পৃথক হলেও তাদের মলদ্বার সংযুক্ত। শিশুরা শব্দ ও স্পর্শে সংবেদনশীল। তাদের যকৃত, গলব্লাডার, প্লীহা, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং ইউরেটার্স স্বাভাবিক রয়েছে।

পাঁচ মাস আগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন চিকিৎসকদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুড়িগ্রাম যান। সেখানে চিকিৎসকরা মেরুদণ্ড জোড়ালাগা এ নবজাতকের বিষয়টি তাকে জানান। তিনি এই শিশুদের দেখতে যান এবং উন্নত চিকিৎসায় তাদের ঢাকাতে আসতে অনুরোধ করেন। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন এবং চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ উপাচার্যকে নির্দেশনা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ এই জোড়া লাগানো জমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন।

এমএইচ/এইউ