images

হেলথ

বুকে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুলাই ২০২২, ০৪:৫৮ পিএম

বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ব্যথা বিভিন্ন ধরণের হলেও ১০ থেকে ১২ শতাংশের ক্ষেত্রে তা মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

রোববার (১৭ জুলাই) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‘এ’ ব্লক মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এই পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

বুকে ব্যথা নিয়ে ওই সেমিনারের আয়োজন করে সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি।

সেমিনারে আলোচকরা জানান, বুকে ব্যথা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তার মধ্যে মারাত্মক সমস্যা থাকতে পারে ১০ থেকে ১২ শতাংশের ক্ষেত্রে। যারা বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসেন তাদের অযথা বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে রোগের উপসর্গ অনুযায়ী পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে। বুকে আঘাত পেলে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।

হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথার রোগীদের একটি বড় অংশ হাসপাতালে আসার সুযোগই পান না জানিয়ে বক্তারা বলেন, এ ধরণের রোগীদের একটি অংশ হাসপাতাল পর্যন্ত আসলেও সঠিক চিকিৎসা পান না। চিকিৎসা বঞ্চিত এসব রোগীর বিশেষত মহিলা। আবার বয়স্ক রোগী, ডায়ালাইসিস রোগী, অপারেশন পরবর্তী রোগীরাও হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া বাড়িতে বসে যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাদের সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানোও একটি বড় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

এমতাবস্থায় সচেতনতার বিকল্প নেই জানিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। যেমন চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি রোগী ও সাধারণ মানুষদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেবার মাধ্যমেও হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথা তথা হৃদরোগের চিকিৎসার আওতা ও উৎকর্ষ বাড়ানো সম্ভব। আর এর মাধ্যমে হৃদরোগজনিত মৃত্যুও কমিয়ে আনা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। বুকে ব্যথা হলেই রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে হবে। সামান্য অবহেলায় রোগীর জীবন সংশয় হতে পারে।

BSMMUসেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বুকে ব্যথা ডাক্তারদেরও হয়, রোগীর হয়। বুকে ব্যথা রোগী আসলেই আমরা দেরি করব না। বুকে ব্যথায় নানান কারণ থাকলেও প্রধান পাঁচটি কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। হৃদরোগের কারণে বুকে ব্যথা, ফুসফুস সংক্রমণের জন্য বুকে ব্যথা, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে বুকে ব্যথা, স্ট্রেস বা অস্থিরতার কারণে বুকে ব্যথা ও টেন্ডনের মাংস পেশীতে ব্যথার কারণে বুকে ব্যথা হয়।’

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘আমরা কার্ডিয়াকে এক ধরনের ও নন-কার্ডিয়াকে চারটি বুকে ব্যথার কারণ চিহ্নিত করে থাকি। কী কারণে বুকে ব্যথা হয় সেটি বিচার না করে দ্রুত হাসপাতালে আসতে হবে। তা না হলে রোগীকে বাঁচাতে পারব না। আমরা প্রায় দেখতে পাই, ঘুমের ঘোরে মানুষ মারা যায়। এদের অনেকের রাতে বুকে ব্যথা হলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সে ঘুম আর ভাঙে না।’

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বুকের ব্যথার পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের রয়েছে। তাই বুকে ব্যথা নিয়ে বাসায় বসে থাকা দরকার নেই। আমাদের এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক রেসিডেন্ট চিকিৎসক আছে। তাদের বলব- বুকে ব্যথা নিয়ে কোনো রোগী যাতে মৃত্যুবরণ না করে সেইভাবেই তৈরি হতে হবে। বুকের ব্যথা নির্ণয়ের জন্য যেসব মেশিন বর্তমানে রয়েছে, সেসব আরও আধুনিক করার জন্য যা করা করা দরকার তাই করব।’

এ দিন সেমিনারে বুকে ব্যথা হলে করণীয় নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ফেরদৌস উর রহমান। পাশাপাশি ফুসফুসজনিত বুকে ব্যথা নিয়ে আলোচনা করেন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী। আর হৃদরোগজনিত বুকে ব্যথায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মাদ ফয়সাল ইবনে কবির।

এছাড়া সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের বুকে ব্যথা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী, বিএসএমএমইউ উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন।

এমএইচ/আইএইচ