নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২৩ পিএম
তূণমূল পর্যায়ে চিকিৎসক সংকট কাটাতে ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দ্রততম সময়ের মধ্যে ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের গেজেট প্রকাশ ও পদায়নের দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা জানান, সুপারিশের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও গেজেট ও পদায়ন না হওয়ায় দেশের তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস (স্বাস্থ্য) সুপারিশপ্রাপ্ত চিকিৎসক ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডা. দেবাশীষ দাশ।
তিনি বলেন, নভেম্বরের মধ্যে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের কাজ শেষ করার জন্য কাজ করেছিল। দেশের মানুষও আশান্বিত হয়েছিল যে, কিছুটা হলেও চিকিৎসক সংকট কাটবে। ফলাফল দেওয়ার পর এখনও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন? দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত গেজেট প্রকাশ ও পদায়ন দেওয়া হোক।
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসক সংখ্যা এক বা দু’জন। প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। আমরা নিয়োগ প্রত্যাশিরাও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। আমরা যদি মানসিক অশান্তি নিয়ে থাকি, তাহলে সম্পূর্ণভাবে রোগীকে সেবা দেওয়া কঠিন। নতুন চাকরিতে যোগ দিতে চিকিৎসকদের মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে, গেজেট ও পদায়ন করা হলে যেমন চিকিৎসকদের অনিশ্চয়তা দূর হবে, তেমনি দেশের তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবাও স্বস্তি পাবে।
লিখিত বক্তব্যে ডা. দেবাশীষ দাশ বলেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে দুই হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) গত ২৯ মে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর ১৮ জুলাই এমসিকিউ ধরনের লিখিত পরীক্ষা, ১০ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) শেষে ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। তবে ফল প্রকাশের তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের চিকিৎসক সংকটের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করেন আয়োজকেরা। গত ৩ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাত্র একজন চিকিৎসকের ওপর শতাধিক রোগীর চাপের চিত্র উঠে আসে ওই প্রতিবেদনে। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগীর স্বজনেরা। আয়োজকদের ভাষ্য, এটি শুধু একটি উপজেলার চিত্র নয়— দেশের প্রায় সব উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই একই ধরনের সংকট বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ হাজার ৯৮০টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে তীব্র চিকিৎসক সংকট থাকা সত্ত্বেও ৩ হাজার ৫০০–এর বেশি প্রস্তুত চিকিৎসককে পদায়ন না করে বসিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। এতে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এর আগে জানিয়েছিলেন, ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়োগের কার্যক্রম নভেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান দ্রুত ও স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তবে বাস্তবে সেই আশ্বাসের প্রতিফলন এখনও দেখা যাচ্ছে না।
আয়োজকেরা জানান, দ্রুত নিয়োগের আশায় অনেক সুপারিশপ্রাপ্ত চিকিৎসক এফসিপিএস, এমডি–এমএসসহ চলমান উচ্চতর প্রশিক্ষণ ছেড়ে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রুত নিয়োগের আশ্বাস। কিন্তু ৩ মাস গড়িয়ে গেলেও চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ ও পদায়ন না হওয়ায় এই তরুণ চিকিৎসকরা এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। একদিকে ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে উচ্চতর শিক্ষা থেকে বিরতি নেওয়ায় তাদের একাডেমিক ধারাবাহিকতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. রুহুল আমিন, ডা. মো. রিফাত খন্দকার, ডা. ইশরাত জাহানে ঈসা, ডা. আজাদ হোসেন ও রাতুল বালা বিশ্বাস।
এসএইচ/এফএ