জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম
শীতকাল মানেই ঠান্ডা বাতাস আর শুষ্ক আবহাওয়া। আর এই সময়েই সাইনোসাইটিসের (Sinusitis) সমস্যা যেন বেড়ে যায় বহুগুণে। নাক বন্ধ, মাথা ব্যথা আর সর্দি লেগে থাকা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।
শীতে সাইনোসাইটিসের সমস্যা কেন বাড়ে
শীতকালে সাইনাসের সমস্যা ঘন ঘন হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে—
১. শুষ্ক বাতাস (Dry Air): শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়। শুষ্ক বাতাস নাকে প্রবেশ করলে নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা ঝিল্লি (Mucous Membrane) শুকিয়ে যায়। এতে শ্লেষ্মা ঘন হয়ে সাইনাসের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।
২. ঠান্ডা ও ফ্লুর প্রকোপ: শীতকালে সাধারণ ঠান্ডা লাগা (Common Cold) ও ফ্লু (Flu) ভাইরাস বেশি ছড়ায়। এই ভাইরাল সংক্রমণগুলোই প্রায়শই সাইনাসের প্রদাহ বা ইনফেকশনের প্রধান কারণ।
৩. ঘরের ভেতরের উষ্ণতা পরিবর্তন (Indoor Heating): ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহার করলে বাতাস আরও শুষ্ক হয়ে যায়। এতে নাকের ভেতরের মিউকোসিলিয়ারি ক্লিয়ারেন্স (Mucociliary Clearance) প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
৪. অ্যালার্জি উদ্দীপক (Allergen Exposure): শীতকালে দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় ধুলাবালি, মাইট এবং পোষা প্রাণীর লোম ঘরের ভেতরে বেশি জমে। যারা অ্যালার্জিক সাইনোসাইটিসে ভোগেন, তাদের জন্য এটি সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
সাইনোসাইটিস নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া প্রতিকার
দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমে শীতকালে সাইনোসাইটিসের কষ্ট অনেকটাই কমানো সম্ভব।
১. বাষ্প নেওয়া (Steam Inhalation): গরম জলে মেন্থল বা ইউক্যালিপটাস মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার ভাপ নিন। এটি ঘন শ্লেষ্মাকে পাতলা করতে ও বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে।
২. নাক সেলাইন পানি দিয়ে ধোয়া (Saline Nasal Rinse): নিয়মিত লবণপানি বা সেলাইন দ্রবণ দিয়ে নাক ধোয়া (Nasal Irrigation) সাইনাস পরিষ্কার রাখতে ও প্রদাহ কমাতে কার্যকর।
৩. পর্যাপ্ত জলীয় পদার্থ গ্রহণ: প্রচুর পরিমাণে উষ্ণ পানি, স্যুপ বা হারবাল চা পান করুন। এটি শরীরকে আর্দ্র রাখে ও শ্লেষ্মাকে পাতলা হতে সাহায্য করে।
৪. ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখা (Use of Humidifier): শোবার ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ান। এটি নাকের পথকে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
৫. উষ্ণতা বজায় রাখা: ঠান্ডা বাতাস থেকে নিজেকে বাঁচান এবং মাথা, কান ও গলা গরম কাপড়ে ঢেকে রাখুন।
যদি সাইনোসাইটিসের উপসর্গ (যেমন: তীব্র ব্যথা, জ্বর, চোখ ফুলে যাওয়া) ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি ২, ঢাকা।
এআর