নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৪ এএম
পূর্ণ গর্ভকাল শেষেও প্রসব বেদনা শুরু না হলে কৃত্রিম উপায়ে বেদনা উঠিয়ে (ইনডাকশন পদ্ধতি) সন্তান প্রসবের মাধ্যমে ২০ ভাগ সিজারিয়ান সেকশন কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে সিজার কমাতে স্বাভাবিক উপায়ে প্রথম সন্তান প্রসবের ব্যাপারে সচেতন থাকার কথা বলেছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) হাসপাতালে ‘নিরাপদ প্রসব ও ইনডাকশন পদ্ধতির মাধ্যমে সি-সেকশন হ্রাস’ শীর্ষক এক সভায় এসব কথা জানানো হয়।
অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) এই আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ওজিএসবি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও সংগঠনটির সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম ফ্লোরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুনিরা ফেরদৌসী।
সেমিনারে ডা. মুনিরা ফেরদৌসী জানান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত এক গবেষণায় ২০০ নারীর ওপর ইনডাকশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে। সেখানে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে এবং গড় সময় কমেছে প্রায় ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট। কোনো গুরুতর জটিলতাও দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে বর্তমানে প্রায় ৫৪ ভাগ শিশু সিজারিয়ানের মাধ্যমে জন্ম নিচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) সুপারিশের (১০-১৫ শতাংশ) চেয়ে বহু বেশি। এর পেছনে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও বাণিজ্যিক চাপ। ইনডাকশন পদ্ধতি এ প্রবণতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
ইনডাকশন পদ্ধতি নতুন কিছু নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম ফ্লোরা বলেন, ‘বহু বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ানো হয়েছে। আমাদের দেশেও এটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিজারিয়ান সেকশন কমাতে হলে প্রথমবারের সিজারিয়ান সেকশন কমাতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে যে, প্রথম সন্তান স্বাভাবিক প্রসব হোক। এটা যদি করতে পারি, তাহলে সিজার কমিয়ে আনা সম্ভব। সিজারিয়ান সেকশন যখন হয়, তখন প্রসূতি ও সন্তানের জন্য চতুর্দিকে বিপদ সংকেত অপেক্ষা করে। এটা কমাতে গেলে প্রথম সন্তান স্বাভাবিক হওয়ার ব্যাপারে তৈরি থাকতে হবে।’
চিকিৎসকরা জানান, সন্তান প্রসবে ইনডাকশন পদ্ধতি হলো প্রাকৃতিকভাবে প্রসব শুরু না হলে কৃত্রিম উপায়ে জরায়ু সংকোচন ঘটিয়ে প্রসব শুরু করানো ও সন্তান প্রসব করানো। সাধারণত যখন গর্ভকাল পূর্ণ (৩৯–৪১ সপ্তাহ) হয়ে গেছে, অথচ প্রসব শুরু হচ্ছে না বা কোনো চিকিৎসাগত জটিলতা দেখা দিয়েছে, তখন ইনডাকশন প্রয়োজন হতে পারে।
সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মোট সন্তান প্রসবের ১০-১৫ শতাংশ সিজারিয়ান হতে পারে। অথচ বাংলাদেশে এই হার ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এই সংখ্যা খুবই উদ্বেগজনক। অথচ ইনডাকশন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে এই হার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
এই চিকিৎসক আরও জানান, এই হাসপাতালে ২৩ জুলাই থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত মোট প্রসবের ৩২ শতাংশ বা ৭২০টি ছিল স্বাভাবিক প্রসব। অথচ সে সময় সিজারিয়ান হয়েছে ৬৮ শতাংশ। এরপরের বছর ইনডাকশন পদ্ধতির সফলতার কারণে স্বাভাবিক প্রসব বেড়েছে ৪ শতাংশ ও সিজারিয়ান কমেছে ৪ শতাংশ।
এই চিকিৎসক বলেন, স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও একটি জাতীয় গাইডলাইন তৈরি জরুরি। প্রাথমিকভাবে শহরের হাসপাতালগুলোতে এবং পরবর্তীতে ধাপে ধাপে গ্রামীণ পর্যায়েও এই পদ্ধতি চালু করা হবে। এ ক্ষেত্রে ওজিএসবি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে ও সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করবে।
তবে এই পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য নয় বলেও সতর্ক করেন ডা. মুনিরা ফেরদৌসী।
অনুষ্ঠানে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. আঞ্জুমান আরা রীতা জানান, আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে আগে যেখানে সিজারিয়ান হার ছিল ৭৩ শতাংশ, ইনডাকশন পদ্ধতি ব্যবহারে তা কমে ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আরও ভালো ফল পেতে হলে চিকিৎসকদের উৎসাহ এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ টিম গঠন প্রয়োজন।
এসএইচ/এএস