images

হেলথ

‘নিউট্রি-ক্যাপ’ মডেলে কমেছে গর্ভপাত ও শিশুমৃত্যু, খরচও নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২৮ পিএম

নির্ধারিত সময়ের আগেই কম ওজনের সন্তান জন্ম, গর্ভপাত, মৃতভ্রুণ ও নবজাতকের মৃত্যুহার—এসব স্বাস্থ্য সংকটে বড় ধরনের অগ্রগতি এসেছে ‘নিউট্রি-ক্যাপ’ নামের একটি অভিযোজিত মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে। এই মডেলের আওতায় গর্ভকালীন কম ওজনের সন্তানের জন্মের ঝুঁকি ১৬ শতাংশ কমেছে বলে গবেষণায় জানা গেছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোচকরা জানান, কিশোরীদের ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের গড় পরিমাণ ১২.০ থেকে বেড়ে ১২.৮ গ্রাম/ডেসিলিটারে পৌঁছেছে। যদিও খাদ্যবৈচিত্র্য অপরিবর্তিত ছিল, তবু স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অংশগ্রহণকারী কিশোরীদের মধ্যে ১৪.৯ শতাংশ অপুষ্টিজনিত ক্ষীণকায় এবং ১২.৬ শতাংশ অতিরিক্ত ওজনের ছিল, যা দেশের শহরাঞ্চলের গড় পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শিশু স্বাস্থ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা জানিয়ে বলা হয়, তাদের উচ্চতা ও ওজন উভয়ের উন্নয়ন ঘটেছে। পাশাপাশি, অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং হজম প্রক্রিয়া ভালো হওয়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে বলে জৈবিক পরীক্ষায় দেখা গেছে।

এ মডেলের আরেকটি বড় অর্জন অর্থনৈতিক দিক থেকে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের চিকিৎসায় পরিবারের খরচ কমেছে। বিশেষ করে ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। যদিও সেবা নিতে সময় কিছুটা বেশি লেগেছে, তবু সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যয় ছিল তুলনামূলকভাবে কম।

মানবসম্পদের পেছনে খরচ সবচেয়ে বেশি হলেও গবেষকরা বলছেন, এই মডেল নিয়মিতভাবে প্রয়োগ করলে খরচও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

গবেষক দলের প্রধান ড. মোস্তফা মাহফুজ বলেন, ‘এই মডেলটি কার্যকর হয়েছে, কারণ এটি স্থানীয় মানুষের কথা শুনেছে, নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং একাধিক বাধাকে একসঙ্গে মোকাবিলা করেছে। সহমর্মিতা আর তথ্য-প্রমাণভিত্তিক কার্যক্রমের সম্মিলন এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।’

আরও পড়ুন

শিশুদের অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ‘এনসিডি সেবা মডেল’ চালু

আইসিডিডিআর,বি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘বস্তিবাসী দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে উপেক্ষিত। নিউট্রি-ক্যাপ কেবল কার্যকর নয়, বরং দেশের অন্যান্য বস্তি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও প্রয়োগযোগ্য।’

সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্য দেন আইসিডিডিআর,বি-এর নিউট্রিশন রিসার্চ ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. থাডিয়াস ডেভিড মে। আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ, জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার প্রতিনিধি।

সমাপনী বক্তব্যে অ্যাডসার্চ বাই আইসিডিডিআর,বি প্রকল্প পরিচালক ও  ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. শামস এল আরিফিন এই মডেলটি বৃহৎ পরিসরে সম্প্রসারণের সুযোগ ও অংশীদারিত্বের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, এনজিও প্রতিনিধি ও গবেষকসহ বিভিন্ন খাতের অংশীজন অংশগ্রহণ করেন।

এসএইচ/জেবি