images

হেলথ

আজ বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস, ঝুঁকিতে ৮ হাজার নবজাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ মে ২০২৫, ১২:১১ পিএম

আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। নারী ও পুরুষ উভয়েই বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়।

বাহক হারের দিক থেকে রংপুর বিভাগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ (২৭.৭ শতাংশ)। এরপর রাজশাহীতে ১১.৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১.২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৯.৮, খুলনা ও ঢাকায় ৮.৬ শতাংশ, বরিশালে ৭.৩ শতাংশ এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ৪.৮ শতাংশ। বয়সভেদেও এই রোগের বাহকত্বের পার্থক্য রয়েছে। ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মাঝে এই হার সবচেয়ে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। এতে রোগীরা দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, রক্তশূন্যতা, অরুচি, জন্ডিসসহ নানা জটিলতায় ভোগেন। শারীরিক বৃদ্ধি ধীরগতিরও হতে পারে।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান জানান, দেশে সরকারি পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা এখনো সীমিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০২ সাল থেকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘সচেতনতা ছাড়া এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।’

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘যদি দুইজন বাহকের বিয়ে হয়, তাহলে তাদের সন্তানের ২৫ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ৫০ শতাংশ বাহক হয় এবং ২৫ শতাংশ একেবারেই সুস্থ থাকে। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি দুরারোগ্য বংশগত রক্তস্বল্পতা রোগ। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হলো বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা নিশ্চিত করা।’ তিনি এ বিষয়ে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম এবং জনগণকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। দিবসটি সে সচেতনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এসএইচ/এইউ