images

হেলথ

স্বাস্থ্য ক্যাডারদের কারণে আটকে আছে সাড়ে ৭ হাজার চিকিৎসকের পদোন্নতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৩ এএম

স্বাস্থ্য ক্যাডারদের রিটের কারণে সাড়ে সাত হাজার চিকিৎসকের পদোন্নতি আটকে আছে বলে দাবি করেছেন বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত অ্যাসোসিয়েশন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় কর্মরত চিকিৎসকদের পদোন্নতি দিতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সুপারনিউমেরারী পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব পদে স্বাস্থ্য ক্যাডার, প্রকল্প এবং অ্যাডহকে নিয়োগ পাওয়াদের পরবর্তীতে ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকদের পদোন্নতির জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের গত ১৪ জানুয়ারি ওই কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় স্বাস্থ্য ক্যাডার, স্বাস্থ্য ক্যাডারভুক্ত সব চিকিৎসককে সুপারনিউমেরারী পদসহ সব বিদ্যমান শূন্য পদে অন্তর্ভুক্তিমূলক পদোন্নতি দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের পর স্বাস্থ্য ক্যাডার চিকিৎসকরা আইনি অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পদোন্নতি প্রক্রিয়া থেকে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডার চিকিৎসকদের পদোন্নতির দাবি করছেন। তারা বলছেন, ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। তারা এই অপপ্রচারও চালাচ্ছেন যে, বিসিএস (স্বাস্থ্য) এনক্যাডার চিকিৎসকরা আদালতে নিট মামলা দায়ের করে সব পক্ষের পদোন্নতি রহিতের আবেদন করেছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কতিপয় চিকিৎসকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত যে স্থগিতাদেশ প্রদান করেছেন সেই স্থগিতাদেশের কারণে পদোন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. মো. জাকির হুসেইন বলেন, আমাদের অধিকার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি এবং আবেদন করেছি, যাতে চলমান পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় বিবেচনা করার একটি নির্দেশনা আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করেন। পদোন্নতির প্রক্রিয়া থেকে আমাদের বাদ দিয়ে যেন কোনো পদোন্নতি না করতে পারে এমন নির্দেশনার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে পূর্বের মামলায় স্থগিতাদেশের কারনে পুরো পদোন্নতির প্রক্রিয়া হুমকির মুখে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা আইনজীবীদের মতামত নিয়ে স্থগিতাদেশ বিষয়ে ব্যাখ্যাসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুলিপি পাঠিয়েছি। স্থগিতাদেশ মামলার বাদী, বিবাদী এবং মামলায় অন্তর্ভুক্ত সব পক্ষের ওপর বর্তায়। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাপ্ত স্থগিতাদেশের কারণে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার এবং বিসিএস (স্বাস্থ্য) এনক্যাডার কোন পক্ষকে পদোন্নতি প্রদান আইনগতভাবে অবৈধ হবে এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে পদোন্নতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা করবেন। আমাদের ওপর বৈষম্য ও বঞ্চনার প্রতিকার ও ন্যায়বিচার চাই।

Screenshot_2025-04-30_113401

সদস্য সচিব ডা. মো. জাহীদ ইকবাল বলেন, দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জোরদার করতে ২০১০ ও ১১ সালে চার হাজার ১৩৩টি ক্যাডার শুণ্য পদের বিপরীতে প্রতিযোগীতামূলক প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে উত্তীর্ণদের একহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এজন্য ২০০৯ সালে এডহক ভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা ১৯৯৪ সংশোধন করা হয়। ২০১৫ সালে ধাপে ধাপে এই চিকিৎসকদের চাকরিতে যোগদানের প্রথম দিন থেকে প্রথম শ্রেণি ননক্যাডার হিসেবে নিয়মিত করণ করা হয়। পরের বছর চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এক হাজার ৯০৮ জন নন-ক্যাডার চিকিৎসককে ক্যাডারভুক্ত করণের জন্য তাদের বিগত ০৫ বছরের এসিআরসহ একটি অনুরোধ  মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ২০২০ সালে এই চিকিৎসকদের ক্যাডারভুক্ত করণ করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্যোগের ফলে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশের ১০ বছর পর ২০২২ সালে ২০০১ জন চিকিৎসককে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশক্রমে বিসিএস(স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের, বিধি-৫ শাখা প্রজ্ঞাপন জারি করে। অথচ এই ১০ বছরে বেশ কয়েকটি ডিপিসি অনুষ্ঠিত হয় এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক যথাসময়ে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হন। চরম বৈষম্যের শিকার হন, যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সভায় স্বীকার করা হয়।

তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালে ২টি ইনক্রিমেন্ট বাতিলের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলে ২০২২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাস্তবায়ন অনুবিভাগ হতে  প্রথম নিয়োগের তারিখে ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। একই বছর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক হাজার ৯৮৯ জন চিকিৎসক কর্মকর্তাকে বিসিএস(স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত করন করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে। এর ফলে ২০২২ সালে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকগণ চাকরির প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে ক্যাডার পদে যোগদান করার জন্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করলে ২০২২ সালে সেই যোগদানপত্র গৃহীত হয়েছে মর্মে আদেশ জারি করে। ওই বছরই স্বাস্থ্য ক্যাডার কয়েকজন চিকিৎসক হীন উদ্দেশ্যে ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে একটি রিট দায়ের করেন। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে ক্যাডারভুক্ত চিকিৎসকদের ক্যাডার পদে চাকরি স্থায়ী করণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা প্রশাসনিক উন্নয়ন ও অধিশাখা-১, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে  সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে সুপারিশের জন্য পাঠানো হয়। 

ওই প্রস্তাবনার কাজ বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে চলমান থাকা অবস্থায় স্বাস্থ্য ক্যাডারের কয়েকজন চিকিৎসক হাইকোর্টে ২০২২ সালে করা রিট মামলায় চাকরি ক্যাডার পদে স্থায়ীকরণের চলমান কাজের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগ তাদের সম্পূরক আবেদনটি খারিজ করে দেন এবং যার ফলশ্রুতিতে চাকরি ক্যাডার পদে স্থায়ী করণের সুপারিশ প্রদানে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। সরকারি কর্মকমিশন গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বিসিএস(স্বাস্থ্য) ক্যাডারপদে চাকরি স্থায়ী করনের জন্য সুপারিশ প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন থেকে ক্যাডার পদে চাকরি স্থায়ী করনের সুপারিশ যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অথবা প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হতে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত তখন স্বাস্থ্য ক্যাডারের কতিপয় চিকিৎসক হাইকোর্ট থেকে প্রত্যাখিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করলে আদালত সাবজেক্ট ম্যাটারের ওপর রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করেন।

এসএইচ