images

হেলথ

শীত আসতেই কাবু শিশুরা, চাপ বাড়ছে হাসপাতালে

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম

বাংলা সনে শুরু হয়েছে পৌষ মাস। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতকালে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে শীত জেঁকে বসেছে আরও সপ্তাহ খানেক আগে। প্রকৃতিতে শীতের আগমনি বার্তার সঙ্গে হাসপাতালেও এর প্রভাব স্পষ্ট। শীতের প্রকোপ শুরু হতেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। যার বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। তবে ঠান্ডাজনিত সমস্যা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস এবং হাঁপানির মতো শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগে ভর্তি শিশুর সংখ্যাটাই বেশি।

শীতকালে শিশুদের শারীরিক সুরক্ষায় বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন হলেও বাস্তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, ও জ্বরের মতো শীতজনিত রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার শিশু হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবখানেই বেড়েছে শিশু রোগীর চাপ। ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে মারা গেছে ২৯ জন। আর এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে সেবা নিয়েছে ৯৯ হাজার ৫১৭ জন।

বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের চিকিৎসা নিয়েছে ২৬ হাজার ৪৯৪ রোগী। এছাড়া রংপুরে ২০ হাজার ৮০৩ জন, খুলনায় ২০ হাজার ৩৩ জন, ঢাকা বিভাগে (মহানগর ব্যতীত) ১৩ হাজার ৪৫৮ জন, ময়মনসিংহে ৪ হাজার ৭৪৬ জন, রাজশাহীতে ৬ হাজার ১৩৭ জন, বরিশালে ৫ হাজার ৬৬৬ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ হাজার ৩৭৪ জন শীতজনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।
আর মারা যাওয়া ২৯ জনের মধ্যে ময়মনসিংহের বাসিন্দা ১১ জন, চট্টগ্রামে ৭ জন, ঢাকা বিভাগের ৫ জন, বরিশালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও খুলনা বিভাগে একজন করে মৃত্যুবরণ করেছেন।

হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ

ঢাকা শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়াসহ শীতকালীন রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। ৬৮১ শয্যার হাসপাতালটিতে নিউমোনিয়া রোগীদের জন্য বরাদ্দ সিটের সংখ্যা ১৯টি। শীতজনিত নানা রোগের জন্য দুই ওয়ার্ডে মোট শয্যা ৪০টি। অথচ ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৯৮ জন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন শিশু। এরমধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগে ১ হাজার ১৪২ জন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ৯৫ জন এবং ডায়রিয়ায় নিয়ে ২৮১ জন চিকিৎসা নিয়েছে। ফলে সক্ষমতার অধিক শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা।

সেবা সংশ্লিষ্টদের বলছেন, শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালটিতে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। এসব রোগীর বেশিরভাগ রাজধানী ও আশেপাশের এলাকা থেকে আসছে। তাদের কারো কারো পরিস্থিতি যথেষ্টই জটিল। প্রতিবছর এমন চিত্র দেখা যায়। এর কারণ সচেতনতার অভাব। এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই।

শিশু হাসপাতালের মতো একই অবস্থা রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালটিতে ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর চাপ বেড়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সাশ্রয়ী হওয়ায় এখানে প্রায় সারাবছরই শয্যা পরিপূর্ণ থাকে। কয়েকদিন আগেও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সিটগুলো ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ ছিল। তবে এখন সেই স্থান নিয়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা। ডিসেম্বরের পর থেকে এ ধরনের রোগী বেড়েছে।

আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ঘুরেও একই চিত্র দেখা যায়। মাতৃ ও নবজাতক শিশু স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালটির সুনাম থাকায় এ ধরনের রোগীর চাপও বেড়েছে। হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন রুদ্র ঢাকা মেইলকে জানান, শীতের শুরু থেকে জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে এতে সেবা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটছে না।

সচেতন হওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ঋতু পরিবর্তন স্বাভাবিক ঘটনা। এ সময়ে এ ধরনের রোগের প্রকোপটাও স্বাভাবিক। আর এতে বেশি ভোগেন শিশু ও বয়স্করা। তাই তাদের দেখাশুনা করা ব্যক্তিদের অধিক সতর্ক হতে হবে। এ সময়ে সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লো-এর অধিক সংক্রমণ ঘটে। এছাড়া টনসিল ইনফেকশন, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া দেখা দেয় শিশুদের মধ্যে। পাশাপাশি বায়ু দূষণ রয়েছে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা প্রতিবছরই এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখী হই। চলতি বছরেও হাসপাতালে প্রতিদিন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে শিশু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি রয়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুদের ঠান্ডা লাগানো যাবে না। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে শিশুদের না নেওয়াই ভালো। এই সময়টাতে ধুলাবালি বেশি থাকায় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তারা দ্রুত রোগাক্রান্ত হয়।

এমএইচ/ইএ