নিজস্ব প্রতিবেদক
০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
বাংলাদেশের ১২টি দৈনিক পত্রিকায় ২০১০-২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা (রেজিস্ট্যান্স, অপব্যবহার ও সচেতনতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে প্রতিবেদনগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রসার এবং বিক্রিতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির ভূমিকার বিষয়ে খুব বেশি প্রতিবেদন দেখা যায়নি। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে উৎসাহিত করা ও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়গুলো খুব একটা উঠে আসেনি।
বুধবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়। আইসিডিডিআর,বিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘২০১০-২০২১ এর মধ্যবর্তী সময় বাংলাদেশি সংবাদপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ’ শিরোনামে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকের ২৭৫টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পত্রিকাগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা সম্পর্কিত ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ প্রতিবেদন করা হয় ভোক্তাদের দ্বারা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বিষয়ে। এছাড়াও ২৯ দশমিক সংবাদ ছিল প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিয়ে এবং ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়ার ঘটনা দেখা যায়।
তবে গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের প্রসার এবং বিক্রিতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির ভূমিকার বিষয়ে খুব বেশি প্রতিবেদন দেখা যায়নি। যেমন চিকিৎসকদের কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে উৎসাহিত করা, প্রণোদনা দেওয়ার মতো বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদন দেখা যায়নি।
এছাড়াও, বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে করা সংবাদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেটি পত্রিকায় তুলে ধরা। এ ধরনের সংবাদ হওয়ার এখান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ ছিল না। এ ব্যতীত, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কিত সংবাদে যেসকল সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে সেগুলোও পর্যাপ্ত নয়। তবে, এসকল বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করা হলে তা জনগণের জন্য ইতিবাচক হবে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর, বি-র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক ডা. তাহমিদুল হক বলেন, ‘মানুষের মাঝে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা সমর্থন করতে গণমাধ্যমে সঠিক, বিস্তারিত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ সংবাদ প্রয়োজন। এর ফলে মানুষের মাঝে যেমন সচেতনতা তৈরি হবে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদেরও জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা যাবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখার পাশাপাশি বাংলায় আরও বেশি সংবাদ প্রকাশ করলে জনসাধারণের মাঝে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা নিয়ে বোঝাপড়া উন্নয়ন হবে।’
গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ১৭ কোটির জনসংখ্যার বাংলাদেশে, উল্লেখযোগ্যভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, মূত্রনালির সংক্রমণ, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন এবং সেপসিসসহ বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য দায়ী ই. কোলাই-এর মতো সাধারণ অণুজীবের মধ্যে প্রতিরোধ্যতার হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি। এছাড়া অ্যামপিসিলিনের রেজিস্ট্যান্স ৯৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, অ্যামোক্সিক্লাভ ৬৭ দশমিক ১০ শতাংশ, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ৬৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং কো-ট্রাইমক্সাজোল ৭২ শতাংশ রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চ প্রতিরোধ্যতা স্তরগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকির কারণ।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা সীমিত হয়ে যায়। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার এই উচ্চ হার আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক হুমকি।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে প্রতিবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধির উপকারিতা তুলে ধরে বলা হলে, এ সংক্রান্ত বাংলা প্রতিবেদন আরও বাড়াতে পারলে মানুষকে আরও সহজে সচেতন হতে সহায়তা করা যাবে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধিতে কোন প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকদের কোনভাবে প্রভাবিত করছে কিনা সেসকল বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন করার সময় সাংবাদিকরা স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, গবেষক এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যারা কাজ করে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারেন। এর ফলে, প্রতিবেদনগুলোতে সর্বশেষ গবেষণার তথ্যাবলী প্রতিফলিত হবে এবং মানুষ আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবে। যা প্রতিবেদনগুলিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিরোধ্যতার আর্থিক ক্ষতির দিক তুলে ধরে জানানো হয়, শুধুমাত্র ২০১৪ সালে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিশ্বব্যাপী ৭ লাখ মৃত্যুর কারণের সাথে সম্পর্ক যুক্ত ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে প্রতি বছর ১ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। শুধুমাত্র এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশেই প্রায় ৯০ লাখ মানুষ এর ফলে মারা যাবে। এছাড়াও, অর্থনৈতিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ২১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২০৫০ সালে এই দুই অঞ্চলের জিডিপির ৭ শতাংশ। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা কাটিয়ে উঠার চিকিৎসার প্রয়োজনে আনুমানিক ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যেতে পারে। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও বাধা সৃষ্টি করবে।
পত্রিকা নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতরের ‘পত্র- পত্রিকার প্রচার সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন হার ২০১৮’ তালিকা অনুসরণ করে সর্বাধিক প্রচার সংখ্যার ভিত্তিতে ছয়টি ইংরেজি এবং ছয়টি বাংলা পত্রিকা বাছাই করা হয়। পত্রিকাগুলো হলো- প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, সমকাল, ডেইলি স্টার, নিউ এজ, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, জনকণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, ভোরের কাগজ, এবং ডেইলি সান।
এমএইচ/এমএইচটি