images

হেলথ

বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী, বাড়তি চাপ শিশু হাসপাতালে

মাহফুজ উল্লাহ হিমু

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১২ পিএম

টানা ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল রাজধানীসহ সারাদেশের বাসিন্দারা। এর মাঝেই থেমে থেমে বৃষ্টি, তীব্র রোদ ও বাতাসের আর্দ্রতার প্রভাবে বাড়তি ঘামে বাড়ছে রোগ-বালাই। আর এতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী শিশুরা। ফলে রাজধানীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) রোগীর চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীর চাপ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

সরেজমিনে হাসপাতালটিতে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি ও বহির্বিভাগে ভিড় করছেন রোগী ও স্বজনরা। এসব রোগীর বেশিরভাগই জ্বর, সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস, নিউমোনিয়া ও পেটের সমস্যা নিয়ে এসেছে।

বহির্বিভাগে জ্বর ও সর্দি-কাশি রোগীর চাপ বেশি। জরুরি বিভাগে নিউমোনিয়া, পেটের সমস্যা নিয়ে আসা শিশু ও স্বজনদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপও বেড়েছে জরুরি বিভাগে। এ অবস্থায় গত ২১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটিতে ১৬টি বিশেষায়িত বেড চালু করা হয়, যা বর্তমানে ২৪ বেডে উন্নীত করা হয়েছে।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, জ্বর, সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। অনেকে সিজন পরিবর্তনের ফলে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ভেবে শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াচ্ছেন। ডেঙ্গুর মওসুম হলেও অনেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। যদিও তাদের অনেকের ডেঙ্গুর লক্ষণ রয়েছে। এ ধরনের রোগী পেলে তারা হাসপাতালে ভর্তি রাখছেন এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করাচ্ছেন।

শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী এক হাজার ৭৮৪ শিশু, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী এক হাজার ৭৮৪ এবং ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী এক হাজার ৬৬৩ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী ৭ জন, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী ১১ জন এবং ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৩ জন শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। যার সিংহভাগই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

Dengue_Child_Hospital--01--Home--01

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও শিশু হাসপাতালের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত ২২০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ভর্তি হয় ২৬ জন এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ভর্তি হয় ১৫ জন। আর জুলাইয়ে ৩১ জন, আগস্টে ৪৫ জন এবং চলতি মাসের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১০৩ জন। এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছে ১৮৬ জন। আর ৩১ জন বর্তমানে হাসপাতালটিতে ভর্তি রয়েছে। তার মধ্যে একজন শরীয়তপুরের তিন বছর বয়সী সারা (ছদ্মনাম)। শিশুটির সঙ্গে রয়েছে তার মা। গত ২২ সেপ্টেম্বর শিশু হাসপাতালের নিচতলার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় তাকে।

সারার মা ঢাকা মেইলকে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে তার মেয়ে তীব্র জ্বরে ভুগছিল। প্রাথমিক অবস্থায় জ্বরের ওষুধ খাওয়ালেও অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। বরং দিনকে দিন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এ অবস্থায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ঢাকায় নিয়ে আসা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। এখানে আসার পর পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।

তার বেডের আশপাশের রোগীদেরও একই অবস্থা। প্রথমে তীব্র জ্বর এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তির পর তাদের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

ওয়ার্ডটির দায়িত্বে থাকা আবাসিক চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য এ ওয়ার্ডটি বরাদ্দ করা হয়েছে। যত দিন যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় অন্য ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগী রাখা হচ্ছে। একটি শিশুকে অন্য ওয়ার্ডে শিশুদের সঙ্গে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী এভাবে বাড়তে থাকলে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীদের তত্ত্বাবধানে থাকা অধ্যাপক ডা. আক্তার হোসেন লোবান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের এখানে ২৪টি বেড ডেডিকেটেড করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪টি ফ্রি বেড। প্রায় সব কয়টিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। রোগীর সংখ্যা যদি আরও বাড়ে সেক্ষেত্রে অন্য ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি করা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু অন্য ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে। যদি কারো অবস্থা জটিল হয় সেক্ষেত্রে আইসিইউতে শিফট করার নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে বর্তমানে ক্রিটিক্যাল রোগী নেই। কারও কারও প্রেশারজনিত কিছু সমস্যা রয়েছে। ওয়ার্ডেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া রোগীর সংখ্যা বাড়লে ডেডিকেটেড বেডের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

Dengue_Child_Hospital--01--Home--02

এমএইচ/জেএম