বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
০৭ মে ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কিডনি ডায়ালাইসিস করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা। কারণ আগারওগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে (নিকডু) সামান্য টাকায় সেই সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি এই খরচে সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না ডায়ালাইসিসের। সক্ষমতার অধিক রোগী থাকায় সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শরীয়তপুর থেকে মর্জিনা বেগম তার স্বামী গফুরকে নিয়ে ডায়ালাইসিস নিতে মাসে চার বার ঢাকায় আসেন। তার দুটি কিডনিই নষ্ট। চিকিৎসার খরচ চালানোর জন্য নিজের সব সম্পত্তি বন্ধক রেখেছেন। তবে নয় মাস আগে আবেদন করেও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে সুযোগ পাননি ডায়ালাইসিসের। বাধ্য হয়ে প্রাইভেট খরচে সেবা নিতে হচ্ছে তাদের।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আমিন এসেছেন তার বাবাকে নিয়ে ডায়ালাইসিস করাতে। এখানে এসে তিনি জানতে পারেন, ডায়ালাইসিসের ফাইল নেওয়া হবে না। এর আগে থেকে অনেকগুলো ফাইল জমা পড়ে আছে, তারা চিকিৎসার সুযোগ পাননি। বাধ্য হয়ে বাবাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চলে যাচ্ছেন বলে জানান আমিন।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে সরকারি সেবা নিতে এভাবেই পড়ে আছে শত শত আবেদন। দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রোগীরা। সক্ষমতা না থাকায় নেওয়া হচ্ছে না নতুন কোনো ডায়ালাইসিসের সিরিয়াল। ফলে চরম বিপাকে নিম্ন আয়ের কিডনি রোগীরা।
হাসপাতালজুড়ে কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট হিসেবে পুরুষদের জন্য ১ ও ২নং, নারীদের জন্য ৩ ও ৪নং ওয়ার্ড বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে বলছে, ভর্তুকি দিয়ে কিডনি ইনস্টিটিউটের ডায়ালাইসিস সেবা বাড়ানো হবে না। সিরিয়ালের জন্য মাসের পর মাস ঘুরে অনেকে চলে গেছেন অন্যত্র। কেউ চেষ্টা করছেন প্রাইভেট খরচে সেবা নিচ্ছেন।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে বছরে ১৯ হাজার ডায়ালাইসিস করায় সরকার। প্রতি ডায়ালাইসিসে স্যান্ডর পায় তিন হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫৬০ টাকা দেয় রোগী, বাকিটা সরকার। তবে পুরনো রোগীদের সেবা দিতেই শেষ ১৯ হাজার ডায়ালাইসিসের কোটা। তাই বাধ্য হয়ে অনেক রোগী বেসরকারিভাবে তিন হাজার টাকায় ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন
ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধের ঘোষণা থেকে সরে এল স্যান্ডর
হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের চার্ট অনুযায়ী, সরকারি উপায়ে ৫৬০ টাকা এবং প্রাইভেট খরচে সুবিধা নিতে হলে ৩১৮০ টাকা দিতে হয়।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বাবরুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের এখানে অপেক্ষমাণ তালিকা অনেক দীর্ঘ। এতগুলো রোগীর সেবা দেওয়া এই মুহূর্তে আমাদের জন্য সম্ভব নয়। যারা অপেক্ষায় আছেন তাদের আমরা ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে চলে যেতে বলছি। তবে প্রাইভেট খরচে সুবিধা চলমান রাখা হয়েছে।’
বছরে ৫০ হাজার ডায়ালাইসিস সেশন দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে স্যান্ডরের। তবে ভর্তুকি দিয়ে নয়, সব সরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে চায় স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মঈনুল আহসান বলেন, ‘নিকডুতে স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সিরিয়াল নেওয়া বন্ধ। স্যান্ডর নিয়ে কিছু জটিলতা হয়েছে। তাই আমরা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছি। আমরা খবর নিয়ে জেনেছি জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে সরকারি মূল্যে ডায়ালাইসিসের জন্য আগের আবেদন জমা আছে প্রায় আটশর মতো।’
প্রতিনিধি/জেবি