images

হেলথ

দেশের ম্যালেরিয়া পরিস্থিতিতে কোনো উন্নতি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

সরকারের নানা প্রচেষ্টার পরও অপরিবর্তিত রয়েছে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগ। ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গত ৪ বছরে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা। কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতি, মশা ও মানুষের আচরণে পরিবর্তনের কারণে গতানুগতিক পদ্ধতি কোনো কাজে আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৩০ বছরেও ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। এ প্রকল্পকে সরকারের অর্থ অপচয় হিসেবে দেখছেন তারা।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ম্যালেরিয়ায় বিশ্বে ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়া রোগীদের ৯০ শতাংশই আফ্রিকা অঞ্চলের।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই আরও গতিশীল করতে হবে’।

চার বছরে কয়েকগুন হয়েছে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ

সরকারের ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সারাদেশে এক হাজার ১৫৮ জন ম্যালেরিয়ার রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে রাঙামাটিতে, ৪০ শতাংশ বান্দরবান ও ১২ শতাংশ কক্সবাজারে। এই সময়ে মারা গেছেন দুই জন।

এছাড়া গত বছর ২০২৩ সালে দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ৫৬৭ জন। মৃত্যু হয় ৬ জনের।  ২০২২ সালে শনাক্ত হয় ১৮ হাজার ১৯৫ জন। মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ২০২১ সালে ৭ হাজার ২৯৪ জন আক্রান্তের মাধ্যে মৃত্যু হয় ৯ জনের। ২০২০ সালে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ১৩০ জন ও মৃত্যু হয় ৯ জনের। অর্থাৎ ২০২০ সালের পরবর্তী চার বছরে রোগী বেড়েছে চার গুণ।

আরও পড়ুন

গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১৩টি জেলা ম্যালেরিয়াপ্রবণ। এর মধ্যে পার্বত্য দুই জেলা বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ৯০ শতাংশ সংক্রমন ঘটছে। এটি গত ১০ দশ বছর ধরে একই হারে চলছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারকে নিম্নঝুঁকির এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব বেশি

ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট রোগীর ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয় বান্দরবানে, ২৮ দমশিক ৪৫ শতাংশ রাঙামাটি ও ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয় কক্সবাজারে। ২০২২ সালে ৭৫ দশমিক ৯ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয় বান্দরবন জেলায়, ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ রাঙ্গামাটি ও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কক্সবাজারে। এর আগের বছর ২০২১ সালে মোট শনাক্ত ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ,  ২১ দশমিক ৩ শতাংশ রাঙ্গামাটি ও ৪ দশমিক ৯ শতাংশ কক্সবাজারে। অর্থাৎ পার্বত্য জেলাগুলো ম্যালেরিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকায় ম্যালেরিয়ার লার্ভ নিয়ে শঙ্কা

এদিকে পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকায় ম্যালেরিয়ার লার্ভা পাওয়ার কথা জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক। গত ২৩ মার্চ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভেতর ও করপোরেশন সংলগ্ন স্থানে পূর্ণাঙ্গ অ্যানোফিলিস মশা ও মশার লার্ভা পান তারা। মশা ও লার্ভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে রাখা হয়েছে। লার্ভা থেকে উৎপন্ন পিউপা ও পিউপা থেকে রূপ নেওয়া পূর্ণাঙ্গ মশা নিয়ে আরও কিছু গবেষণা করবেন তারা। তারপর তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গবেষক দলের প্রধান ড. কবিরুল বাশার জানান, ঢাকাতে ম্যালেরিয়ার বাহক পাওয়া গেছে। যা নতুন করে শঙ্কা তৈরি করছে। আমরা ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা ও সেই মশার লার্ভা খুঁজতে গিয়ে অ্যানোফিলিস মশা ও মশার লার্ভা পেয়েছি। গত ২৩ মার্চ উত্তর সিটিতে ও উত্তর সিটির কাছাকাছি একটা জায়গায় পূর্ণাঙ্গ অ্যানোফিলিস মশা ও মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অনেক লার্ভা আছে সেখানে। সেখান থেকে ১২টা লার্ভা সংগ্রহ করে আমাদের ল্যাবে নিয়ে আসা হয়েছে।

এমএইচ/এমএইচএম