নিজস্ব প্রতিবেদক
০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৮ পিএম
শুরুতেই নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ৭০ শতাংশ মৃগী রোগী খিঁচুনি মুক্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতাও প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের অসচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃগীরোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ই ব্লক অডেটোরিয়ামে মৃগী সচেতন মাস উপলক্ষে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ইনিস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিসঅর্ডার এন্ড অটিজম (ইপনা) আয়োজিত সেমিনারে শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজীদা আহমেদ একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এছাড়া প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা। সেমিনারে জানানো হয়, মৃগী রোগ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সাধারণ স্নায়ুবিক রোগ। বিশ্বে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃগীরোগ রয়েছে। মৃগীরোগে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ লোক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে। এটি অনুমান করা হয় যে, মৃগীরোগে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত রোগী খিঁচুনি মুক্ত থাকতে পারে, যদি সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়। জীবনের প্রথম ১০ বছরে প্রায় ১৫০ শিশুর মধ্যে একজনের মৃগী রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশে মৃগী রোগের প্রকোপ প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ৪ জন। শিশুদের মধ্যে মৃগীরোগ বেশি দেখা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের মৃগীরোগ সিনড্রোম পাওয়া যায়।
চিকিৎসায় সুস্থতা সম্ভব জানিয়ে আলোচকরা বলেন, মৃগীর প্রতিটি ধরনের চিকিৎসা এবং আরোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু মৃগীরোগ ওষুধের মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য। কিছু মারাত্মক ধরণের মৃগী রোগ আছে যা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। খিঁচুনির ওষুধ ছাড়াও কিছু বিকল্প চিকিৎসা বিদ্যমান রয়েছে।
বিকল্পগুলো হলো- কিটোজেনিক ডায়েট, ইমিউনোথেরাপি, নিউরোস্টিমুলেশন, এপিলেপসি সার্জারি।
সচেতনার অভাবের কথা জানিয়ে বলা হয়, মৃগী রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিশুদের মৃগী রোগ শুরুতেই নির্ণয় করা সম্ভব হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা হলে দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সারা বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন মানুষ মৃগী রোগে আক্রান্ত। এই রোগ যেকোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। যদি কোনো শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয় সমাজ তাকে অস্পৃশ্যভাবে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। এ রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়। এ রোগ যদি শুরুতে ধরা যায় ও চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ করা যায়। এ রোগের সব ধরণের চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু নিউরোলোজি বিভাগ ও ইপনায় হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী কন্যাকে অভিনন্দন জানিয়ে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের যত অর্জন সব কিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার যোগ্য উত্তরসূরী দ্বারাই অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হয়েছেন। তাকে অভিনন্দন জানাই। তার অনুমতি সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সংবর্ধনা দিতে চায় বলেও জানান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ।
এমএইচ/এমআর