নিজস্ব প্রতিবেদক
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম
জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচজন চিকিৎসক গবেষক এতে অংশ নেন।
এতে ‘হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ: অপরচুটিনিস ফর বিএসএমএমইউ টু লিড ট্রান্সন্যাশাল রিসার্চ ইন দ্যা রিজন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে সেজন্য একমাত্র উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটে বাংলাদেশ থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এই দাবি জানান।
এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী কাঠামো রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ মানুষ খুব সইজেই চিকিৎসকের কাছে আসতে পারেন। কারণ বাংলাদেশে জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে সারাবিশ্বে প্রশংসিত কমিউনিটি ক্লিনিক, যা জাতিসংঘে দ্যা শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ- হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ মেডফরমিনসহ ৩২ ধরণের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এছাড়া দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। যেখান থেকে সহজেই গবেষণার জন্য ডাটা সংগ্রহ করা যাবে। এসব স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য গবেষণার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষও উপকৃত হবে।
শরফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশ নানা বর্ণ গোত্রের ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। আগে বাংলাদেশে নানা ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যা দেশের চিকিৎসকরা সহজেই নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছে। এখানে পোলিও, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, রাত কানা রোগ ছিল। এসব রোগ নির্মূল করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই সেন্টারের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুলসহ নানা রোগের টিকা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা গেছে। ফসল উঠানোর সময় চাষিদের চশমা ব্যবহারে উৎসাহ ও চশমা প্রদান করে চোখের কর্নিয়া আলসার রোধ করা হয়েছে।

এ সময় বাংলাদেশের গবেষকরা চিকিৎসা গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বায়োব্যাংকের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ভৌগোলিক কাঠামোতে বায়োব্যাংকটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন তারা।
গবেষক চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে একটি জনবহুল দেশ। এ দেশে নানা জাতির জনগোষ্ঠী বাস করছে। বাংলাদেশে নানা ধরণের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। সরকার অনেক রোগ নির্মূল করতে সমর্থ্যও হয়েছে। ভৌগোলিক কাঠামোগত কারণে বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সহজতর ও ফলপ্রসূ হবে। এখানে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে অনেক ডাটা খুব সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। এছাড়া সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর একটি মজবুত ভিত্তি রয়েছে।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য নানা অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠান করেছে। যেসব বায়োব্যাংকের জন্য খুবই উপযুক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য গবেষণায় বিএসএমএমইউ আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরণের সুব্যবস্থা রয়েছে। বিএসএমএমইউ, বিসিএসআইআর ও ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় যৌথ উদ্যোগে দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছে। বিএসএমএমইউতে এর সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই করা উচিত।
জাতিসংঘের এ বৈজ্ঞানিক সামিটে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী ‘বায়োব্যাংক: ইন্টিগ্রাটিং ক্লিনিক্যাল রিসার্চ’, বিএসএমএমইউর এনটামি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আঞ্জুমান বানু ‘কারেন্ট রিসার্চ ইনফ্রাস্ট্রাকচার এট বিএসএমএমইউ, হাউ এ বায়োব্যাংক ক্যান ইম্প্রোভ কারেন্ট প্রাকটিস’ এবং ফার্মাকোলোজির অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান ‘ইথিকস অ্যান্ড লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অব বাংলাদেশ, সাউদ এশিয়া ল ফর বায়োব্যাংক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এমএইচ/এমআর